রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

হিজাব-নিকাব নিয়ে বিভ্রান্তি, ঢাবি শিক্ষক সমিতির উদ্বেগ

ঢাবি প্রতিনিধি
  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-এ মুখমন্ডল অনাবৃত রাখার বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করার অপতৎপরতা চলছে উলেস্নখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। শনিবার ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক ডক্টর জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

ঢাবি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) তৃতীয় বর্ষের ভাইভা বোর্ডে নিকাব ৪

ও হিজাব পরিহিতাদের 'হেনস্তার' অভিযোগ এনে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে কিছু শিক্ষার্থী। এ সময় ছাত্রী হেনস্তায় অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান চাঁনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়াসহ সাত দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।

এরপর দিন বৃহস্পতিবার নিকাব ও হিজাব পরিহিতাদের হেনস্তার অভিযোগকে 'মিথ্যা রটনা' আখ্যা দিয়ে বিবৃতি, দেন অনুষদটির ২৭ জন শিক্ষক। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি অনুষদটির শিক্ষকরা ঘটনাটি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেন।

এদিকে, ঢাবি শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন মহল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান একাডেমিক কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ভাইভা ও অন্যান্য একাডেমিক কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের মুখমন্ডল অনাবৃত রাখা বাধ্যতামূলক হলেও এ বিষয়ে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং একইসঙ্গে শিক্ষকদের একাডেমিক স্বাধীনতাকেও মূল্য দেয় উলেস্নখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একাডেমিক নীতিমালা অনুযায়ী যে কোনো পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর 'পরিচয়' নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষককে অবশ্যই শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে শিক্ষার্থীর চেহারা মিলিয়ে দেখতে হয়, যা শিক্ষকদের একাডেমিক ও পেশাগত দায়িত্বের অংশ। আর এরূপ দায়িত্ব পালনে শিক্ষার্থীদের অসহযোগিতা তথা মুখমন্ডল দেখাতে অস্বীকৃতি জানানো পরোক্ষভাবে একাডেমিক রীতিনীতিকেই অস্বীকার করার শামিল। এক্ষেত্রে কোনো কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করছে, যা কাম্য নয়।

এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে একই ইসু্য সৃষ্টি করে দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে উলেস্নখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, মহামান্য আদালত, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রমের সময় মুখমন্ডল অনাবৃত রাখার পক্ষে রায় প্রদান করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধকে ধারণ করে, এখানে প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম পালন ও পোশাক-পরিচ্ছদের স্বাধীনতা রয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়। এখানে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য একই নীতি প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণির জন্য আলাদা কোনো একাডেমিক নীতিমালা সম্ভব নয়। অতএব সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নীতিমালা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। আর এক্ষেত্রে ধর্মীয় মূল্যবোধের অপব্যাখ্যা করে শিক্ষকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাদানকারী বা এ সম্পর্কে অপপ্রচারকারী; যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চায় এবং অরাজকতা সৃষ্টি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও গৌরব নষ্ট করতে চায়। ভবিষ্যতে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি জোর দাবি জানায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে