সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাকসামে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার হিড়িক, ভরাট হচ্ছে পুকুর ও জলাশয়

লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৫৮

ফসলি জমির মাটি কেটে ভরাট করছে পুকুর, ডোবা-নালাসহ বিভিন্ন জলাশয়। আবার ওই মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। এভাবেই তিন ফসলি জমির বুক চিরে ছুটে চলছে মাটি ভরাট করা ট্রাক্টর। প্রকাশ‍্যে এসব ফসলি জমির মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে একশ্রেণির প্রভাবশালী মহল।

লাকসামের প্রত‍্যন্ত অঞ্চলে এখন চলছে ফসলি জমি থেকে মাটিকাটা মহাৎসব। তিন ফসলি কৃষি জমি পরিনত হচ্ছে পতিত ভূমিতে। এতে দিন দিন ফসলের উৎপাদন কমছে, বেকার হচ্ছে কৃষক, পরিবেশ হচ্ছে দূষিত।

চলছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মাঝখান থেকে অত্যাধুনিক ভেকু মেশিন দিয়ে জমির মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ। সে মাটি সংগ্রহে ব্যস্ত অসংখ্য ইটভাটার শ্রমিক।

যেই জমির উপরিভাগে ধান বোনা হতো, সে জমিতে এখন বিশাল আকারের সারি সারি গর্ত। এছাড়াও মাটি পরিবহনে ভারী ট্রাক, ট্রাক্টর ও মাহেন্দ্র ট্রলি ব্যবহারে গ্রামীণ সড়ক হচ্ছে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। আইন অমান্য করে এমনি কর্মকাণ্ড চলছে কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।

এদিকে, অতি লোভে পড়ে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করছেন একশ্রেণির জমির মালিক। খনিজ ও জৈব উপাদান বিশেষ করে হিউমাস (জৈব কণা) সমৃদ্ধ মাটির ওই অংশ তুলে ফেলার কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। কৃষিবিদরা বলছেন, এর ফলে কয়েক বছর ওইসব জমিতে ফসলের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হবে না। ফসলি জমির মাটি দিয়ে পুকুর, জলাশয় ভরাট করে ঘরবাড়ির ভীত তৈরি ও ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব আইনের লঙ্ঘন।

আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা না নেয়ায় ফসলি জমি ধ্বংসের মহাৎসব চলছে এ উপজেলায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, একশ্রেণির ট্রাক মালিক ও চালক কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে মাটি কিনে নিচ্ছেন। প্রতি ট্রাক মাটি বিক্রি করছেন ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাকই, মুদাফরগঞ্জ, গোবিন্দপুর ইউনিয়ন এবং পৌরসভার ২ ও ৭ নং ওয়ার্ডে আবাদি জমিতে ৭টি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে পুকুর, ডোবা-নালা, ঘরবাড়ির ভীত তৈরি ও ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে।

প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটিভর্তি ট্রাক্টরগুলো ফসলি জমির ওপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা তৈরি করে চলাচল করছে।

এতে ধুলোবালিতে দুই পাশের জমির ফসল ও সড়ক বিনষ্ট হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে কিছুই বলতে সাহস পারছেনা নিরীহ কৃষকরা। এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী অধিকাংশ জমির মালিকরা জানান, উপজেলার বাকই দক্ষিণ ইউনিয়নের তারাপুর ও কোঁয়ার মৌজায় ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এছাড়াও ডাকাতিয়া নদী পাড়ে গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকায় এবং পৌরসভার ডুরিয়া বিষ্ণপুর, গাজীমুড়া এলাকায় জমির মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে গভীর করার ফলে পার্শ্ববতী জমির মাটি ভেঙে পড়ে যাচ্ছে।

বাকই দক্ষিণ ইউনিয়নের কৃষক কালু মিয়া বলেন, কোঁয়ার মৌজার বিলের তিন ফসলি এক ব্যক্তির ৮০ শতাংশ জমির তিন ফুট মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পরানপুর আল মদিনা ব্রিকসে। বর্তমানে আমরা কৃষকরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। যদি কোনভাবে একজন কৃষকের জমির মাটি তারা ক্রয় করতে পারে তাহলে পাশের জমির মালিকও বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করতে হয়। এভাবে পুরো বিলের চিত্র বদলে এখন হাওড়ে রূপ নিচ্ছে।

বাকই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল বলেন, কয়েকদিন পূর্বে ইউপি নির্বাচনে ব্যস্ত ছিলাম। কোঁয়ার এলাকায় আবাদি জমি থেকে মাটি কেটে ইট ভাটায় নিচ্ছে তা জানিনা। শুনেছি প্রশাসন নাকি একটি ভেকু আটক করেছে।

পরানপুর এলাকার আল মদিনা ব্রিকসের মালিক সলিমুল্লা শাহীন বলেন, ট্রাক্টর মালিকদের সাথে কথা বলে আমরা মাটি এনেছি ব্রিকসে এটা সত্যি কথা। কিন্তু ট্রাক্টর মালিকরা কোন জমি থেকে মাটি আনবে সেটা আমার জানার বিষয় নয়।

এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারহানুর রহমান বলেন, লিখিত অথবা মৌখিক ভাবে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করলে, তখন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। এ ছাড়াও গত কয়েকদিন পূর্বে আজগরা ইউনিয়নে ভেকু মেশিন আটক করে জরিমানা করা হয়েছে। গত বুধবার কোঁয়ার এলাকায় ভেকু দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটার খবর পেয়ে লাকসাম থানা পুলিশের মাধ্যমে একটি ভেকু মেশিন আটক করা হয়েছে।

যাযাদি/সৌলভ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে