সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল পরিশোধন, বিপণনের সুযোগ আসছে

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

বিদ্যমান নীতিতে এক বড় পরিবর্তনের মাধ্যমে, জ্বালানি তেলের ওপর নিজের একক নিয়ন্ত্রণের অবসান করতে চলেছে সরকার। এ লক্ষ্যে বেসরকারি খাতের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি, পরিশোধন, মজুত, বিতরণ ও বিপণন উন্মুক্ত করার খসড়া প্রণয়ন করেছে।

এই উদ্যোগের আওতায়, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে উৎপাদিত জ্বালানি তেলের বিপণন শুরুর প্রথম পাঁচ বছরে অর্ধেকেরও বেশি ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল কিনে নেবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেসরকারি রিফাইনারিতে উৎপাদিত ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল বিপণন শুরুর প্রথম ৩ বছর মোট উৎপাদিত জ্বালানি তেলের ৬০ শতাংশ সরকার-নির্ধারিত মূল্যে বিপিসিকে সরবরাহ করতে হবে।

বাকি ৪০ শতাংশ জ্বালানি তেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও নিজস্ব নিবন্ধিত বিপণন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবে। তবে বিক্রয় নেটওয়ার্কের স্বল্পতার কারণে কোনো বেসরকারি রিফাইনারি ৪০ শতাংশ তেল বিক্রি করতে না পারলে এর যে কোনো পরিমাণ বিপিসির কাছে বিক্রি করতে পারবে।

পরবর্তী ২ বছরে বেসরকারি রিফাইনারিগুলো তাদের উৎপাদিত তেলের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিক্রি করতে পারবে। জ্বালানি তেলের আকর্ষণীয় ব্যবসায় বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততার প্রথম ৫ বছর পর উৎপাদিত জ্বালানির কত অংশ তারা বিপিসিকে সরবরাহ করতে হবে তা পর্যালোচনা করে ঠিক করা হবে।

খসড়াটি চূড়ান্ত করতে বিদু্যৎ, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা ডাকা হয়েছে। খসড়া নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, বিপিসির চাহিদা না থাকলে বা নিজস্ব বিপণন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিক্রির পর উদ্বৃত্ত জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে।

বেসরকারি উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত জ্বালানি তেল বিক্রি করতে দেশব্যাপী সড়ক, মহাসড়ক, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোয় পেট্রোল পাম্প স্থাপন করতে পারবেন। এসব পেট্রোল পাম্পে সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যে জ্বালানি তেল বিক্রি করা যাবে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বসুন্ধরা গ্রম্নপ, পারটেক্স গ্রম্নপ, টিকে গ্রম্নপ ও এলিট গ্রম্নপসহ বেসরকারি খাতের কয়েকটি বৃহৎ কোম্পানি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি ও পরিশোধন করতে রিফাইনারি স্থাপনের অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বসুন্ধরা গ্রম্নপের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, 'এই প্রজেক্ট নিয়ে আমরা খুবই সিরিয়াস। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অয়েল রিফাইনারি স্থাপনের জন্য আমরা ২০০ একর জমি কিনেছি যা হবে দেশের সর্ববৃহৎ পরিশোধনাগার। তবে বৈশ্বিক ও দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন প্রতিকূলতা প্রকল্পটির অগ্রগতি ব্যাহত করছে। এরপরও সরকার লাইসেন্স দেওয়ার আগেই বসুন্ধরা গ্রম্নপ প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে পারবে।'

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই সরকার জ্বালানি তেলের সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিপিসি এককভাবে এ কাজ পরিচালনা করছে।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে ১৯৬৮ সালে স্থাপিত দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল পরিশোধন কোম্পানি- ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করছে বিপিসি।

এই রিফাইনারির বছরে পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন যা দিয়ে দেশের মোট চাহিদার ২০ শতাংশ মেটানো যায়। দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদার বাকি ৮০ শতাংশ পরিশোধিত তেল আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। সক্ষমতা বাড়াতে প্রায় ২৩,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ স্থাপনের প্রকল্প নিচ্ছে বিপিসি যা ২০২৭ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হবে। এটি হলে আরও ৩০ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে