সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিবচর পদ্মা নদীর তীরের বাঁধ ঘুরে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

এস.এম. দেলোয়ার হোসাইন, শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
  ০৫ জুলাই ২০২৩, ১০:১৯

ভ্রমণপিপাসুদের অবসর বিনোদনের অন্যতম ভালোলাগার ঠিকানা এখন পদ্মা নদীর পাড়। শিবচর পদ্মা নদীর নতুন বাঁধে প্রতিদিন ভিড় জমছে হাজারও দর্শনার্থীর। পদ্মা পাড়ে নদী শাসন বাঁধ ঘিরে এরইমধ্যে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী, মাদবরেরচর, চরজানাজাত, পাঁচ্চর ইউনিয়নের নদীকেন্দ্রিক নদী শাসন বাঁধগুলো বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে। এসব এলাকার পদ্মা পাড়ে নদী শাসন বাঁধে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ আসছে দেখতে ও সময় কাটাতে। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসছেন। কেউ আসছেন বন্ধুবান্ধব নিয়ে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের দলও ঘুরতে আসছে সেতু এলাকায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পদ্মা তীরের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মানুষ। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, আবার কেউ বন্ধুদের সঙ্গে দল বেধে। সবাই ঈদ আনন্দে উৎফুল্ল। নদী তীরের নয়নাভিরাম পরিবেশ আর মানুষের মিলন মেলায় নিয়েছে। পদ্মার নদী বাঁধের সৌন্দর্যের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ছে পদ্মার স্বচ্ছ জলরাশি। ইট-পাথরের নগরজীবন থেকে মুক্ত পরিবেশে পদ্মাপাড় হাজারও দর্শনার্থীর মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধ বাতাসে প্রাণভরে নিশ্বাস নিচ্ছেন বিনোদনপ্রেমীরা।

হাজারো পর্যটক ও দর্শনার্থী বাঁধের ব্লকের ওপর হেঁটে, বসে পদ্মার পানিতে পা ভিজিয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন। পদ্মা পাড়ের সৌন্দর্যকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে যে যার মতো ছবি তুলছেন। আর শিশুদের ছোটাছুটি ও কোলাহল বাঁধের ব্লক করে তুলছে আরো অপরূপা। পর্যটকদের বাহারি খাবার জোগান দিতে ইতোমধ্যে এখানে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য খাবারের দোকান।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, সন্ধ্যা নামতে না নামতেই পদ্মা সেতুর ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলে উঠে। এ সময় সেখানে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেতুর আলোকিত দৃশ্য দেখার জন্য অনেক দর্শনার্থীরা গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করছেন।

শিবচর উমেদপুর থেকে ঘুরতে এসেছেন মুন্নি আক্তার, রোমাইয়া, নওরিন আক্তার আয়শা, রিয়া মণি, জিম, কেয়া মণি, সাদিয়া, রাবেয়া আক্তারসহ কয়েকজন তরুণী । তারা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বিনোদনের জন্য কোনো জায়গা নেই। তাই এখানে ঘুরতে এসেছি। পদ্মা সেতু দেখতে পদ্মার পাড়ে এলাম। এতো বাতাস মন জুড়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো বাতাস।

শিচবচর পৌরসভা থেকে ঈদের ছুটিতে আসা জসিম মিয়া বলেন, পদ্মার পাড়ে কাওড়াকান্দি ফেরী ঘাটের এ জায়গাটি অপূর্ব। গত কয়েক বছর ধরে এখানে ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি।

নদীর পাড়ে ঘুরতে আসা জান্নাতুল বলেন, ‘এখানে বাঁধ, পদ্মা নদী সবই আকর্ষণীয়। উপজেলায় বিনোদন কেন্দ্রের অভাবে মানুষের যাওয়ার তেমন জায়গা নেই। এ জায়গাটি সুন্দর। নদীর পাড়ের স্নিগ্ধ পরিবেশ, শীতল বাতাস সবারই ভালো লাগবে।

যাত্রাবাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছিলেন কাউসার আহম্মেদ। তিনি নদীশাসন প্রকল্পের বাঁধে চার ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন। কাউসার যায়যায়দিনকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু দেখার পর পদ্মার তীরে দাঁড়িয়ে নির্মল পরিবেশে সময় কাটিয়েছি। পরিবেশটা পতেঙ্গার মতো লেগেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এসেছিলাম তাই তাড়াহুড়ো ছিল না। রাত ১০টা পর্যন্ত বাঁধের ওপর ছিলাম। এমন পরিবেশ ফেলে ফিরতে মন চাইছিল না।’

স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া জানান, পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসা লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। হোটেলগুলোতে পদ্মার ইলিশের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ঘুরতে আসা লোকজন এখানে বসে ইলিশ ভাজা খেতে পছন্দ করে।

কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সোহেল বেপারী বলেন, বর্তমানে পদ্মার পাড় কেন্দ্রিক ঘুরতে আসা লোকজনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আসলে আশেপাশে কোথাও তেমন কোনো দর্শনীয় স্থান না থাকায় এ অঞ্চলের মানুষ পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসে। এ দিকটি বেশ ভালো। মূলত পদ্মা সেতুকে ঘিরেই মানুষের মধ্যে এ চঞ্চলতা দেখা দিয়েছে। পদ্মার চর এলাকা পর্যটনকেন্দ্রের জন্য বেশ আদর্শ বলেই মনে হয়। পদ্মা পাড়ে নদী শাসন বাঁধ ঘিরে এ এলাকায় গড়ে উঠতে পারে পর্যটনকেন্দ্রও।

ভাঙনের কবলে পড়ে কয়েক বছরে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনেকেই ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বহারা হয়েছেন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে