মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

'মিস্টার পারফেকশনিস্ট' আমির খান

বিনোদন ডেস্ক
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
'মিস্টার পারফেকশনিস্ট' আমির খান
'মিস্টার পারফেকশনিস্ট' আমির খান

বলিউডে 'মি. পারফেকশনিস্ট' বলা হয় আমির খানকে। তার নাম এলেই অবধারিতভাবে জুড়ে দেওয়া হয় এই তকমা। অনেকের মতে, তিনি সবকিছুতেই পারফেক্ট, সবকিছু বেশ নিখুঁতভাবে করে থাকেন। তবে এই তকমাটি কীভাবে এলো, সেটি নিয়েও এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছিলেন এই বলিউড তারকা। কপিল শর্মার 'দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো'তে হাজির হয়ে এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সেখানে 'মি. পারফেকশনিস্ট' প্রসঙ্গে অভিনেতা জানান, তার এই তকমার পেছনে বলিউডের বর্ষীয়ান এক অভিনেত্রীর অবদান রয়েছে। আর তিনি হলেন, শাবানা আজমি। আর এটার শুরু হয়েছে চায়ের কাপ থেকে।

সেই সময়ের স্মৃতি হাতড়ে আমির খান বলেন, 'এই পারফেকশনিস্টের এই তকমাটা যে আমাকে দেওয়া হয়েছে এর জন্য শুধু একজনই দায়ী, আর তিনি হচ্ছেন শাবানা আজমি।' তিনি বলেন, 'তখন আমি রুপালি জগতে নতুন এসেছি, 'দিল' সিনেমার শুটিং করছিলাম। ইন্দ্রকুমার ছিলেন সেই সিনেমার পরিচালক আর চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন বাবা আজমি। সেই সময়কার সেরা ক্যামেরাম্যান ছিলেন তিনি। তো আমরা মাঝেমধ্যেই তার বাড়িতে যেতাম। সে রকমই এক দিন তার বাড়িতে সিনেমার বিষয়েই আলোচনায় মত্ত ছিলাম। ঠিক সে সময় শাবানাজি আমাদের জন্য চা নিয়ে এসেছিলেন। এ সময় তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, আমির, তুমি কতটুকু চিনি নেবে?'

সে সময় আমির আলোচনায় এতটাই মগ্ন ছিলেন যে, শাবানার প্রশ্নটা তিনি খেয়ালই করেননি। ফলে, অভিনেত্রী ফের একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। সেই প্রসঙ্গে আমির বলেন, 'আমি আলোচনায় এতটাই মগ্ন ছিলাম যে, খেয়ালই করিনি। আমি পেছন ফিরে তাকে দেখি। তার প্রশ্নটা বুঝতেই আমার পাঁচ সেকেন্ডের মতো সময় লেগে যায়। আমি জানতে চাই, গস্নাসটা কত বড়? তিনি আমায় কাপটা দেখান। এরপর আমি জানতে চাই, চিনির চামচটা কত বড়? তিনি আমায় সেটাও দেখান। তখন আমি বলি, এক চামচ। এরপর আবার আলোচনায় মগ্ন হয়ে যাই।'

আর এটাই যেন ইতিহাস হয়ে যায়! এ ঘটনাটির পর থেকে শাবানা আজমিজি সবাইকে এই গল্প বলে বেড়াতেন। এরপর থেকেই সবাই 'পারফেকশনিস্ট' আমিরের বন্ধু এবং বি-টাউনে তার সহকর্মীরা তাকে 'মিস্টার পারফেকশনিস্ট' বলেই ডাকেন এবং সেটাই তকমা হয়ে যায়।

১৯৬৫ সালের ১৪ মার্চ তার জন্ম হয়েছিল মুম্বাইয়ের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। আমির খানের বাবার নাম তাহির হোসেন, মা জিনাত হোসেন। তার পরিবার ভারতীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে জড়িত। তাহির হোসেন ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক এবং তার চাচা নাসির হোসেন চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা। আমির খানও অভিনয়, প্রযোজনা, পরিচালনা, টিভি উপস্থাপনাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে লাখো ভক্তের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন।

১৯৭৩ সালে মাত্র আট বছর বয়সে চাচা নাসির হোসেনের চলচ্চিত্র 'ইয়াদো কা বারাত' সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে যাত্রা করেন। তবে নায়ক হিসেবে তার আবির্ভাব ১৯৮৮ সালের 'কেয়ামত সে কেয়ামত তক' সিনেমা দিয়ে। এ সিনেমা দিয়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে আইডল হয়ে ওঠেন আমির খান। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন।

১৯৯০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দুর্দান্ত সফল ক্যারিয়ার ছিল আমির খানের। এ সময়ে তার উলেস্নখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে 'দিল', 'দিল হ্যায় কি মান্তা নেহি', 'রঙ্গিলা', 'আন্দাজ আপনা আপনা', 'রাজা হিন্দুস্তানি', 'লগান', 'দিল চাহতা হ্যায়' ইত্যাদি।

২০০১ সালে স্ত্রী রীনা দত্তের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর চলচ্চিত্র থেকে কিছুকালের বিরতি নেন আমির খান। ২০০৫ সালে 'মঙ্গল পান্ডে' সিনেমার মধ্য দিয়ে আবার বড়পর্দায় ফেরেন। ২০০৬ সালে বিখ্যাত 'রঙ দে বাসন্তি' অনেক পুরস্কার এনে দেয় তাকে। একই বছর সাফল্য আনে 'ফানা'। এরপর 'তারে জমিন পার' পুরস্কারের ঝুলি ভরে দেয় আমিরের। রঙ দে বাসন্তি ও তারে জামিন পার দুটি সিনেমাই অস্কারের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিল।

সময়ের পরিক্রমায় আমির নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলিউডে তিন খানের রাজ্যের অন্যতম এক খান হিসেবে। তিনি উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। তার মধ্যে 'মন', 'গোলাম', 'রাজা হিন্দুস্থানি', 'গজনি', 'পিকে', 'দঙ্গল' উলেস্নখযোগ্য।

বলাবাহুল্য, আমির খানই ভারতের প্রথম শত কোটি রুপি আয়ের ক্লাবে প্রবেশ করা ছবির নায়ক। শুধু তাই নয়, ভারতের বাইরে আমির খানের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা চীনে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এ দেশটির মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমার তালিকায় আমির খান অভিনীত 'থ্রি ইডিয়টস' আছে ১২তম স্থানে। এমনকি তার উপস্থাপানায় 'সত্যমে জয়তে' অনুষ্ঠানটি বেশ সাড়া জাগিয়ে ছিল দর্শকের মাঝে।

গত বছর আমির খানের 'লাল সিং চাড্ডা' সিনেমাটি মুক্তি পায়। এটি ছিল আমির খানের স্বপ্নের প্রজেক্ট। তিনি ভেবেছিলেন, এই সিনেমা সুপারডুপার হিট ব্যবসা করবে। কিন্তু আমিরসহ সিনেমার অন্যান্য কলাকুশলীদের আশা ভঙ্গ হয়। সুপার ফ্লপ করে এটি। সিনেমার এমন ভরাডুবিতে এই অভিনেতা নাকি ২-৩ সপ্তাহ বিষণ্নতায় ভোগেন। ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি ১৯৯৪ সালের হলিউড ক্ল্যাসিক 'ফরেস্ট গাম্প' সিনেমার রিমেক। এখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন টম হ্যাঙ্কস।

সম্প্রতি, এবিপি নেটওয়ার্কের 'আইডিয়াস অব ইন্ডিয়া-২০২৫' অনুষ্ঠানে আমির খান 'লাল সিং চাড্ডা' সিনেমা নিয়ে কথা বলেন। অভিনেতা স্বীকার করেন যে, যখন তার সিনেমা ভালো ব্যবসা করে না, তখন তিনি বিষণ্নতায় ভোগেন। আমির খান বলেন, 'যখন আমার সিনেমাগুলো ব্যবসা করে না, তখন আমার খুব খারাপ লাগে। সিনেমা নির্মাণ সহজ নয়, খুবই কঠিন। কিন্তু কখনো কখনো সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হয় না। 'লাল সিং চাড্ডা'তে আমার অভিনয় ঠিক টম হ্যাঙ্কসের মতো ধারালো হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'যখন আমার সিনেমা ব্যর্থ হয়, তখন আমি ২-৩ সপ্তাহের জন্য এক ধরনের বিষণ্নতায় ডুবে যাই। তারপর আমি আমার দলের সঙ্গে বসে কী ভুল হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করি এবং তা থেকে শিখি। আমি সত্যিই আমার ব্যর্থতাগুলোকে গুরুত্ব দেই। কারণ তারা আমাকে আরও ভালো কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়।' 'লাল সিং চাড্ডা' সিনেমা নির্মাণ করেন অদ্বৈত চন্দন। এতে আমির খান ছাড়াও আরও অভিনয় করেন কারিনা কাপুর, নাগা চৈতন্য, মোনা সিং, মানব ভিজ প্রমুখ।

উলেস্নখ্য, আমির খানকে সামনে দেখা যাবে 'সিতারে জামিন পার' সিনেমায়। এটি ২০০৭ সালের হিট সিনেমা 'তারে জামিন পার'-এর সিকু্যয়েল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে