বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি

কর্মসংস্থান তৈরির মূল পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য নতুন গন্তব্য অন্বেষণ, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখা ইত্যাদি
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৪ জুন ২০২৩, ০০:০০
বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি

গত পহেলা জুন সংসদে পেশকৃত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল 'কর্মসংস্থান' শব্দটি ৬৪ বার এবং 'চাকরি' শব্দটি ১২ বার উলেস্নখ করেছেন। দুটি শব্দই মূলত অন্যান্য বিষয় নিয়ে বলায় সময়ই ব্যবহৃত হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেবল কর্মসংস্থান সংকট মোকাবিলার বিষয়টি উঠে আসে।

কর্মসংস্থান তৈরির মূল পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য নতুন গন্তব্য অন্বেষণ, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখা ইত্যাদি। কিন্তু এগুলোই কি যথেষ্ট? স্টেকহোল্ডার ও বিশ্লেষকরা কী বলছেন?

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের রিসার্চ ডিরেক্টর খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়টি এবারের বাজেটে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। বেকারদের জন্য বিশেষ করে গ্র্যাজুয়েটদের জন্য কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেই। তারা কেবলমাত্র পুরানো উদ্যোগগুলোর ধারাবাহিকতার কথা শুনেছেন। এসব মোটেও যথেষ্ট নয়।' তিনি বলেন, দ্রম্নত কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার সুযোগ ছিল সরকারের, কিন্তু তা হয়নি।

গত মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৫৯ মিলিয়নে, যা ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে ছিল ২.৩২ মিলিয়ন। সমীক্ষায় দেখা যায়, বর্তমানে বেকারত্বের হার ৩.৫১%।

দেশের শ্রমশক্তিকে বর্তমানে রয়েছেন আনুমানিক ১৪৪.৭ মিলিয়ন মানুষ। এরমধ্যে ৭৩.৬ মিলিয়ন কায়িক পরিশ্রম বিষয়ক কাজে নিযুক্ত, এবং প্রশাসনিক ও নির্বাহী পজিশনে কর্মরত ৭১.১ মিলিয়ন মানুষ।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর সেলিম রায়হান বলেন, 'আমার মতে, এবারের বাজেট বক্তৃতায় কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়ে তেমন জোরালো আলোচনা হয়নি। এবার কিছু উইশফুল থট ছিল কেবল।'

তিনি বলেন, 'বাজেটে কর্মসংস্থান সম্পর্কিত বিষয়গুলো নতুন বা চিত্তাকর্ষক নয়।' দেশের অর্থনীতি সঠিক আকারে না আসা পর্যন্ত কর্মসংস্থান তৈরির চ্যালেঞ্জ চলতে থাকবে বলে উলেস্নখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি মূলত বেসরকারি খাতের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু এ খাতে আমি খুব আশাবাদী নই। বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের দ্রম্নত বৃদ্ধির আশা করা হয়েছে। কিন্তু আগামী বছর এই নাটকীয় অগ্রগতি ঠিক কীভাবে ঘটবে তা ব্যাখ্যা করা হয়নি।'

বেসরকারি খাতে প্রধান অর্থায়ন আসে ব্যাংক থেকে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'যেহেতু সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে বড় পরিমাণে ঋণ চায়, তাই বেসরকারি খাত কম পরিমাণে ঋণ নিতে পারবে।' সরকার অনুমান করছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপি'র ২৭.৪% হবে, যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই বিনিয়োগ ছিল ২১.৮%। এর অর্থ হলো, বেসরকারি বিনিয়োগে অতিরিক্ত ৪,০৪,০৯৭ কোটি টাকা বা ৪১.৮% বৃদ্ধি প্রয়োজন।

'ব্যক্তিগত বিনিয়োগের পরিসংখ্যান কি উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মেলে?' প্রশ্নটি সিপিডি তার বাজেট পর্যালোচনায় তুলে ধরে। তারা বলে, আগের অর্থবছরের তুলনায় এবারও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব আছে। এসব উৎসে সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে।

বাজেট নথি অনুসারে, যে মন্ত্রণালয়গুলো বেশিরভাগ কর্মসংস্থান তৈরি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কাজ করে তাদের বরাদ্দ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উলেস্নখযোগ্যভাবে কমেছে।

এর মধ্যে কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২৪% কমেছে। একইসঙ্গে যুব মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমেছে ২২% এবং শিল্প

মন্ত্রণালয়ের কমেছে ৩২%। শুধুমাত্র বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ ৩৯% বেড়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে