শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

​কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে ফেরি কদম একমাত্র ভরসা!

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
  ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:২২

বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামাল, শাহ মখদুম, ক্যামেলিয়া, কপোতি, গোলাম মওলা, ফেরি ফরিদপুর, ফেরি কদমসহ অনেক ফেরি পাবনার কাজীরহাট- আরিচা নৌরুটে যাতায়াত করলেও এখন একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেরি কদম।

ফেরি কদম দিয়ে এই নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে দেখা দিয়েছে মারাত্মক জটিলতা। ঘাটের একমাত্র পল্টুনে ভিড়তে পারছে না রো রো ফেরি। ফলে ডাম্প ফেরি দিয়ে যাত্রী ও পরিবহন পারাপার করায় কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটির মধ্যে ফেরি ‘কপোতি’ গত এক সপ্তাহ যাবত বিকল। চলছিল ‘কদম’ ও ‘ক্যামেলিয়া’ ফেরি। ক্যামেলিয়া ফেরিটিও গত রোববারে যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয়। যার কারণে বর্তমানে একটি ফেরি দিয়ে চলছে এ নৌপথ।

সড়েজমিনে কাজিরহাট ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাট থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক যানবাহনের সারি। পণ্যবাহী পরিবহনগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে করে পরিবহনের চালক ও শ্রমিকদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। প্রচণ্ড শীতে তাঁরা রাস্তার ওপর রাতযাপন করছেন। টার্মিনাল এলাকায় নেই পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার ও টয়লেট সুবিধা। আবাসিক হোটেল ও স্বাস্থ্যসম্মত রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা নেই। কয়েকটি ছোট রেস্টুরেন্ট থাকলে নিম্নমানের খাবারে অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয় ঘাটে আগত ট্রাকচালকরা চরম অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে দিন কাটিয়ে থাকছে।

লালমনিরহাট স্থলবন্দর থেকে ডালভর্তি ট্রাক নিয়ে ঢাকায় উদ্দেশে যাত্রা করা ট্রাকচালক রফিকুল মন্ডল বলেন, এই নৌপথটি তাঁদের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্বালানি খরচ কমাতে তাঁরা এ নৌপথ ব্যবহার করে ঢাকায় যাতায়াত করেন। অনেক সময় ঘাটে এসে সঙ্গে সঙ্গে ফেরিতে উঠতে পারেন। কিন্তু বেশির ভাগ সময় কপালে জোটে দুর্ভোগ। ঘাটের বিশৃঙ্খলার জন্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন তিনি। থাকা খাওয়ার তেমন ব্যবস্থা নেই। ট্রাকের মধ্যেই রাত কাটাতে হয়। রেস্টুরেন্টে নিম্নমানের খাবার অতিরিক্ত দামে ক্রয় করলেও সেগুলো খেয়ে অসুস্থ হতে হচ্ছে।

ট্রাকচালক রবিউল ইসলাম গত শুক্রবার ঘাটে এসে মঙ্গলবার রাতেও ফেরিতে উঠতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কুষ্টিয়া থেকে গম নিয়ে ঘাটে এসে আটকা পড়েছেন। এখানে রাস্তার ওপর অবস্থান করে রাতযাপন করতে হয়েছে। গভীর রাতে প্রচণ্ড শীত ও কোয়াশা পড়ে । খাওয়া-থাকা সমস্যার পাশাপাশি চুরি-ছিনতাইয়ের আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আগত ট্রাকচালক মহিবুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘাটে আসলেও মঙ্গলবার রাত ৮ টা পর্যন্ত ফেরিতে উঠার সিরিয়াল পাইনি। মাত্র একটি ফেরি দিয়ে ট্রাক ও মাইক্রোবাস পারাপারের কাজ চলছে। ৫ দিন ঘাটে অবস্থান করার পর বুধবার ঘাট কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়ার কথা জানায়। বাধ্য হয়ে ট্রাক ঘুরিয়ে সেতু হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গতবছর কাজিরহাট-আরিচা নৌপথটি চালু হয়। ফলে পাবনা, নাটোর ও রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েক জেলার পণ্যবাহী পরিবহন এ নৌপথ ব্যবহার করে এর গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএর ও বিআইডব্লিউটিসির সমন্বয়হীনতার কারণে নৌপথটি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকেরা মনে করেন।

আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলম বলেন, রাস্তার ওপর অবস্থান করা পণ্য পরিবহনগুলোর নিরাপত্তার জন্য একটি টহল দল দিন-রাত অবস্থান করছে। তারা সবসময় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। কোন প্রকার নিরাপত্তাহীনতায় আগত ট্রাকচালকরা নেই। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে।

কজিরহাট ফেরিঘাটের টার্মিনাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট আব্দুল কাইয়ুম বলেন, একটি মাত্র ফেরি দিয়ে বর্তমান ঘাট পরিচালনা করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। ঘাটে দৈন্যদশা চলছে। চরম অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্য অফিস চালাতে হচ্ছে। তিনটি ফেরির মধ্যে দুটিতে যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেওয়ায় আরিচাঘাটে মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে একটি ফেরি দেওয়া হলে সেটি ট্রায়ালের জন্য নদীপথ পারি দেওয়ার সময় মাঝপথে ডুবোচরে আটকে যায়। পরে সেখান থেকে ফেরি ছাড়িয়ে নিয়ে এই নৌপথ থেকে কৌশলে অন্যঘাটে চলে গেছে।

বুধবার সকালে বিআইডব্লিউটিসি পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, শুরুতে এ নৌপথে দুটি রো রো ফেরি (বড়) ও দুটি ছোট (ডাম্প) ফেরি দিয়ে পরিবহন পারাপার করা হচ্ছিল। এতে করে ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছিল। তবে সম্প্রতি নদীর পানি নিচে নেমে গেলে পল্টুন জটিলতায় রো রো ফেরি দুটি ঘাটে ভিড়তে পারছিল না। পরে রো রো ফেরি বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়া ও রো রো ফেরি গোলাম মওলাকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ছোট ফেরি ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০টি পরিবহন পার করতে পারছে। তবে প্রতিদিন যে পরিমাণ পরিবহন এ ঘাটে আসছে, তাতে জরুরিভাবে নতুন ঘাট ও পল্টুন স্থাপন করে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো না হলে এ বিড়ম্বনা কাটানো সম্ভব হবে না। আগত পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাওয়ার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এখানে ফেরিঘাট হয়ে সুবিধার পরিবর্তে মানুষের কষ্ট আরও বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে