মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

সঙ্গীতের উজ্জ্বল তারকা বেবী নাজনীন

বেবী নাজনীনের গানে হাতেখড়ি বাবা মনসুর সরকারের কাছে। বাবা ছিলেন জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনের একজন বিশেষ শ্রেণির যন্ত্রশিল্পী। পরে নিজ আগ্রহ ও উদ্যোগে সঙ্গীতের নানামুখী দীক্ষা নেন নাজনীন। মঞ্চে গাইতে শুরু করেছিলেন সাত বছর বয়স থেকে। ১৯৮০ সালে প্রথম পেস্নব্যাক করেন। এহতেশামের 'লাগাম' সিনেমার ওই গানটির সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন আজাদ রহমান। ১৯৮৭ সালে মকসুদ জামিল মিন্টুর সঙ্গীত পরিচালনায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম অ্যালবাম 'পত্রমিতা'। এই অ্যালবাম তার ব্যক্তিজীবন ও সঙ্গীত জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
তারার মেলা রিপোর্ট
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সঙ্গীতের উজ্জ্বল তারকা বেবী নাজনীন
সঙ্গীতের উজ্জ্বল তারকা বেবী নাজনীন

'এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল', 'কাল সারা রাত ছিল স্বপনেরও রাত', 'দু'চোখে ঘুম আসে না', 'মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে', 'ওই রংধনু থেকে', ' 'আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেল রে মরার কোকিলে', 'আর কতদিন', 'লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ উঠেছে', 'প্রিয়তমা', 'সারা বাংলায় খুঁজি তোমারে', 'ও বন্ধু তুমি কই কই রে'সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন।

এখনো ভক্ত-অনুরাগীদের কাছে তার গায়কী ও কণ্ঠের আবেদন আগের মতোই অম্স্নান। 'বস্ন্যাক ডায়মন্ড' ও 'উত্তরবঙ্গের দোয়েল' খ্যাত বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই গায়িকা ও গীতিকবি দীর্ঘ দিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমেরিকার নিউইয়র্কে দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষ করে গতবছরে দেশে ফিরেছেন 'বস্নাক ডায়মন্ড' খ্যাত সঙ্গীত তারকা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বেবী নাজনীন।

বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনামলে বারবার বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয় বেবী নাজনীনের সঙ্গীত জীবন। বাংলাদেশ বেতার, টিভি ও মঞ্চ, কোনো মাধ্যমেই গায়িকা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেননি। একপর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে বেবী নাজনীন সব সময়ই সমাদৃত। ফলে, বিদেশের মাটিতে তার কাজকর্মে কোনো বাধা আসেনি, বরং এই সময়ে আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বেবী নাজনীন।

দেশে ফেরার পর গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেবী নাজনীন বলেন, 'আমি হয়ত দেশে আসতেও পারতাম। কিছু বাধা ছিল। হয়তো আমি বিমানবন্দর পর্যন্ত আসতে পারতাম। কিন্তু দেশে ঢুকতে পারতাম না। তাই এত দিন প্রবাস জীবন কাটানো।' বস্ন্যাক ডায়মন্ড খ্যাত এই শিল্পী আরও বলেন, 'আমি গত ১৬ বছর কাজ করতে পারিনি। আমার ভক্তরা আমাকে কত ভালোবাসেন তা বলে বোঝানো যাবে না। আমি তাদের ভালোবাসা পেয়েই অভ্যস্ত। এই যে তাদের কাছে থেকে আমাকে দূরে সরানো হলো, এটাই তাদের বড় ষড়যন্ত্র। আমি একজন শিল্পী। আমাকে গান গাইতে দিলে তাদের কি ক্ষতি হতো, সেটাই আমি বুঝতে পারিনি।'

গত সাড়ে চার দশকের ক্যারিয়ারে বহু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সঙ্গীত তারকা। দেশীয় সঙ্গীতাঙ্গনে সর্বাধিক একক, দ্বৈত ও মিশ্র অডিও অ্যালবামের শিল্পীদের অন্যতম একজন বেবী নাজনীন। অ্যালবামের পাশাপাশি টিভি, চলচ্চিত্র, মঞ্চ প্রতিটি মাধ্যমেই সমান জনপ্রিয় তিনি। যার সুবাদে খ্যাতিমান গীতিকবি, সুরকার, সঙ্গীতায়োজকদের পাশাপাশি তরুণরা তাকে নিয়ে অসংখ্য কাজ করেছেন; যা শ্রোতাদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে। একইভাবে বরেণ্য ও সমসাময়িক প্রায় সবশিল্পীর সঙ্গে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।

বেবী নাজনীনের গানে হাতেখড়ি বাবা মনসুর সরকারের কাছে। বাবা ছিলেন জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনের একজন বিশেষ শ্রেণির যন্ত্রশিল্পী। পরে নিজ আগ্রহ ও উদ্যোগে সঙ্গীতের নানামুখী দীক্ষা নেন নাজনীন। মঞ্চে গাইতে শুরু করেছিলেন সাত বছর বয়স থেকে। ১৯৮০ সালে প্রথম পেস্নব্যাক করেন। এহতেশামের 'লাগাম' সিনেমার ওই গানটির সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন আজাদ রহমান। ১৯৮৭ সালে মকসুদ জামিল মিন্টুর সঙ্গীত পরিচালনায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম অ্যালবাম 'পত্রমিতা'। এই অ্যালবাম তার ব্যক্তিজীবন ও সঙ্গীত জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

বেবী নাজনীনের উলেস্নখযোগ্য গানের তালিকায় রয়েছে 'মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে', 'আমার একটা মানুষ আছে', 'ওই রংধনু থেকে', 'পত্রমিতা', 'এলোমলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল', 'কাল সারা রাত ছিল স্বপনেরও রাত', 'দুচোখে ঘুম আসে না তোমাকে দেখার পরে', 'আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেল রে মরার কোকিলে', 'লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ উঠেছে', 'আজ পাশা খেলবে রে শাম', 'প্রিয়তমা', 'সারা বাংলায় খুঁজি তোমারে', 'ও বন্ধু তুমি কই কই রে.. এ প্রাণো বুঝি যায় রে'... ইত্যাদি।

আধুনিক গানের বাইরে রবীন্দ্র-নজরুল, লালন, পলস্নী, ভাওয়াইয়া গানের ব্যাপক দখল রয়েছে তার। হিন্দি-উর্দু গান আর গজলেও সমান শক্তিমান এক কণ্ঠের নাম বেবী নাজনীন। দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন স্টেইজে সেইসব গুণের সাক্ষরও তিনি রেখেছেন তার চলিস্নশ বছরের সঙ্গীত জীবনে। আসলে একজন প্রকৃত শিল্পীকে সব ঘরানার গানেই পারদর্শী হতে হয়। বাংলাদেশের হাতে গোনা যে দুই তিনজন সঙ্গীতশিল্পী গানের বিভিন্ন ধারায় বিচরণ করে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন বেবী নাজনীন তাদের প্রধানতম একজন।

অনিন্দ্য গায়কী আর অনবদ্য সৃষ্টির জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। গানের বাইরেও কাব্যচর্চা করেন বেবী নাজনীন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার পাশাপাশি বই আকারেও প্রকাশিত হয়েছে তার কবিতাগুলো। এ পর্যন্ত তার তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যার বেশিরভাগ কবিতা পাঠক মনে নাড়া দিয়েছে। আগামীতে গান ও কবিতা নিয়ে বেশ কিছু আয়োজনের পরিকল্পনা আছে বলেও জানিয়েছেন নন্দিত এই শিল্পী। রাজনীতি প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বেবী নাজনীন বলেন, 'গান শোনানোর পাশাপাশি আমি মানুষের সেবা করতে চাই। দল আমাকে যে দায়িত্ব দেবে, তা পালনে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। একটি সুন্দর দেশ গড়তে দলের হয়ে আমৃতু্য কাজ করে যেতে চাই।'

উলেস্নখ্য, ১৯৬৫ সালের ২৩ আগস্ট নীলফামারীর সৈয়দপুরে জন্মগ্রহণ করেন বেবী নাজনীন। ছোটবেলা থেকেই গানের চর্চা করেছেন। আর পেশাদার গায়কী জীবন ১৯৮০ সাল থেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে