রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস পালিত
যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবসে শ্রমিকের নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি এবং শ্রম আইনের অসঙ্গতি দূর করাসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আন্তর্জাতিক শ্রমিক স্মৃতি দিবস উপলক্ষে আইইউএফ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ওয়ার্কার্স কাউন্সিল-বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের যৌথ আলোচনা সভায় এসব দাবি জানানো হয়।

এদিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা প্রত্যেক শ্রমিকের আইনগত অধিকার। এ অধিকার বাস্তবায়নে নিরাপদ ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের বিকল্প নেই। শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত 'জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস' উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আলোচনা সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, 'বাংলাদেশে শ্রম আইনে আঙুল কাটা পড়লে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার কথা রয়েছে। আর একজন মারা গেলে মাত্র ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। পঙ্গুত্ববরণ করলে দেওয়া হয় আড়াই লাখ টাকা। একজন শ্রমিকের জীবন এতই সস্তা? যারা এই শ্রম আইন তৈরি করেন তাদের যদি বলি, আমরা শ্রমিকরা চাঁদা উঠিয়ে যদি এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেই তাহলে কি আপনারা হাতের আঙুল কেটে দিতে পারবেন? এ ধরনের আইন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের বিষয়ে শ্রম আইনে থাকবে না কেন?'

বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ আইন যথেষ্ট নয় মন্তব্য করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি কামরুল আহসান বলেন, 'কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত পরিবেশ ভয়াবহ। শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ জরুরি। সম্প্রতি শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকারও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আইএলও শোভন কাজের কথা বলছে। শোভন কাজ মানে শোভন মজুরি, শোভন কর্মঘণ্টা, শোভন পরিবেশ।'

বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ছারোয়ার বলেন, 'দেশের বেশিরভাগ কর্মস্থলে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক পরিবেশ বজায় থাকায় শ্রমিকদের মৃতু্যর সংখ্যা এবং আহতের সংখ্যা বাড়ছে। তাজরীন ফ্যাশনস, রানা পস্নাজা, ট্যাম্পাকো, হাসেম ফুডসে শিশুসহ শ্রমিকদের মর্মান্তিক প্রাণহানি অনিরাপদ কর্মস্থলের ধারাবাহিক পরিণতির কয়েকটি উদাহরণ মাত্রা।'

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, 'আলোচনা করে, টক শোতে সুন্দর সুন্দর কথা বলে কিছু হবে না। মাঠে গিয়ে কাজ করতে হবে। শ্রমিকদের পক্ষে আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে। আমাদের এক হতে হবে। এই দেশে শ্রমিক-কৃষকের সংখ্যা বেশি। আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে সামনে আমাদের দাবিগুলো আদায় করতে পারব।'

সংগঠনের ছয় দফা দাবি হলো- কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক হত্যাকান্ডের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ১০ জুন ২০২১ আন্তর্জাতিক শ্রম কনফারেন্সে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রম্নত আইএলও রোডম্যাপ বাস্তবায়ন, পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক আইএলও'র মৌলিক কনভেনশন ১৫৫ প্রতিপালন আইন প্রণয়ন, নিয়োগকর্তারা নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ করছে কি না এজন্য ত্রিপক্ষীয় তদারকি কমিটি গঠন, প্রশিক্ষিত পরিদর্শক দ্বারা নিয়মিত কারখানার ঝুঁকি মূল্যায়নও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাধ্যতামূলক করা, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ দিতে ব্যর্থ ও আইন ভঙ্গকারী নিয়োগকর্তাদের জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক এবং তাদের পরিবারকে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে আইন তৈরি করা।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা শামীম ইমাম, আব্দুল মান্নান, মো. কামরুল ইসলাম, মো. আবুল কালাম, মো. রেজাউল হক, মো. সোহাগ মিয়া প্রমুখ।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, 'টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী সাম্প্রতিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষাবিধি পালন, শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা বর্তমানে কেবল সরকার বা কারখানার মালিকপক্ষের ইচ্ছের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণকে কেবল মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। এটি এখন কারখানা মালিকপক্ষের জন্য দায়বদ্ধতায় পরিণত হয়েছে।'

তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন ও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালার ভিত্তিতে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক ভাই-বোনদের জন্য নিরাপদ ও শোভন রাখতে হবে, এটি এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ যেভাবে উন্নত বিশ্বের অভিমুখে যাত্রা করেছে, সেখানে পেশাগত সুরক্ষার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। বর্তমানে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পালনকে জাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এদিকে শুক্রবার সকালে এ উপলক্ষে রাজধানীর শ্রম ভবনের সামনে থেকে ঘোড়ার গাড়ি ও বাদ্যযন্ত্র সহকারে বর্ণাঢ্যর্ যালি বের হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এইর্ যালির উদ্বোধন করেন। পরে ওসমানী মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়র্ যালি।

প্রসঙ্গত, এ বছর অষ্টমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে দিবসটি পালিত হয়েছে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২৮ এপ্রিল 'ওয়ার্ল্ড ডে ফর সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাট ওয়ার্ক' পালন করে আসছে। বাংলাদেশে ২০১৬ সাল থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জাতীয়ভাবে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস পালন করছে। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল 'নিশ্চিত করি শোভন কর্মপরিবেশ গড়ে তুলি স্মার্ট বাংলাদেশ'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে