শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
তাজরীন ট্র্যাজেডির ৮ বছর

তিন দফা দাবিতে 'জিন্দা লাশের' মিছিল তাজরীন শ্রমিকদের

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে তাজরীন শ্রমিকদের জিন্দা লাশের মিছিল পুলিশি বাধার মুখে পড়লে শ্রমিকরা রাস্তায় শুয়ে পড়েন -আমিনুল ইসলাম শাহিন

তাজরীন ট্র্যাজেডির ৮ বছর পূর্তিতে তিন দফা দাবিতে গণভবন অভিমুখে 'জিন্দা লাশের' মিছিল করেছে তাজরীন গার্মেন্টসের আহত শ্রমিকরা। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি গণভবনের দিকে যাত্রা শুরু করলে কদম ফোয়ারার সামনে মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশি বাধার মুখে রাস্তায় শুয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিকরা।

এই মিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শ্রমিকরা। সমাবেশে আহত শ্রমিকদের সম্মানজনক ও বাস্তবসম্মত ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ তিন দফা দাবি জানানো হয়।

তাজরীনের আহত শ্রমিক রেহানা আক্তার জানান, তাজরীনের আগুনে তার পরিবারের চার সদস্য মারা গেছেন। তিনিও সেখানে কাজ করতেন। ভবন থেকে লাফ দিয়ে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এরপর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এখন আমরা আমাদের তিন দফা দাবি আদায়ের জন্যে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছি,' যোগ করেন তিনি।

এদিকে তাজরীন গার্মেন্টসের অগ্নিকান্ডের নিহতদের স্মরণে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে নিহত শ্রমিকদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম।

এসময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকান্ডে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রম্নত বিচার ও হতাহতদের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ ও আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার দাবি জানান।

এ সময় প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক নির্বিশেষে সব শ্রমিককে শ্রম আইনের আওতায় আনা, ক্ষতিপূরণের জাতীয় মানদন্ড তৈরি, পেশাগত রোগে আক্রান্ত ও দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ইউনিট স্থাপনের দাবি জানানো হয়।

শ্রদ্ধাজ্ঞাপন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, বিলস পরিচালক নাজমা ইয়াসমিন প্রমুখ। আরও শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার।

আমাদের সাভার প্রতিনিধি জানান, সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ভয়াল স্মৃতি মনে করে এখনো আঁতকে ওঠেন অনেকেই। সেই ভয়াল স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি শ্রমিকরা। ভবনের আগুন নিভলেও স্বজন হারানো শ্রমিকের মনে এখনও জ্বলছে আগুন। আহত শরীরে কর্মহীন জীবনে ক্ষতিপূরণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন, সে আগুনও জ্বলছে।

তাজরীন ট্র্যাজেডির আট বছরে ভবনটির সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি পোড়াচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও। ১১৩ জন শ্রমিকের প্রাণখেকো সেই ভবনটি দেখে ভয় পান অনেকে। ৮০ ফুট উঁচু এই বিল্ডিং যদি ধসে পড়ে তাহলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে। বিল্ডিংয়ের সামনেই মানুষের চলাচলের রাস্তা। বিল্ডিংয়ের চারদিকে রয়েছে শত শত বাড়ি। এসব ভবনের সবাই রয়েছে আতঙ্কে। জরাজীর্ণ ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার সকালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকান্ডের আট বছর পূর্তি উপলক্ষে সাভারের আশুলিয়ার এ তৈরি পোশাক কারখানার প্রধান ফটকের সামনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সকালে সেখানে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ শ্রম ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স টেইলার্স লীগসহ বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা যায়।

উলেস্নখ্য, সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১১৩ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। এ ছাড়াও অসংখ্য শ্রমিক গুরুতর আহত হন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে