বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রপ্তানি বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারছে না বিদেশি মিশনগুলো

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৬১টি মিশনের মধ্যে ৩০টি মিশন তাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। আর ৩১টি মিশন তাদের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে
এম সাইফুল
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
রপ্তানি বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারছে না বিদেশি মিশনগুলো

দেশের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিদেশে অবস্থিত মিশনগুলো যথাযথ অবদান রাখতে পারছে না। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৬১টি মিশনের মধ্যে ৩০টি মিশন তাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। আর ৩১টি মিশন তাদের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ ৫০ শতাংশের বেশি মিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে মিশনগুলোর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রবৃদ্ধি এক শতাংশেরও কম। এদিকে রপ্তানির সিংহভাগই তৈরি পোশাক পণ্য। বিদেশি দূতাবাসগুলোতে কর্মাশিয়াল উইং থাকলেও খুব বেশি সুখবর নেই। অথচ দেশের রপ্তানি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখার কথা মিশনগুলোর।

ইপিবি'র তথ্য মতে, ২০টি দেশের মিশনে সরাসরি কর্মাশিয়াল উইং রয়েছে। সে সব দেশেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং কর্মাশিয়াল উইং নেই- এমন ৪১টি দেশের মধ্যেও অনেক দেশে রপ্তানি বেড়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকান কিছু দেশে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টে রপ্তানির টার্গেট অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ০.২৬ শতাংশ।

২০২৩-২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ৬১টি মিশনের রপ্তানি আয় ৯০৬ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার, যা জাতীয় রপ্তানি আয়ের ৯৬.৬৮ শতাংশ। বিদেশে বাংলাদেশের ৬১টি মিশনের মধ্যে ৩০টি মিশন তাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। আর ৩১টি মিশন তাদের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সিউল, জেদ্দা, টোকিও, লন্ডন, ওয়াশিংটন, ক্যানবেরা, তেহরান, বেইজিং, মাদ্রিদ, আলজিয়ার্স, দ্য হেগ, কোপেনহেগেন, ম্যানিলা, মানামা, দারুসসালাম, কায়রো, ত্রিপোলি, মালে, পোর্ট লুস, মেক্সিকো সিটি, কাঠমান্ডু, মাস্কাট, লিসবন, দোহা, বুখারেস্ট, প্রিটোরিয়া, এথেন্স, কুয়েত, আবুজা এবং আঙ্কারা।

৩১টি মিশনের মধ্যে ১৫টি মিশন রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলেও আগের বছরের জুলাই-আগস্ট ২০২২-২৩ এর একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে- অটোয়া, প্যারিস, কুলালামপুর, মস্কো, স্টকহোম, থিম্পু, হংকং, রোম, ব্রাসিলিয়া, বাগদাদ, নাইরোবি, ওয়ারশ, কলম্বো, নিউ ইয়র্ক এবং হ্যানয়। বাকি ১৬টি মিশনের রপ্তানি আগের বছরের (জুলাই-আগস্ট ২০২২-২৩) তুলনায় কম। এগুলো হচ্ছে- ব্রাসেলস, নয়াদিলিস্ন, বার্লিন, ইয়াঙ্গু, সিঙ্গাপুর, জেনেভা, দুবাই, ভিয়েনা, আদ্দিস আবাবা, জাকার্তা, আম্মান, রাবাত, ব্যাংকক, ইসলামাবাদ, তাসখন্দ ও বৈরুত।

বর্তমানে বিদেশে ২০টি বাংলাদেশ মিশনের বাণিজ্যিক শাখা রয়েছে। কলকাতা, কুনমিং এবং লস এঞ্জেলেস বাদে এই বাণিজ্যিক শাখাগুলোর রপ্তানি আয় ৬৯৪ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, যা জুলাই ২০২৩-২৪ সময়ের জন্য রপ্তানি আয়ের ৭৪.১১ শতাংশ। ৯টি বাণিজ্যিক শাখা রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। এগুলো হচ্ছে- সিউল, জেদ্দা, টোকিও, লন্ডন, ওয়াশিংটন, ক্যানবেরা, তেহরান, বেইজিং এবং মাদ্রিদ। অবশিষ্ট ১১টি বাণিজ্যিক শাখা তাদের জন্য নির্ধারিত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।

তবে ১১টি বাণিজ্যিক শাখার মধ্যে ৪টি বাণিজ্যিক শাখার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের (জুলাই-আগস্ট ২০২২-২৩) সময়ের তুলনায় বেশি। এগুলো হচ্ছে- অটোয়া, প্যারিস, কুলালামপুর এবং মস্কো। রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু আগের বছরের (জুলাই-আগস্ট ২০২২-২৩) এর তুলনায় কম। সাতটি বাণিজ্যিক শাখা হচ্ছে- ব্রাসেলস, নয়া দিলিস্ন, বার্লিন, ইয়াঙ্গুন, সিঙ্গাপুর, জেনেভা এবং দুবাই।

