রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৮ মে ২০২৩, ০০:০০
ঢাকায় অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু আইএইচএফ চ্যালেঞ্জ ওমেন্স ট্রফিতে অনূর্ধ্ব-১৭ বিভাগে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের মেয়েরা -ওয়েবসাইট

বঙ্গবন্ধু আইএইচএফ চ্যালেঞ্জ ওমেন্স ট্রফির অনূর্ধ্ব-১৭ বিভাগে দারুণ নাটকীয় এক ফাইনাল উপভোগ করেছেন দর্শকরা। দুই দলের তীব্র লড়াইয়ে একবার ভারত এগিয়ে যায় তো; গোল করে সমতায় ফেরে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে শেষ হাসিটা হেসেছে বাংলাদেশই। বুধবার পল্টনের হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর ভারতকে ৪৬-৪৩ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় লাল-সবুজের মেয়েরা। প্রথমার্ধের খেলা ২০-২০ গোলে সমতা ছিল।

বাংলাদেশ-ভারত ফাইনালটি ছিল বেশ নাটকীয়। প্রথমার্ধের ২০ মিনিট পর্যন্ত ১৬-১০ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন অধিনায়ক মোছাম্মৎ মারফি, রুনা লায়লারা। মুহুর্মুহ আক্রমণে ভারতের রক্ষণে কাঁপন ধরান ডালিয়া আক্তারের শিষ্যরা। প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধের লড়াইটা ছিল আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। দুই দলের খেলোয়াড়রা যেমন তাদের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছেন; তেমনি পেশি শক্তিরও। মেজাজ হারিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হতে গিয়ে মাশুলও গুনতে হয়েছে দু'দলকে। খেলার ৪৪ মিনিটে লাল কার্ডের শাস্তিতে ম্যাট ছাড়েন ভারতের প্রাধান্য বালাসো মানে। তখন ৬ জনের দলে পরিণত হয় ভারত। বাংলাদেশের খেলোয়াড় ছিল ৭ জন। ওই সময়ও ম্যাচে পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে ছিল সফরকারীরা ৩৩-২৮ গোলে।

খেলার ৫০তম মিনিটে গিয়ে ভারতকে একেবারে চেপে ধরেন বাংলাদেশের মেয়েরা। এ সময় গোলের পর গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনে স্বাগতিকরা। ৫৫তম মিনিটে গিয়ে টানা তিন হলুদ (২ মিনিট করে মাঠের বাইরে থাকার শাস্তির ফল) দেখে ম্যাট ছাড়েন বাংলাদেশের টপ স্কোরার অধিনায়ক মারফি।

তখনো ম্যাচে পিছিয়ে বাংলাদেশ। একটা সময় মনে হয়েছিল লিগ পর্বের মতো ফাইনালেও ভারতের কাছে হারতে যাচ্ছে ডালিয়ার দল। কিন্তু মারফির অনুপস্থিতিও বুঝতে দেননি রুনা লায়লা, তানিয়া, দ্বীপা রানীরা। পুরো ম্যাচে অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল বাংলার মেয়েদের। ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৫ গোল করেন অধিনায়ক মারফি। এ ছাড়া রুনা লায়লা ১৪, তানিয়া ১০, দ্বীপা রানী ৫, ফাতেমা প্রেমা ও সানিয়া আক্তার সমান ১টি করে গোল করেন। ভারতের পক্ষে রেনুকা সর্বোচ্চ ১৬ গোল করেন।

ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের কোচ ডালিয়া আক্তার বলেন, 'টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমি বলেছিলাম চমক দেখাবে আমার দল। সেটাই করে দেখিয়েছে তারা। মেয়েদের এমন পারফরম্যান্সে আমি অনেক খুশি। আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনে কখনো ভারতকে হারাতে পারিনি। কিন্তু প্রথমবার কোচ হয়ে সেই অর্জনে নাম লেখাতে পেরেছি। ভারতকে যে কোনো খেলায় হারানো কঠিন। হ্যান্ডবলে তো আরও কঠিন। সেই কঠিন কাজ আমার মেয়েরা করে দেখিয়েছে।'

একটা সময় ম্যাচে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কোচ বলেন, 'পিছিয়ে থাকলেও আত্মবিশ্বাস ছিল মেয়েরা ঘুরে দাঁড়াবে। ওরা আমার পরিকল্পনা মাঠে বাস্তবায়ন করেছে। মারফি যখন লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ে তখনো দল পিছিয়ে। কিন্তু রুনা, দ্বীপারা দারুণ খেলেছে। বিশেষ করে আমার গোলরক্ষকের কথা আলাদাভাবে বলব। সে অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে। ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে গতকাল (মঙ্গলবার) আমি দলের ভুলগুলো নিয়ে কাজ করেছি। লিগ পর্বে ভারতের কাছে হেরেছিলাম। সেখানে যে ভুলগুলো মেয়েরা করেছিল; আজ সে ভুলগুলো কম করেছে। সব মিলে আমি দারুণ খুশি।'

পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলেছেন বাংলাদেশ ইয়ুথ টিমের অধিনায়ক মারফি। দলকে ফাইনালে তুলে আনা থেকে চ্যাম্পিয়ন করার পেছনে তার অনেক বড় ভূমিকা।

ম্যাচ শেষে অধিনায়ক বলেন, 'আমি অনেক খুশি। কোচ, খেলোয়াড়, কর্মকর্তা সবাইকে ধন্যবাদ। সবাই আমাদের অনেক সাপোর্ট করেছেন। আজ দর্শকরাও মাঠে এসে আমাদের সাপোর্ট করেছেন।'

লাল কার্ড দেখে যখন মাঠের বাইরে গেলেন তখন কি মনে হয়েছে দল জিতবে? এমন প্রশ্নে মারফি বলেন, 'আমি মনে করেছিলাম হেরে যাব। কিন্তু দল জেতায় এখন অনেক খুশি লাগছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে