চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন বে-টার্মিনাল হবে বাংলাদেশের গেম চেঞ্জার। আশা করি, আগামী মাসেই বে-টার্মিনালের বিষয়ে একটা সুখবর পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, বন্দরের মাধ্যমে পরিবাহিত নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দেশব্যাপী সুষ্ঠুভাবে পরিবহণ অর্থাৎ সাপস্নাই চেইন অবিঘ্নিত রাখার জন্য নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, 'বে-টার্মিনাল বাংলাদেশের গেম চেঞ্জার প্রকল্প। এটি নিয়ে আমাদের কাজ চলমান আছে। আশা করছি, আগামী মাসের মাঝামাঝি এ প্রকল্প নিয়ে সুখবর আছে। ৫০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছি। যত দ্রম্নত বে-টার্মিনাল করতে পারব ততই দেশের লাভ।' অপারেশনের গতি বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বন্দরের আউটারে জাহাজ ফেলে রাখার একটা প্রবণতা আছে। এটা কেন তা আমি বুঝি না। সব পণ্যের সাপস্নাই চেইন অবিঘ্নিত রাখা বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বন্দরের কার্যক্রম নিরবিচ্ছিন্ন রাখা ও নিরাপদ নৌ চলাচলের স্বার্থে মালামাল লোড করার পর লাইটার জাহাজসমূহকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পোর্ট লিমিট ত্যাগ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রেলের ইঞ্জিনের সংকট রয়েছে। পণ্যবাহী গাড়ির স্থানীয় কর্মবিরতির কারণেও সমস্যা হয়েছে। পানগাঁওতে জাহাজের ভাড়া নির্ধারিত ছিল। আমরা মনে করি, ভাড়া নির্ধারণ করবে বাজার। তাই আমরা ভাড়া উন্মুক্ত করে দিয়েছি। পৃথিবীর অনেক ভালো কোম্পানি পানগাঁও নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ব্যবসাবান্ধব, প্রতিযোগিতামূলক বন্দর করতে আমরা পিছপা হচ্ছি না।'
তিনি বলেন, 'বন্দরের নিরাপত্তা ছিল আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। বন্দরের নিরাপত্তা ও অপারেশনের বিষয়ে খুবই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে আমরা কিছু ছিঁচকে চোর ধরেছি। আপনারা জানেন বন্দরে চুরি করা এত সহজ কোনো বিষয় না। এরপরও
কিছু চোর গাড়ির নিচে ঝুলে বন্দরে প্রবেশের অপচেষ্টা করে। এমনিতেই বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই। তবু আমরা আইএসপিএসের মাধ্যমে কমপস্নাইন্স আরও স্ট্রং (জোরদার) করেছি। বন্দর আমাদের জন্য আশীর্বাদ। বন্দরকে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। ইউএসএর আইএসপিএস টিম অডিট করে সন্তোষ জানিয়েছে। এবার কোনো অবজারভেশন ছিল না। উন্নত দেশের গ্রিন বন্দর পুরোপুরি অটোমেটেড। আমাদের কার্গো গ্রোথ ৭-১০ শতাংশ। ২০৩০ সালে ৫ মিলিয়ন টিইইউস হ্যান্ডেল করতে হবে। সিস্টেমের ভেতরে পরিবর্তন আনছি। ওভার ফ্লো ইয়ার্ড গড়ে তুলতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি ১৯টি অফডককে আরও কার্যকর করতে। কাস্টমসের সঙ্গে আমদানি ক্ষেত্রে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের বিপজ্জনক কার্গো অপসারণ করেছি। ১২০টি রেফার (শীততাপ নিয়ন্ত্রিত) কনটেইনার নয় মাস পস্নাগ ছিল, সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। বিদেশি মেইন লাইন অপারেটর ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ ধরনের কাজ গত ১০-১৫ বছরে হয়নি। সেটা ৩-৪ মাসে করতে পেরেছি। ১০ হাজার নিলামযোগ্য কনটেইনার পড়ে আছে। ইনভেন্ট্রি হচ্ছে। এ জায়গা খালি হলে ৪-৫ বছর চলবে। আমি আসার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, এনবিআর, কাস্টম সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়েছে। আমাকে ব্যক্তি হিসেবে না দেখে প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখবেন।'
বন্দর নানা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, 'গত সরকারের আমলে বন্দর নানা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিল। সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ নিয়েও আমরা সফল হয়েছি। যার ফলে, বন্দরের খরচ উলেস্নখযোগ্য হারে কমেছে। পাশাপাশি এই বন্দর কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে রেকর্ড করেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এই পোর্টকে জনবান্ধব করার জন্য স্বচ্ছতা, ন্যায় ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।'
রমজানে পণ্য নিয়ে কৃত্রিম সংকট রোধে সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, 'রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা থাকে তা পর্যাপ্ত আমদানির তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমরাও শিডিউলিংয়ের মাধ্যমে বন্দরের পরিবহণ আরও গতিশীল করছি। রমজানে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের কৃত্রিম সংকট যেন সৃষ্টি করতে না পারে, আপনারা সেদিকে নজর রাখবেন। আমরা বন্দরের অভ্যন্তরে ও আউটারে কোনো জট যেন না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।'