বর্তমানে ৪১টি বাংলাদেশ মিশনের বাণিজ্যিক শাখা নেই। এই মিশনের রপ্তানি আয় ২১১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। যা জুলাই ২০২৩-২৪ সময়ের জন্য রপ্তানি আয়ের ২২.৫৭ শতাংশ। ৪১টি মিশনের মধ্যে ২১টি মিশন তাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। এগুলো হচ্ছে- আলজিয়ার্স, হেগ, কোপেনহেগেন, ম্যানিলা, মানামা, দারুসসালাম, কায়রো, ত্রিপোলি, মালে, পোর্ট লুস, মেক্সিকো সিটি, কাটমান্ডু, মাস্কাট, লিসবন, দোহা, বুখারেস্ট, প্রিটোরিয়া, এথেন্স, কুয়েত, আবুজা এবং আঙ্কারা। অবশিষ্ট ২০টি মিশন তাদের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।

রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়া ২০টি মিশনের মধ্যে শুধুমাত্র ১১টি মিশনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের (জুলাই-আগস্ট ২০২২-২৩) তুলনায় বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে- স্টকহোম, থিম্পু, হংকং, রোম, ব্রাসিলিয়া, বাগদাদ, নাইরোবি, ওয়ারশ, কলম্বো, নিউ ইয়র্ক এবং হ্যানয়। অবশিষ্ট ৯টি মিশনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের (জুলাই-আগস্ট ২০২২-২৩) এর তুলনায় কম। এগুলো হচ্ছে- ভিয়েনা, আদ্দিস আবাবা, জাকার্তা, আম্মান, রাবাত, ব্যাংকক, ইসলামাবাদ, তাসখন্দ ও বৈরুত।

এদিকে দেশের রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগই তৈরি পোশাক শিল্প। এর মধ্যে জুলাই-আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-ইউরোপে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৮৮৫ দশমিক ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ পণ্য। যা শতাংশের হিসাবে ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। তবে এ সময় রপ্তানি কমেছে ভারতের বাজারে।

ইপিবির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ের জন্য প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে পূর্ববর্তী অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাক রপ্তানি ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

একই সময় ইইউ বাজারে আমাদের পোশাক রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য, জার্মানিতে আমাদের রপ্তানি ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ কমে ৯৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস এবং পোল্যান্ডের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু বড় বাজারে রপ্তানিও যথাক্রমে ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ২৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় যথাক্রমে রপ্তানি ৯৭৬ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন এবং ২৪৩ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। উভয় বাজারে ১৯ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ২২ শতাংশ হারে রপ্তানি বেড়েছে।

একই সময় অপ্রচলিত বাজারে আমাদের পোশাক রপ্তানিও ২১ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন বিলিয়নে পৌঁছেছে। প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে- জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ১৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়েছে। তবে, ভারতে আমাদের পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, 'পোশাক পণ্য রপ্তানির প্রায় ১৯ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যাচ্ছে। এরপর ইউরোপের বাজারে যাচ্ছে ৪৮ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের বাজারে ১২ শতাংশ এবং কানাডায় ১৮ শতাংশের পোশাক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে ভালো করছি। এটা আমাদের জন্য পজিটিভ বিষয়। বিজিএমইএ সবসময় রপ্তানি বাড়াতে সজাগ থাকছে। এর ফলে রপ্তানি বাড়ছে উলেস্নখ করে মহিউদ্দিন বলেন, ইউরোপে বড় বাজার সবসময় ছিল, এখনো আছে। যুক্তরাষ্ট্রে কখনো কম, কখনো বেশি হচ্ছে। তবে কানাডা ও যুক্তরাজ্যে নিয়মিতভাবে বাড়ছে। খুব বেশি পরিবর্তন হচ্ছে না।'

তিনি বলেন, 'বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি ভালো হলে রপ্তানি আরও বাড়বে। আশা করা যাচ্ছে, বাজার আরও ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ, বাংলাদেশে ভালো করার মতো অবকাঠামো আছে, দক্ষ জনবল রয়েছে। কিন্তু মার্কেটে পণ্যের ডিমান্ড থাকতে হবে। ডিমান্ড এখন আসলেই কম। যুদ্ধ ও সুদের অবস্থা উন্নতি হলে মার্কেট আরও ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে