সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে কাদিয়ে ফাইনালে কুয়েত

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ০২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে শনিবার সেমিফাইনালে গোলরক্ষক জিকো একের পর এক কুয়েতের আক্রমণ রুখে দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি বাংলাদেশের। অতিরিক্ত সময় একটি গোলেই সাফের সেমি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে জামাল ভুইয়াদের -বাফুফে

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০৫ সালে সবশেষ ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। শনিবার বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচে কুয়েতকে হারাতে পারলেই দীর্ঘ ১৮ বছর পর আবারও ফাইনালে খেলতে পারতো বাংলাদেশ। ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট আর অতিরিক্ত সময়ের প্রায় ১৫ মিনিট কুয়েতের মতো শক্তিধর দলকে আটকে রেখে ১০৬ তম মিনিটে একটি মাত্র গোল হজম করেই ভেঙ্গে গেলো বাংলাদেশের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন। বাংলাদেশকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই ফাইনালে নাম লেখালো কুয়েত। একমাত্র গোলটি করেন আবদুলস্নাহ আল বস্নাউসি।

একসময় বিশ্বকাপে খেলা কুয়েত বাংলাদেশের অচেনা প্রতিপক্ষই বলা চলে। কারণ দুই দলের দেখা হয়েছিল ৩৭ বছর আগে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের বয়স ভিত্তিক দলের লড়াই হলেও জাতীয় দলের দেখা হয়নি।র্ যাংকিংয়ে বাংলাদেশ (১৯২তম) থেকে ৫১ ধাপ এগিয়ে কুয়েত (১৪১তম)। তবে সেমিফাইনাল ম্যাচে সে পার্থক্য তেমন একটা বুঝাই যায়নি। ম্যাচ শুরুর দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা রাকিব হোসেনের নিখুঁত আড়াআড়ি ক্রসে বল এক ডিফেন্ডারের পায়ে ফাঁক গলে যায় ফাঁকায় থাকা শেখ মোরসালিনের পায়ে। এমন সুযোগ অবিশ্বাস্যভাবে তিনি নষ্ট করেন গোলরক্ষকের গায়ে মেরে! এরপর ফিরতি বল পেলেও তালগোল পাকিয়ে কাজে লাগাতে পারেননি মালদ্বীপ ও ভুটান ম্যাচে জালের দেখা পাওয়া মোরসালিন। সপ্তম মিনিটে শক্তিশালী কুয়েত হানা দিয়েছিল বাংলাদেশের রক্ষণে। কর্নারের পর কয়েক পা ঘুরে যায় ইদ আল রশিদের পায়ে। তার ক্রসে বক্সের জটলার ভেতর থেকে সালমান মোহাম্মদের হেড গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করে দলের ত্রাতা ইসা ফয়সাল। ২০তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ট্যাকলে মাঠে শুয়ে পড়েন রাকিব। ছটফট করতে থাকেন। এদিকে ডাগআউটে গা গরম করতে শুরু করেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তবে চিকিৎসা নিয়ে রাকিব উঠে দাঁড়ালে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। আট মিনিট পর দূরপালস্নার শটে চেষ্টা করেছিলেন তিনি, কিন্তু বল জমে যায় গোলরক্ষকের গস্নাভসে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে কুয়েতের আক্রমণের ধার বাড়তে থাকে। তবে রক্ষণে দৃঢ়তা ধরে রাখে বাংলাদেশ। পোস্টের নিচে আনিসুর রহমান জিকোও ছিলেন বিশ্বস্ততা নিয়ে। ২৯ মিনিটে আল রশিদির শট জিকো অনেকটা লাফিয়ে এক হাতে ফিস্ট করার পর দ্রম্নত হেডে ক্লিয়ার করেন ইসা। পরের মিনিটেই বাঁ দিক থেকে মোরসালিন ক্রস বাড়িয়েছিলেন বক্সে। রাকিব পাহারায় রাখা ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বল ছুটছিল জালের দিকে, তবে আটকান গোলরক্ষক আব্দুল রহমান মারজুক। এরপর আলি মুহাইসেনকে তুলে মাহাদি দাস্তিকে নামান কুয়েত কোচ। ৪০তম মিনিটে আল রশিদির শট ঝাঁপিয়ে কর্নার করে দেন জিকো। প্রথমার্ধে কুয়েতের এই ২৪ বছর বয়সী রাইট উইঙ্গার সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। প্রথমার্ধ ছিল গোলশূণ্য।

৫৩ মিনিটে কুয়েত শিবিরে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড রাকিব। বক্সের বাইরে থেকে তিনি বা পায়ের যে জোড়ালো শটটি নেন সেটি ছিল নিশ্চিত গোল। তবে দারুন দক্ষতায় বল গ্রিপ করেন কুয়েতের গোলরক্ষক। ৬১ মিনিটে আক্রমণে আবার সেই রাকিব। তারিকের বাড়িয়ে দেয়া বল নিয়ে ডান প্রান্ত ধরে পোস্টের কাছ থেকে ডান পায়ে শট নেন রাকিব। তবে বল অল্পের জন্য জড়ায়নি জালে। ৬৩ মিনিটে বক্সের কাছেই ফ্রি কিক পায় কুয়েত। তবে এবারও তারা ভাঙ্গতে পারেনি বাংলাদেশের শক্ত রক্ষণ। ৬৫ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে বক্সে বল বাড়িয়েছিলেন মোরসালিন। জামাল ভুইয়া বল পেলেও ধরে রাখতে পারেননি। বল হারিয়েছেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কাছে। ৬৮ মিনিটে পোস্টের কাছ থেকে আবদুলস্নাহর শট রুখে দেন জিকো। ৮৭ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে ফাহিমের ক্রস বক্সে পেয়েও বলে সংযোগ ঘটাতে পারেননি রাকিব। আরও একটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ হারায় ক্যাবরেরার শিষ্যরা। ইনজুরি টাইমের শুরুতেই (৯০+১) আবদুলস্নাহর শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে যাওয়ায় এ যাত্রা বেঁচে যায় বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ম্যাচ গোলশূণ্য থাকাতে গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। ৯৮ ও ৯৯ মিনিটে আল রশিদের পর পর দু'টি গোল পাওয়ার মতো শট আটকে দেন জিকো। ১০৭ মিনিটে আবদুলস্নাহ আল বস্নাউসির গোলে লিড নেয় কুয়েত,তিনি বক্সের ভেতর তপু বর্মণের দু'পায়ের ফাক দিয়ে বল ঠেলে দেন জালে (১-০)। ১১৩ মিনিটে রহমত মিয়ার শট থেমে যায় কুয়েত গোলরক্ষকের গস্নাভসে। শেষ পর্যন্ত একটি গোলেই ফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয় কুয়েতের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে