সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাগেশ্বরীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ

উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টা
ওমর ফারুক, নাগেশ্বরী (কড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০৬

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ। ধান সরিষা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ বেড়েছে সমলয় পদ্ধতিতে। কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণের আওতায় নিয়ে আসতে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনাসহ প্রতিনিয়ত কৃষি কাজকে সহজ ও সাশ্রয়ী করতে কৃষকদের হাতের নাগালে নিয়ে আসছে আধুনিক পদ্ধতির বিভিন্ন সরঞ্জাম। এসবের মধ্যে অন্যতম ধানের চারা রোপণের মেশিন রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। যান্ত্রিক এই মেশিনটির মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকের সময়, শ্রম ও আর্থিক খরচ কমিয়ে ফসল উৎপাদন বাড়িয়ে দেবে দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার ৪৩টি বøকের মধ্যে নেওয়াশী ইউনিয়নের গোবর্ধ্বনকুটি বøকে ৫০ একর এবং রায়গঞ্জ ইউনিয়নে ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপন করা হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য ব্লকগুলোতে ৪ থেকে ৫ একর পর্যন্ত সব মিলে ২৯০ একর জমিতে এই পদ্ধতিতে চারা রোপন করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বুধবার নেওয়াশী ইউনিয়নের গোবর্ধ্বনকুটি এলাকায় ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপনের উদ্বোধন করেন উপজেলা কৃষি অফিসার শাহরিয়ার হোসেন।

কৃষকরা জানান, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনায় সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষে ব্যাপক আগ্রহ বাড়ছে তাদের। চলতি বোরো মৌসুমে এ বছর ট্রেতে বীজতলা তৈরী, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপন করছেন। এছাড়াও ধান কর্তনও করবেন আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন হার্ভেস্টারের মাধ্যমে। এতে করে প্রায় দ্বিগুণ খরচ কমার পাশাপাশি বাচবে সময় ও শ্রম।

গোবর্ধ্বনকুটি ব্লকের সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ১ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষ করছেন, মোস্তাফিজার রহমান চাষ করছেন দেড় বিঘা, মফিজুল ইসলাম ৪ বিঘা, নুর হোসেন ২ বিঘা ও আশরাফ আলী ২ বিঘাসহ অনেক কৃষক রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে বোরোর চারা রোপন করছেন।

তারা জানান, আগে তাদের এক বিঘা জমিতে চারা রোপন করতে কামলা খরচ যেতো প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। কাটতেও একই খরচ যেত। এখন যেমন খরচও অনেক কম তেমনই সময়ও খুব কম লাগে। এভাবে চাষাবাদে ফলন ভালো হলে প্রতিবছরই সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষ করবেন তারা। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের চালক ফারুক হোসেন জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে আমাদেরকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়েছে। যেখানে এক বিঘা জমিতে চারা রোপন করতে ৫-৬জন লোকের একদিন সময় লাগে সেখানে মেশিনের মাধ্যমে একজন লোক দিনে ১০ থেকে ১২ বিঘা জমিতে চারা রোপন করা যায়।

অপরদিকে এক বিঘা জমিতে চারা রোপনে খরচ হয় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা সেখানে মেশিনের মাধ্যমে চারা রোপনে বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। এছড়াও এই মেশিনের মাধ্যমে চারা রোপনের ফলে ধানের প্রতিটি গোছা নির্দিষ্ট ও সমান দুরত্বে থাকে আর প্রতিটি গোছায় নির্দিষ্ট পরিমান গাছের চারা থাকে। ফলে ফলনও ভালো হয়।

নেওয়াশী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষককে উদ্ধুব্ধকরণের মাধ্যমে আমরা ট্রেতে বীজতলা তৈরি করি সমলয়ে চাষাবাদের লক্ষ্যে আর এখন আমরা রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধান রোপন করতেছি। এতে কৃষকের খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি তারা আর্থিকবাবে লাভবান হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার শাহরিয়ার হোসেন বলেন, কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত স্যারেরর নির্দেশনায় আমরা সমলয়ে চাষাবাদের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক মাঠ দিবসসহ নানাবাবে উদ্ধুকরণ করে তাদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এর ফলে উপজেলায় এ বছর সমলয়ে বোরো চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। আমরা সবসময় কৃষকদেরকে সঠিক পরাপর্শ ও দিক নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের পাশে থাকছি যাতে কৃষকদের ব্যয় কমে তাদের চাষকৃত কষ্টের ফসলে ফলন বৃদ্ধি পায় এবং তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়। আর কৃষকরা লাভবান হলে দেশ এগিয়ে যাবে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে