সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

তাড়াশে ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা শুরু

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:০৫

তাড়াশে অনুষ্ঠিত হয়েছে আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী দইমেলা। তবে মেলায় নেই আগের সেই জৌলুস। জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় ও দিন দিন ক্রেতা কমে যাওয়ার সঙ্গে কমেছে দোকান ও বিক্রেতাও। ঐতিহ্য জড়িয়ে থাকলেও হারিয়ে গেছে মেলার সেই প্রাণ।

বুধবার ভোর থেকেই বিভিন্ন এলাকার বিক্রেতারা দই ও মুড়ি নিয়ে বাজারে আসতে শুরু করেন। তবে মেলায় চোখে পড়েনি আগের সেই জৌলুস।

এটি মূলত শ্রী পঞ্চমী মেলা হলেও এলাকাবাসীর মুখে দইমেলা নামেই পরিচিত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দইয়ের মেলাটি আড়াইশ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা দই, ঝুড়ি, মুড়কি, চিড়া, মুড়ি, বাতাসা, কদমা, জিলাপিসহ রসনাবিলাসী নানা ধরনের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলা চলবে সারা দিন। অনেকে সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসেছেন। তারা সবাই দই, মুড়ি-মুড়কি কিনে বাড়ি ফিরছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম পঞ্চমী তিথিতে দইমেলার প্রচলন করেছিলেন। তিনি দই ও মিষ্টান্ন খুব পছন্দ করতেন। তাই সেই সময়ে জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে দই পরিবেশন করা হতো। আর সেই থেকে জমিদার বাড়ির সামনে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দইমেলার প্রচলন শুরু হয়।

সেই থেকে প্রতি বছর মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে দইমেলার আয়োজন করা হয়। কথিত আছে, প্রতি বছর মেলায় আসা সবচেয়ে ভালো দই তৈরিকারদের জমিদারের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করার প্রথা চালু ছিল।

বিক্রেতা উজ্জল কুমার ঘোষ, বিধান ঘোষ ও মিলন কুমার ঘোষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানা জায়গা থেকে মেলায় এসেছে বাহারি নামের নানা দই। তার মধ্যে ক্ষীরসা দই, শাহী দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই অন্যতম। পাশাপাশি বড় বড় হাড়িতে রয়েছে দই। বর্তমানে দুধ, চিনিসহ সব উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় দইয়ের দামও বেড়েছে অনেকটা।

তাড়াশ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি ও জেলা যুগ্ন সম্পাদক তপন কুমার গোস্বামী বলেন, মূলত পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজাকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী এই দইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। তাড়াশের তৎকালীন জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথমে দইমেলার প্রচলন করেছিলেন। তারপর থেকে এটা যেন এলাকার একটা রেওয়াজ ও আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়। আমরা ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে মেলায় গিয়েছি। আমাদের সন্তানরাও আমাদের হাত ধরে মেলায় যাচ্ছে। তবে মেলার আগের সেই জৌলুস নেই।

তিনি আরও বলেন, আগে মেলায় মানুষের ভিড় বেশি থাকায় ঢোকাই যেত না। কিন্তু এখন আর আগের মতো মেলা নেই। এখন আর মেলা উপলক্ষে নেই সাজ সাজ ভাব, আসে না জামাই বা আত্মীয়-স্বজনরা।

তাড়াশ উপজেলার সংগীত শিক্ষক ও দই ক্রেতা গোপীনাথ সরকার বলেন, ঐতিহ্য মেনে এখনো তাড়াশে দইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে মেলা হলেও সেই জৌলুস আর নেই। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দই ও চিড়া মুড়ি কিনতে এসেছি। মেলা সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে যা দেখে আমরা সন্তুষ্ট।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে