রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা

মায়ের দুধে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি ১৫ ভাগ কমে

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৭ লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় মৃতু্যবরণ করে। বাংলাদেশে এ অবস্থা আরও খারাপ। দেশে প্রতি বছর ২৪ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ঘণ্টার হিসেবে এই সংখ্যা অনুমানিক ২ থেকে ৩ জন। বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশু জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব অনেক। এতে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কম হয়।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) ট্রেকশন কনফারেন্স হলে 'শিশুদের নিউমোনিয়া : আমরা কি যথেষ্ট করছি?' শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান।

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি-র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ডক্টর মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, 'নিউমোনিয়া এখনো বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃতু্যর প্রধান সংক্রামক কারণ। এ রোগের ফলে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিশুর মৃতু্য হয়- যা পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের সমস্ত মৃতু্যর ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশে এ পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ। প্রতি ঘণ্টায় আনুমানিক ২-৩ জন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায় এবং বছরে প্রায় ২৪ হাজার শিশু মৃতু্যবরণ করে। এটি পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে ২৪ শতাংশ মৃতু্যর জন্য দায়ী- যা বিশ্বব্যাপী গড় থেকেও বেশি। বিগত কয়েক দশক ধরে মৃতু্যহার উলেস্নখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে প্রতি হাজার জীবিত জন্মের প্রায় ৭ দশমিক ৪ জন শিশু মৃতু্যবরণ করেছে নিউমোনিয়ায়। পাশাপাশি প্রায় ৪০ লাখ নতুন রোগীসহ প্রতি বছর আনুমানিক ৬ লাখ ৭৭ হাজার শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।'

বিজ্ঞানী ডক্টর মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী নিউমোনিয়া নিয়ে তার এবং অন্য তিন বিজ্ঞানী ডক্টর নূর হক আলম, ডক্টর কে জামান ও ডক্টর আহমেদ এহসানুর রহমানের কয়েকটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

আলোচনা সভায় পরিবেশের প্রভাব ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা তুলে ধরে জোবায়ের চিশতী বলেন, 'ঘরের মধ্যে বাতাসের গুণগতমান উন্নত করার মাধ্যমে নিউমোনিয়া মৃতু্যর ঝুঁকি অর্ধেক করা সম্ভব। হাত ধোয়া ২১ শতাংশ কেস কমাতে পারে। শিশুর জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এর ফলে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা ১৫ ভাগ কমে যায়।'

বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোলস্না নিউমোনিয়াতে ফুসফুসের প্রদাহ হিসেবে বর্ণনা করে এর মূল চরিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, নিউমোনিয়ার শুরুতে কাশি হয়- যা সাধারণত ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর থেকে শ্বাসকষ্ট এমনকি মৃতু্য পর্যন্ত হতে পারে। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে অল্পবয়সী, প্রবীণ এবং যাদের হৃৎপিন্ড বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে তাদের গুরুতর নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এসব ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সচেতনতা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসার মাধ্যমে জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।

আলোচনা সভায় ২০০৭ এবং ২০২০ সালে আইসিডিডিআর,বি-র ভ্যাকসিন নিয়ে করা গবেষণায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উপযোগী হতে পারে এমন একটি টিকা নিয়ে আলোকপাত করা হয়। আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভবর্তীদের আরএসভি ভ্যাকসিন দেওয়া হলে তা নবজাতক শিশুদের গুরুতর নিউমোনিয়া এবং হাইপোক্সেমিয়া (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলেও আলোচনা সভায় ওঠে এসেছে।

সভায় নিউমোনিয়ার উপসর্গ, হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং চিকিৎসার বিষয়ে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে