রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

অধিনায়কত্ব ছেড়ে দৃষ্টান্ত গড়েছেন তামিম

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

একদিন আগেও কাগজে-কলমে টাইগারদের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক ছিলেন তামিম ইকবাল। আর বাকি দুই ফরম্যাট অর্থাৎ, টি২০ ও টেস্ট দলের দলপতি সাকিব আল হাসান। ওয়ানডে সিরিজের নেতৃত্ব ছেড়েছেন তামিম ইকবাল। একই সঙ্গে ইনজুরির কারণে ছিটকে যেতে হয়েছে এশিয়া কাপ থেকেও। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ওয়ানডে দলের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই টাইগারদের নতুন অধিনায়ক কে হচ্ছেন তা নিয়ে

চলছে ব্যাপক আলোচনা। কে হবেন এই ফরম্যাটের

নতুন অধিনায়ক।

আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই আসবে নতুন অধিনায়কের নাম। বিসিবি সভাপতি বলেছেন, 'তামিমের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার কারণে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন তিনি। অধিনায়কত্ব ছাড়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও কথা বলেন তামিম। এশিয়া কাপে না থাকলেও ওয়ানডে বিশ্বকাপে দেখা যাবে ড্যাশিং এ ওপেনারকে। আর তামিমের আশা, ফিট হয়ে ফিরবেন বিশ্বকাপের আগে। খেলবেন নিউজিল্যান্ড সিরিজে।

দলের নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণার সময়ে তামিম ইকবাল বলেন, 'সাধারণত ৯০ ভাগ মানুষ স্বার্থপরের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। আমার যে খারাপ লাগছে না তা বলব না। কিন্তু সেই খারাপ লাগার চেয়ে দল আমার কাছে বড়। এতদিন দলের নেতৃত্বের জায়গায় ছিলাম, সেই জায়গা থেকে সরে আসা সহজ নয়। এখানে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। আমি যদি বলি যে, আমি নাখোশ না, তাহলে মিথ্যা বলা হবে।'

তামিম ইকবাল চাইলে বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়কত্ব ধরে রাখতে পারতেন। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হয়তো তাতে কেউ আপত্তিও করতেন না। কিন্তু সুযোগ থাকার পরেও বাংলাদেশি ওপেনার সেটি করলেন না। তামিম নেতৃত্ব ছাড়ার সময়ে বলেন, 'চোটের কথা বিবেচনায় রেখে দলের ভালোর জন্য আমি নেতৃত্ব ছাড়ছি। সুস্থ হয়ে ক্রিকেটার হিসেবে দলে ফিরতে চাই। আশা করি, এশিয়া কাপের পরে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফিরতে পারব। অবশ্য জোর করে এশিয়া কাপে খেলা যেত, কিন্তু সবাই চাচ্ছেন আমি যেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরি। এ কারণেই একটু বেশি সময় নিতে চাই।'

সব মিলিয়ে সুযোগ থাকার পরেও তামিম অধিনায়কত্ব ছাড়ার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি হয়তো ভেবেছেন, মাঠে থাকতে না পারলে অধিনায়কের জায়গাটি ধরে রেখে কী লাভ? ফলে আসন খালি করে দিয়েছেন বাকিদের জন্য। আর তাতে দেশের ক্রীড়া জগতে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। অতীতেও অবশ্য বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় এমন সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এবার তামিমের এমন সিদ্ধান্ত তরুণ প্রজন্মের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেবে, এমনটাই ধারণা ভক্তদের। সেই সঙ্গে এই চর্চা ধরে রাখতে পারলে দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাবে বহুদূর।

মূলত দীর্ঘদিন ধরে পিঠের সমস্যায় ভুগছেন তামিম ইকবাল। এর মধ্যে গত ৬ জুলাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে আবারও জাতীয় দলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। এরপরে দেড় মাসের ছুটি নিয়ে দুবাই ঘুরে লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা করান। যেখানে দু'টি ইনজেকশন নিতে হয়েছে তামিমকে। এরপরে মাঠে ফিরতে সময় লাগবে আরও কয়েক সপ্তাহ।

ফলে আগামী ৩০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এশিয়া কাপে তামিমের খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তাতে এশিয়ার সর্বোচ্চ এই টুর্নামেন্টে দল যেন পিছিয়ে না থাকে, সেটিই ভেবেছেন তামিম। দল যেন নেতৃত্বের অভাবে না ভোগে এটিও ভেবেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ওয়ানডে দলে নতুন অধিনায়ক দেখার জন্য আসন খালি করে দিলেন। দলের স্বার্থে এমন ত্যাগ নিশ্চয়ই মনে রাখবে টাইগার বাহিনী।

তামিম ইকবাল বলেন, অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তের বিষয় নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, বুঝিয়ে বলেছি। প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন। তাছাড়া জালাল ভাই ও পাপন ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

এদিকে লন্ডনে চিকিৎসা নিতে গিয়ে যে ইনজেকশন নিয়েছেন সেটার পরিপূর্ণ ফল পেতে তাকে আরও বেশ কিছুদিন বিশ্রামে থাকতে হবে। তার যে পুনবার্সন পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে, তাতে ২১ আগস্টের আগে পূর্ণ অনুশীলন শুরুই করতে পারবেন না তিনি।

যে কারণে আগামী ৩০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এশিয়া কাপে খেলা নিয়ে সংশয় এখনো কাটছে না। তাই কোনো ঝুঁকি না নিতে এবং শেষ সময়ের জন্য টানাপড়েন না রাখতেই এশিয়া কাপে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তামিম। চাইলে অবশ্য খেলতে পারতেন, তাতে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই বোর্ড সভাপতি পাপন ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালালের সঙ্গে আলোচনা করে এশিয়া কাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে