সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সহায়তার অভাবে আশার আলো দেখছে না চারা গাছ রপ্তানি

আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে শেকড়ে মাটি থাকা যাবে না। গ্রিন হাউসের মাধ্যমে ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে চারাগুলোকে। এরপর তা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেফার কনটেইনারে করে বিদেশে পাঠানো হয়
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশে অনুকূল পরিবেশে স্বল্প খরচে চারা গাছ উৎপাদন সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যসহ আরব আমিরাতের দেশগুলোতে রপ্তানিতে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তা কাজে লাগাতে পারছে না রপ্তানিকারকরা।

বছর দুয়েক আগে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি ফলজ গাছের চারা রপ্তানি শুরু হয়েছিল। এর আগে কয়েক বছর অবশ্য বিমান কার্গোতে করেও স্বল্প পরিমাণে জীবন্ত গাছের চারা গিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে। সেসময় নতুন রপ্তানি পণ্য হিসেবে আশা জাগিয়েছিল চারা গাছ।

কিন্তু এরপর থেকে কোনো উলেস্নখযোগ্য প্রচারমূলক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি।

গত ২২ জুলাই দুবাইতে নিযুক্ত কমার্শিয়াল কাউন্সেলর কামরুল হাসানের পাঠানো এক চিঠিতে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।

চিঠিতে রপ্তানি উৎসাহিতকরণে প্রণোদনা প্রদান, রেফার কনটেইনার প্রাপ্য সহজলভ্য নিশ্চিতকরণ, কোকোপিট আমদানিতে শুল্কমুক্ত বা হ্রাস করা, অনাপত্তি সনদ প্রদানে দ্রম্নততা, ইপিবির মধ্যপ্রাচ্যে চারা গাছের প্রচারণামূলক মেলার আয়োজন করা, বিমানের ফ্রেইট চার্জ কমানো এবং গ্রিন হাউস, ওয়াশিং ইউনিট ও প্যাকেজিং শেড নির্মাণের জন্য প্রণোদনা প্রদানের বিষয়ে করা সুপারিশ করা হয়।

এসব পদক্ষেপ নেওয়া হলে বাংলাদেশে অনুকূল পরিবেশে কম খরচে চারা উৎপাদন করা সম্ভব বলে উলেস্নখ করা হয় চিঠিতে।

বাংলাদেশের চারা রপ্তানি যাত্রা

মূলত মাটি ছাড়া চারা গাছ রপ্তানি হয় বিদেশে। কারণ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে শেকড়ে মাটি থাকা যাবে না। গ্রিন হাউসের মাধ্যমে ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে চারাগুলোকে। এরপর তা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেফার কনটেইনারে করে বিদেশে পাঠানো হয়।

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিমানের মাধ্যমে প্রথমবার পাঁচ হাজার ফলজ গাছের চারা কাতারে রপ্তানি করেন কুমিলস্নার মোহাম্মদ শামসুল আলম। এর মধ্যে ছিল আম, জাম, লেবু, সফেদা, ডুমুর, নিম, লিচুর চারা।

২০২১ সালে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে রপ্তানি করেন শামসুল। বর্তমানে দুবাইয়েও রপ্তানি করেছেন তিনি। দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখেরও বেশি চারা রপ্তানি করেছেন তিনি।

রপ্তানিকারক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের তথ্যমতে, গত চার বছরে চারা গাছ রপ্তানি খাতের অগ্রগতি বলতে আরও চার প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে এ খাতে।

গাইবান্ধার সাত ভাই নার্সারি ২০২১ ও ২০২২ সালে দুই চালানে তুরস্কে প্রায় ৬ হাজার চারা গাছ রপ্তানি করেছে। ফলের চারার মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু ও ফুলের মধ্যে রঙ্গন, কামিনী রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে আরও ৩ হাজার চারা রপ্তানি করবে তারা।

কুমিলস্নার মেসার্স খাদিম এন্টারপ্রাইজ ২০২২ সালে দুবাইয়ে ৫৩৩০টি এবং মালদ্বীপে নমুনাস্বরূপ ১০০ ফলজ গাছের চারা রপ্তানি করেছে।

বর্তমানে সিরিয়া, মিসর, নেদারল্যান্ডস, ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্ক উচ্চমানের চারা রপ্তানিকারক দেশ।

প্রয়োজন সহায়তা-সমর্থন

সাত ভাই নার্সারির মালিক সাইফুল ইসলাম কলেস্নাল জানান, চারা রপ্তানির জন্য একটি অনাপত্তি শংসাপত্র (এনওসি) প্রয়োজন হয়। কিন্তু এটি জোগাড় করতে বিলম্ব হয় রপ্তানিতে।

'তাছাড়া আমাদের লোডিং পয়েন্টে রেফার কন্টেইনার সুবিধা না থাকায় চারাগুলোর গুণমান প্রভাবিত হয়, রপ্তানিতে বিলম্ব হয়,' বলেন তিনি।

বাংলাদেশ থেকে প্রথম চারা রপ্তানিকারক শামসুল আলম বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো (ইপিবি) স্থানীয় পণ্য রপ্তানি বাড়াতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে। কিন্তু এখানেও নেই রপ্তানি চারার উপস্থিতি।

'এই ধরনের ইভেন্টে অন্তর্ভুক্ত হতে পারলে অন্যান্য দেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের আরও ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পারব আমরা। আমাদের সম্ভাব্য সাফল্য নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আমি,' বলেন এই রপ্তানিকারক।

মধ্যপ্রাচ্যের জলবায়ুতে টিকে থাকতে পারে এমন চারার জাত শনাক্তকরণে সরকারি উদ্যোগে গবেষণার গুরুত্বের ওপর জোর দেন খাদিম এন্টারপ্রাইজের মালিক বশির মিয়া খাদিম।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) মো. আবদুলস্নাহ ইউসুফ আকন্দ চারা রপ্তানি নিয়ে গবেষণার অনুপস্থিতির কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, এই সম্ভাবনাময় খাত সম্পর্কে তারা তেমন একটা অবগত নন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে