সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
আগ্রহী এমপি প্রার্থীদের সক্রিয় করার উদ্যোগ

আসনভিত্তিক আন্দোলন বেগবান করতে চায় বিএনপি

কাল থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ
হাসান মোলস্না
  ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় হলে বিএপির হয়ে নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ আছে প্রায় সহস্রাধিক নেতার। বিগত নির্বাচনেও ৩শ' আসনে, ৯শ'রও বেশি প্রার্থী ছিল। এবার আগ্রহীর সংখ্যা আরও বেড়েছে। কিন্তু চলমান আন্দোলনে আগ্রহী প্রার্থীদের অধিকাংশকেই আন্দোলনের মাঠে দেখা যায়নি। জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে-পরে আন্দোলনের কঠোরতা আরও বাড়াতে আসনভিত্তিক আন্দোলন বেগবান করার পরিকল্পনা করেছে দলটি। এমনি অবস্থায় আগামীকাল থেকে ফের শুরু হচ্ছে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ।

সূত্র মতে, চলমান আন্দোলন ঘিরে হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিএনপি নেতারা আছেন আতঙ্কে। সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করে মাঠ গরম রাখলেও আন্দোলনে রাজপথে থাকার ঝুঁকি নিতে চান না অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা। ২৯ আক্টোবর থেকে চলা টানা হরতাল অবরোধের

কঠোর কর্মসূচিতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহম্মেদ অসীম এবং সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল ছাড়া উলেস্নখযোগ্য কাউকে রাজপথে দেখা যায়নি। অথচ কেন্দ্রীয় নেতাদের কর্মসূচিতে রাজপথে থাকার জন্য নানা মাধ্যমে হাইকমান্ড নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষ নেতারা জুম বৈঠক করেন। যদিও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষ নেতা জুম বৈঠকেও পর্যন্ত অংশ নেননি। এই বৈঠকে রাজপথে থেকে কর্মসূচি সফল করার বিষয়ে ২/১ জন প্রস্তাব দিলেও অধিকাংশ সিনিয়র নেতা রাজি হননি। তারা থানায় থানায় কর্মসূচি পালন করে নিজেদের আত্মগোপনে রেখে নির্দেশদাতার ভূমিকায় রাখার সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি জানতে পেরে দলের হাইকমান্ড আন্দোলন সফলে পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতাদের সামনের সারিতে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন। পাশাপাশি চলমান আন্দোলনে কার কি ভূমিকা তার তালিকা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলমান আন্দোলন সফলে রাজধানীর অভ্যন্তরে বিশেষ কিছু করা সম্ভব না হলেও ঢাকা প্রায় বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টিকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চলমান অবরোধ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সারাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। এ কাজটি সফলভাবে করতে হলে জেলা পর্যায়ের আন্দোলন আরও তীব্র করতে হবে। অর্থাৎ জেলা পর্যায়ের সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করতে হবে। এখন এই বিষয়টির ওপর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নজর দিচ্ছেন বেশি। বিষয়টি বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি জোরদার করতে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রায় প্রতিদিন রাজপথে থেকে অবরোধ কর্মসূচি সফলে ঢাকা ১৮ নির্বাচন এলাকায় বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের উত্তর মহানগর শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহমেদ। কর্মসূচি সফলে হাইকমান্ড থেকে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করার বিশেষ নির্দেশনা পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

সূত্র মতে, অবরোধ-কর্মসূচি নিয়ে বিএনপিতে কয়েকটি মত আছে। অবরোধ রেখে ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল অনেক ত্যাগী নেতা। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অনেকে রাজপথে নামার ব্যাপারে এখনই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এজন্য এই প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেছে।

দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, ২৮ অক্টোবর সরকার পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপিকে হরতাল-অবরোধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখন তফসিল ঠেকাতে হলে বড় কর্মসূচি চালাতে হবে।

সরকার পতনের 'এক দফা' দাবিতে আগামীকাল রোববার থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার 'সর্বাত্মক অবরোধ' কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ওইদিন সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সড়ক, রেল ও নৌ পথে সর্বাত্মক এ কর্মসূচি পালন করবেন দলটির নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিএমসহ যুগপৎ আন্দোলনের সাথে যুক্ত সমমনা অন্যান্য দল ও জোটের পক্ষ থেকেও এ কর্মসূচি পালন করা হবে। যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও জামায়াত একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এছাড়া অবরোধ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে এবি পার্টি।

অবরোধ কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, মামলা-হামলা আর গ্রেপ্তার করে বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করা সম্ভব নয়। যেখানে যিনি গ্রেপ্তার হচ্ছেন সেখানে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত দুই সপ্তাহে তিন দফায় ১৬০ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি করেছে বিএনপি। গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির 'শান্তিপূর্ণ' মহাসমাবেশ পুলিশ পন্ড করে দেওয়ার পর থেকে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো 'কঠোর' কর্মসূচিতে যায়। ওই ঘটনার পরদিন সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে তারা। এরপর শুরু হয় অবরোধ কর্মসূচি। প্রথম দফা ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিনদিন, দ্বিতীয় দফায় ৫ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা এবং সর্বশেষ ৮ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়। যা শুক্রবার ভোর ৬টায় শেষ হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে