সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. ইউনূসকে জেলে পাঠানোর চক্রান্ত করছে সরকার

আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রতিহিংসার কারণে নোবেল বিজয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এবার তাকে জেলে পাঠানোর চক্রান্ত করছে সরকার।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে 'নব্বইয়ে ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যে'র উদ্যোগে 'নব্বইয়ের গণঅভু্যত্থান ও কিছু কথা' শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উলস্নাহ আমানের লেখা এই গ্রন্থটির প্রকাশক শাহজী প্রকাশনী সংস্থা।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নূ্যনতম সম্মান করতে জানে না গুণী মানুষকে। ডক্টর ইউনূস একজন নোবেল লরিয়েট। বাংলাদেশে একমাত্র ব্যক্তি যিনি একটা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এখন উনার বিরুদ্ধে এমনভাবে লেগেছে যে, তাকে জেলে ঢুকিয়েই ছাড়বে। এমন একটা অবস্থা তারা তৈরি করেছে। একজন মন্ত্রী বললেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেও জেলে যেতে হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে যে কারণে জেলে যেতে হয় সেই কারণ ডক্টর ইউনূসের না। ডক্টর ইউনূসকে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে ভিকটিম করে তার বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর চেষ্টা করছে সরকার।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আবার বলছে, বিএনপি নাকি ডক্টর ইউনূসের ওপর ভর করেছে। ডক্টর ইউনূসের ওপর ভর করার কোনো কারণ নেই। বিএনপি পুরোপুরিভাবে এদেশের জনগণের ওপর ভর করেছে। জনগণ হচ্ছে সকল শক্তির উৎস, এ দেশের জনগণই সরকার তৈরি করবে এবং ভাগ্য পরিবর্তন করবে। এজন্য সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায় না। কারণ তারা জানে যে, ওইটা করলে ১০টা আসনও পাবে না।

'বিরোধী নেতাদের ওরা দ্রম্নত জেলে দিতে চায়' উলেস্নখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার। যারা এই সরকারের বিরোধিতা করছে, যারা এই সরকারের পক্ষে নয় তাদের সকলকে কারাগারে ঢুকিয়ে দিতে চায়। এজন্য তারা ওই উপলক্ষে দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় একটা সেল তৈরি করেছে সেই সেলকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে, অতি দ্রম্নত সেই সমস্ত মামলাগুলোকে চিহ্নিত করবে যেগুলো তাদের ভাষায় চাঞ্চল্যকর মামলা এবং রাষ্ট্রবিরোধী মামলা- সেসব মামলার দ্রম্নত রায় দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করবে।

আমানউলস্নাহ আমানকে মিথ্যা মামলায় সরকারের প্রতিহিংসার কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমানকে ১০ তারিখ হাজিরা দিতে হবে এবং সেখান থেকে কারাগারে চলে যেতে হবে মিথ্যা মামলায়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তারেক রহমান নির্বাসিত হয়ে আছেন। আজ শুধু এই দৃশ্য নয়, প্রতিদিনই হাজার হাজার বিএনপির নেতা-কর্মী কোর্টের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছে, বিভিন্ন আদালতে ঢুকছে। এই দৃশ্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশের দৃশ্য হতে পারে না, কোনো গণতান্ত্রিক বিশ্বের দৃশ্য হতে পারে না।

নিজের একটি মিথ্যা মামলার বিচারের কার্যক্রমের তড়িঘড়ি করে শেষ করার কথাও উলেস্নখ করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, 'গত কয়েকদিন আগে আমার একটি মামলার ট্রায়াল শুরু হয়েছে। আমার ধারণা এক/দুই মাসের মধ্যেই আমানের মতো আমাকেও চলে যেতে হবে ভেতরে। তাদের উদ্দেশ্যটা একদম পরিষ্কার। কাউকে বাইরে রাখবে না।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ডাকসুর সাবেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নব্বইয়ের ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউলস্নাহ আমান, সাবেক ছাত্রনেতা খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ফজলুল হক মিলন, খন্দকার লুৎফুর রহমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আসাদুর রহমান খান আসাদ ও কামরুজ্জামান রতন বক্তব্য রাখেন।

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তিতে দোয়া মাহফিল

এদিকে বিকালে এক দোয়া মাহফিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অসুস্থ খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা থেকে সরকার বঞ্চিত করছে। এভারকেয়ার হাসপাতালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা অসুস্থ। তার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার কথা বহুবার বলেছি। কিন্তু সরকার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না।

গত ৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এভারকেয়ার হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, তাকে দ্রম্নত বিদেশে মাল্টিপারপাস এডভান্স সেন্টারে পাঠানো জরুরি। কারণ তার শারীরিক যে অবস্থা এখানে এর বেশি চিকিৎসার সুযোগ নেই। গত কয়েকদিন ধরে এভারকেয়ার হাসপাতালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তার বিভিন্ন প্যারামিটারগুলোর উঠানামায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা।

দলের বিভিন্ন স্তরে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হচ্ছে। বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া এবং কারাবন্দি রফিকুল আলম মজনুর সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে