রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত : পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা 

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)
  ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৪৪

চট্টগ্রামের বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত দেশের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার নাম। উপজেলার ছনুয়া, গণ্ডামারা, কাথরিয়া, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদের উপকূলজুড়ে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকত। সৈকতের পূর্ব পাশে সারি সারি ঝাউ গাছ। উপকূলজুড়ে ঘন ঝাউ বাগান। জোয়ার-ভাটার ঢেউয়ে পর্যটকদের মন কাড়া শব্দ। সাগরের উপকূল জুড়ে বেড়ে ওঠা কেওড়া ও ঝাউবন ঘেরা সবুজ এক দৃষ্টিনন্দন সৈকত ঘিরে চলে জোয়ার-ভাটার খেলা।

সমুদ্র লাগোয়া অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই সমুদ্র সৈকতে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে বাঁশখালীসহ সংশ্লিষ্ট মহল পর্যটন বিভাগ ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছে। এছাড়া পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন ও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পর্যটনপ্রেমীরা।

স্থানীয়রা জানান, জাতীয় দিবস, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনের বাঁশখালীর উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত হাজারো লোকের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। এ সৈকতের ৭ পয়েন্টে দেখা মেলে হাজার হাজার পর্যটকের। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় ও এখানে ভালো মানের আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরা তড়িঘড়ি করে উপজেলা সদর কিংবা নিজ বাসস্থানে চলে যান।

স্থানীয়দের জানান, অপার সম্ভাবনাময় এই সমুদ্র সৈকতকে যথাযথভাবে উন্নয়ন ও পরিচর্যা করা হলে কক্সবাজারের বিকল্প সমুদ্র সৈকত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন, বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা গেলে এখান থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হবে।

সৈকতের বিভিন্ন অংশ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সমুদ্রে ভাটার টানে সৈকতের প্রশস্ততা চোখে পড়ে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের চেয়েও এই সমুদ্র সৈকত অনেক বেশি প্রশস্ত। তবে বর্ষা মৌসুমে সৈকতের প্রশস্ততা কিছুটা কমে আসে। কিছু কিছু এলাকায় বেড়ি বাঁধের রক্ষায় পাথরের ব্লকগুলো সৈকতের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে। তবে ১৯৯১ সাল থেকে বেশ কয়েকটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় এই সৈকত এলাকার বেড়িবাঁধ তছনছ হয়ে যায়। ফলে পর্যটনের সৌন্দর্য বিকশিত হচ্ছে না।

বাহারছড়া এলাকার শাহেদ এমরান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকার বিশাল চরে সারি সারি ঝাউ গাছের বাগান যে কারো নজর কাড়ে। এখানে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপিত হলে বিনোদনপ্রেমিরা উপকৃত হবেন। এই অপার সম্ভাবনার সমুদ্র সৈকতকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দীর্ঘদিনের দাবি আমাদের। তাছাড়া এখানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ঝাউবাগান সৃষ্টি করে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করলে সরকার লাভবান হবে, বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে।’

খানখানাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখানে বিদ্যমান। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত রয়েছে এখানে। সৈকতে লাল কাঁকড়া সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য আরও অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। এই বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত থেকে সরাসরি সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। সমুদ্রের সঙ্গে গা ঘেঁষে রয়েছে কুতুবদিয়া চ্যানেল, আর কাছেই কুতুবদিয়া দ্বীপ। পর্যটকরা চাইলে দ্বীপ ঘুরে আসতে পারবেন। রাস্তাঘাট আরও উন্নত হলে এখানে পর্যটকদের স্বর্গ হয়ে উঠবে।’

খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসিম হায়দার বলেন, ‘বাঁশখালী একটি পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও ইকোপার্ক ও চা বাগান রয়েছে। রয়েছে বহু পুরাকীর্তি। এখানকার সমুদ্র সৈকতের বিশালত্ব যে কোনো বিনোদন প্রেমিককে আকৃষ্ট করে। ফলে পর্যটকরা একই সঙ্গে অনেক কিছু দেখার ইচ্ছা থাকলে অনায়াসে বাঁশখালীতে আসতে পারেন।’

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘এক সময় বাঁশখালীর এই সমুদ্র সৈকতে যেতে পর্যটকরা ভয় পেতেন। এ এলাকায় বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় আধুনিক ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ করে দেওয়াতে এখন পর্যটকরা সহজেই বেড়াতে যেতে পারেন। বন্ধের দিনে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। পর্যটকদের সুবিধার্থে এবং বিনোদনের জন্য ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতকে পর্যটন স্পট করার জন্য নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আশা রাখি অচিরেই তা বাস্তবায়নের মুখ দেখবে বাঁশখালীবাসী। তাছাড়া বাঁশখালী উপকূলজুড়ে মেরিন ড্রাইভ হলে পর্যটন এলাকার দৃশ্যপট এমনিতেই পাল্টে যাবে বলে মনে করি।’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে