রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেলাবতে ছাপানো কাগজে খাবার বিক্রি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ  

বেলাব (নরসিংদী) প্রতিনিধি
  ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩৯

নরসিংদীর বেলাবতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশিত নিরাপদ ফুড গ্রেড খাবার পাত্রে খাবার বিক্রির নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যত্রতত্র ছাপানো কাগজে নানান মুখরোচক খাবার বিক্রি করছে দোকানীরা।

উপজেলার বারৈচা বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৫০ টির অধিক ভাসমান দোকানে ছোলা, পিয়াজু, ঝালমুড়ি সহ বিভিন্ন তৈলাক্ত খাবার ছাপানো কাগজে করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়।

একই চিত্র বেলাব বাজারের বিভিন্ন দোকানের।বেলাব বাজারের প্রবেশ পথেই অবস্থিত বেলাব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেলাব পাইলট মর্ডান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বিদ্যালয়ের গেইটের সামনে ভ্রাম্যমান ঝালমুড়ি, ফুসকা, পুরি-সিঙারার দোকান। মুখরোচক এসব খাবার খেতে দোকানগুলোতে প্রতিদিনই ভীড় জমায় শত শত স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী সহ বাজারে আগত সাধারণ মানুষ ।

দোকানীরা স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের কাছে এসব মুখরোচক খাবার পরিবেশন করেন ছাপানো কাগজে। ছাপানো কাগজে পরিবেশনকৃত খাবার খেয়ে প্রতিদিনই শিক্ষার্থী সহ শত শত মানুষ পড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে, টেনে আনছে মরণব্যাধী ক্যানসার, হৃদরোগ কিডনীরোগসহ ভয়ংকর রোগ।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, খবরের কাগজ,ছাপা কাগজ বা যে কোন লিখিত কাগজে খাদ্য পরিবেশন বন্ধ করে নিরাপদ ফুডগ্রেড পাত্রে এসব খাবার পরিবেশনের নির্দেশ দিলেও তা মানছেনা কেউ।

তবে সাধারণ মানুষ মনে করছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশনার ব্যাপারে অবগত নয় সবাই। যার কারনে এ নির্দেশ মানা হচ্ছেনা।

তাছাড়া ছাপানো কাগজে খাবার পরিবেশন বন্ধে মানুষকে সচেতন না করা ও প্রশাসনিক কোন উদ্যোগ না নেয়ায়ও তা বন্ধ হচ্ছেনা বলে ধারনা অনেকের।

বেলাব উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও ভ্রাম্যমান দোকানগুলোতেই মুখরোচক বিভিন্ন খাবার পরিবেশনে ব্যবহার করা হয় ছাপানো কাগজের ঠোঙা।

পুরানো পত্রিকা, পুরানো বই-খাতা দিয়ে ঠোঙা বানিয়ে তা দিয়ে দোকানীরা মুখরোচক তৈলাক্ত খাবার বিক্রি করে বহুদিন ধরে। ছাপানো কাগজে খাবার পরিবেশন শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হলেও দোকানী কিংবা ক্রেতাদের এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য নেই ঠিক তেমনই সংশ্লিষ্ট দপ্তরেরও এসব বন্ধে নেই কোন পদক্ষেপ।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জনসাধারনকে ছাপানো কাগজে খাবার পরিবেশন বন্ধ করার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হোটেল-রেস্তোরা ও পথ খাবার ব্যবসায়ীসহ অনেক খাদ্য ব্যবসায়ী খবরের কাগজ/ছাপা কাগজ/লিখিত কাগজের মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্য পরিবেশন করছেন,যা নিরাপদ খাদ্য আইন,২০১৩ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। খবরের কাগজ/ছাপা কাগজ/ লিখিত কাগজে ব্যবহৃত কালিতে ক্ষতিকর রং,পিগমেন্ট ও প্রিজারভেটিভস থাকে,যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক।

এছাড়া পুরনো কাগজে বিভিন্ন জীবাণু থাকে। খবরের কাগজ/ছাপা কাগজ/লিখিত কাগজ এর ঠোঙায় বা উক্ত কাগজে মোড়ানো খাদ্য নিয়মিত খেলে,মানবদেহে ক্যানসার,হৃদরোগ ও কিডনীরোগসহ নানাবিধ রোগের সৃষ্টি হতে পারে।একারনে হোটেল-রেস্তোরা ও পথ খাবার ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে খাদ্য স্পর্শক প্রবিধানমালা, ২০১৯ অনুসরণ করে পরিস্কার ও নিরাপদ ফুডগ্রেড খাবার পাত্র ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করা হয়।

কিন্তু নির্দেশনা বিজ্ঞপ্তি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। মাঠ পর্যায়ে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন কার্যক্রম নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে কমানো যাচ্ছেনা ছাপানো কাগজে খাদ্য বিক্রি ও ফুডগ্রেড পাত্র ব্যবহারের নিশ্চয়তাও। যার কারনে সাধারণ মানুষ ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

নরসিংদী জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জোড়ালো ভাবে সকলকে সচেতন করানো যায়নি। ছাপা কাগজে খাবার বিতরন শুধু বেলাবতেই নয় পুরো নরসিংদী জেলাতেই একই চিত্র। তবে মাঝে মধ্যে দপ্তরটি ছাপা কাগজে খাবার পরিবেশনের ক্ষতিকর বিষয়গুলো নিয়ে মানুষকে সচেতন করে থাকে।

বারৈচা বাসস্ট্যান্ডে বন্ধুদের সাথে নিয়ে ছুলা বুট ও পিঁয়াজু খেতে আসেন কলেজ পড়ুয়া মোঃ বিজয়। হাতে পিঁয়াজুর ঠোঙা যা একটি পুরনো খবরের কাগজের ৷ পুরনো খবরের কাগজের ঠোঙায় খাবার খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ এমনটা জানা নেই তার।

তিনি বলেন, এসব বিষয়ে কোন দিন কেউ আমাদের অবহিত করেন নি। যার ফলে আমরা এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানি না।

জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা ফারজিয়া হক বলেন, নির্দেশনাটি একেবারেই নতুন।ছাপানো কাগজ বা পুরাতন বইয়ের কাগজে খাবার পরিবেশন খুবই ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে আমরা মানুষকে প্রাথমিক ভাবে সচেতন করছি। মানুষ যাতে ছাপা কাগজে খাবার পরিবেশন না করে নিরাপদ ফুডগ্রেড পাত্রে খাবার পরিবেশন করে যেজন্য প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করবো।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে