রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
নির্বাচনী কর্মশালায় সিইসি

ভোটের সময় আইনি দিকটা দেখবে ইসি

'প্রার্থীর এজেন্টরা গ্রেপ্তার হলে নির্বাচন হবে প্রশ্নবিদ্ধ' ষ অংশগ্রহণমূলক ভোট নিয়ে আশঙ্কা কবিতা খানমের ষ লোক দেখানো কাজের অভিযোগ অমূলক :রাশেদা ষ বর্তমান নির্বাচন কমিশন বেস্ট :হারুন-অর-রশিদ
যাযাদি ডেস্ক
  ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

বৈধতার বিষয়টি নয়, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের সময় আইনগত দিকটা দেখবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, 'আমরা নির্বাচনের লিগ্যালিটি দেখব। নির্বাচনের লেজিটেমেসির বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন ফাইট করবে না। নির্বাচনে লেজিটেমেসির বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ফাইট করবে।'

বুধবার নির্বাচন ভবনে 'অবাধ ভোটাধিকার, প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা' শীর্ষক কর্মশালায় সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কার্যকরভাবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে ইসির দায়িত্ব কমে যায় উলেস্নখ করে সিইসি বলেন, 'নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে আমাদের অল্প একটু রেফারির ভূমিকা থাকবে। কনটেস্ট হবে রাজনৈতিক দলের মধ্যে। ওরাই ওদের অবস্থানটাকে সুদৃঢ় রাখবে। ইফেকটিভ কনটেস্ট হলে ভোটকেন্দ্রের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি হয়ে যায়। তখন আমাদের দায়িত্ব কমে আসে। আমরা দেখতে চাই, নির্বাচনের দিকে ভোটাররা এসেছেন। তারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে ঢুকছেন।'

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'নির্বাচনে কে এলো কে এলো না, সেটা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাব না। ব্যাপক সংখ্যক ভোটার এসে যদি ভোটদান করে, তাহলে আমরা সেটাকে অংশগ্রহণমূলক বলতে পারি। আমাদের দায়িত্ব নয় কাউকে নির্বাচনে নিয়ে আসা। তবু আমরা নৈতিকতার অবস্থান থেকে অনেকবার দাওয়াত দিয়েছি। আসুন, আমাদের সঙ্গে চা খান। ডিইও লেটার পর্যন্ত লিখেছি। এর বেশি আমরা করতে পারছি না।'

সিইসির মতে, 'যদি এক শতাংশ ভোট পড়ে এবং ৯৯ শতাংশ নাও পড়ে, আইনগতভাবে নির্বাচন সঠিক হবে। লেজিটেমেসির ব্যাপারটা ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু আইনত নির্বাচন সঠিক হবে। আমরা লেজিটেমেসি নিয়ে মাথা ঘামাব না। আমরা দেখব- ভোটটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে কিনা। এক শতাংশও যদি ভোট পড়ে এবং ভোটার যারা আসছে, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি, তাদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে, তারা নির্বিঘ্ন ও স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।'

একাধিক দিনে ভোটগ্রহণের পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৪২ হাজার কেন্দ্রে একদিনে ভোট করা খুবই কঠিন। আপনারা যারা আছেন, তারা যদি মনে করেন নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের চিন্তা করতে পারেন। এই চিন্তার বিষয়টি আপনাদের। এটা হলে আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।'

নির্বাচনকালীন 'রাজনৈতিক মামলায়' প্রার্থীর এজেন্টেরদের গ্রেপ্তার চান না জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'এতে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা কলঙ্কিত হব। তাই বারবার সরকারকে এটি জানাব, যদি তাদের অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) করতে হয় ছ'মাস আগেই করে ফেলেন, নয়তো নির্বাচনের পরে অ্যারেস্ট করেন।'

আগে থেকেই পোলিং এজেন্টদের তালিকা প্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়ার প্রসঙ্গে সাবেক এ বিচারক বলেন, 'পোলিং এজেন্টের নাম প্রার্থীরা সাধারণত গোপন রাখেন। সকালবেলা দেওয়া হয়, যাতে তারা নিরাপদে ওখানে পৌঁছাতে পারেন। আমাদের কাছে তারা ১০০ জনের তালিকা দেবেন, ১৫০ জনের নাম দিলেন। দিলে পরে যদি আমরা দেখি ১৫০ জনই অ্যারেস্ট হয়ে গেছেন তখন আমাদের একটি নেগেটিভ ইমপ্রেশন নিতে হবে। কেন তারা একমাস আগে অ্যারেস্ট হলেন না। কেন তারা দু'মাস আগে অ্যারেস্ট হলেন না। ভোটের আগের দিনই সবাই উধাও হয়ে গেল কেন। যেহেতু আমরা নির্বাচন করি, আমরা সৎভাবে করতে চাচ্ছি, আন্তরিকভাবে করতে চাচ্ছি। কোনো দলের পক্ষপাতিত্ব করার জন্য কিন্তু আমরা এ দায়িত্ব গ্রহণ করিনি।

তিনি বলেন, 'এটিও হতে পারে একটি লিস্ট যদি আগেই দেওয়া হলো আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দেব। এরপর যদি সবাই পটাপট অ্যারেস্ট হতে থাকল, যে ১৫০ জন আছে এর মধ্যে ১৪০ জনই অ্যারেস্ট গেছে, তখন এটিই সুনির্দিষ্টভাবে বুঝাবে যে, তাদের অ্যারেস্ট করা হয়েছে বিশেষ একটা উদ্দেশে। আমরা ওই ক্ষেত্রটিকেই কখনো চাই না। আমরা আশা করব, আমরা বারবার সরকারকে এটি জানাব, যদি তাদের অ্যারেস্ট করতে হয় ছ'মাস আগেই অ্যারেস্ট করে ফেলেন সবাইকে। নয়তো নির্বাচনের পরে গিয়ে অ্যারেস্ট করেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত হবে না। আমরাও কলঙ্কিত হব সেই ক্ষেত্রে, এটি আমি আন্তরিকভাবে মনে করি। এটিই সবাই বলবেন, পোলিং এজেন্ট যদি না থাকে, নির্বাচন তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে নেতিবাচক জনমত তৈরি হবে।'

সিইসি বলেন, 'যদি পোলিং এজেন্টরা শক্ত অবস্থান নেন, তাহলে নির্বাচনে কারচুপি করা কতটা সহজ আমি অনেকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, অনেকে বলেছেন- কারচুপি করা খুবই ডিফিকাল্ট। কারণ পোলিং এজেন্টকে যে শিক্ষা দেওয়া হয় সেখানে সেনাপ্রধান বা পুলিশের আইজি সাহেবও যদি সেখানে আসেন, উনি তো ভোটার নন, পোলিং এজেন্ট যদি এটি জানেন, উনার নলেজটা যদি থাকে, আর সে যদি দৃষ্টি রাখে ভোটের কোনো অনিয়ম হচ্ছে কিনা, সঙ্গে সঙ্গে যদি প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করেন। আবার পোলিং নিজেও দুষ্ট হতে পারেন। এটি একটি উভয় সংকট। আমরা ভাবছিলাম যদি প্রতিদ্বিন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়, সেখানে যদি প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাদের দক্ষ, সাহসী এবং বলিষ্ঠ পোলিং এজেন্ট নিয়োজিত করতে পারেন, তারাই যদি চারদিকে দৃষ্টি রাখে, তাহলে ওই কারচুপিগুলো রোধে সহায়ক হতে পারে। এটি কীভাবে ব্যালেন্স করা যেতে পারে আমরা এ নিয়ে চিন্তা করব যে কীভাবে পোলিং এজেন্টের রোলকে নির্বাচনমুখী করা যায়।'

অংশগ্রহণমূলক ভোট নিয়ে আশঙ্কা কবিতা খানমের

অনুষ্ঠানে সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, 'বর্তমান রাজনৈতিক বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক ভোট নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। সব দলকে ভোটে আনা এটা ইসির দায়িত্ব নয়, রাজনৈতিক দলের ভূমিকা রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'প্রার্থীকে অবশ্যই সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে হবে। যদি না দেয় জবাবদিহির মধ্যে আনা যায় না। এজেন্ট বের করে দিচ্ছে, শুধু হাওয়ার মধ্যে অভিযোগ দিলে হবে না। প্রার্থীর একটা দায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনকেও সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।'

লোক দেখানো কাজের অভিযোগ অমূলক: রাশেদা

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, 'আমরা কী এমন করেছি যে, আমাদের ওপর আস্থা আনা যাচ্ছে না। অনেককে বলতে দেখেছি, আমরা নাকি লোক দেখানো কাজ করছি। আমাদের কাজ হচ্ছে, জাল ভোটার থাকবে না, অবাধ ও উৎসবমুখর ভোট করা। জনগণ যাকে ভোট দেবে সে নির্বাচিত হবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করছি। তার পরও আমাদের ওপর অনেকে আস্থা রাখতে পারছে না।

তিনি বলেন, 'সবাইকে এক করা আমাদের কাজ না। তার পরও সবাইকে নিয়ে বসেছি। জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কাজ করছি। সংলাপ করেছি। সিইসি চিঠি দিয়েছে তার পরও আসেনি। যারা বলছে সুষ্ঠু ভোট করতে আমাদের সদিচ্ছা নেই এটা অমূলক। আমরা নাকি লোক দেখানো কাজ করছি, এরও ভিত্তি নেই।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন বেস্ট: হারুন-অর-রশিদ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডক্টর হারুন-অর-রশিদ বলেন, 'বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আওতায় ৯০০-এর বেশি নির্বাচন হয়েছে। সব নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্তমান নির্বাচন কমিশন বেস্ট।'

তিনি বলেন, 'বর্তমান কমিশন বিজ্ঞ। অথচ বিএনপি-জামায়াত কমিশনের পদত্যাগ দাবি করছে। জামায়াতকে বহু আগে থেকে নিষিদ্ধ করা দরকার ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা নির্বাচন কমিশন ও সরকার মানে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ভন্ডুল করেছে কে? তারা নির্বাচন কমিশনকে এখন পদত্যাগ করতে বলছে। আমার প্রশ্ন, কমিশন কেন পদত্যাগ করবে?'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারের জন্য এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জ। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, এবার তার প্রমাণ দিতে হবে।'

নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, 'ভোট অবাধ করতে সবাইকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভালো ভূমিকা নিতে হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয় যাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া যায়। ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।'

নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে কর্মশালায় সাবেক নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্টজনরা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ভার্চুয়াল মাধ্যমে ৬৪ জেলায় নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা এই কর্মশালায় অংশ নেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে