সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়ে বিপাকে হাকিমপুরের ৩০০ বিঘা ফসলি জমির চাষিরা

হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:১০

দিনাজপুরের হাকিমপুরকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এনেছে সরকার। অথচ এই উপজেলার কোকতারা গ্রামে ৩০০ বিঘা জমির উপর বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। যার কারণে এসব জমির চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষিরা। বিদ্যুৎ না পেয়ে বিগত পাঁচ বছর ডিজেল চালিত মিশন দ্বারা পানি সেচ দিয়ে আসছেন তারা। তাতে কয়েকগুণ বাড়তি খরচ করতে হয় তাদের। বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে না এখানকার চাষিরা।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার কোকতারা গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ৩০০ বিঘা জমিতে রয়েছে একটি গভীর নলকূপ। তবে নলকূপের পাশ দিয়ে রয়েছে বিদ্যুতের পৈলসহ লাইন। কিন্তু এই নলকূপের সাথে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। ফসল ফলার তাগিদে ডিজেল চালিত মেশিন দিয়ে এই শতশত বিঘা জমিতে ফসল ফলাচ্ছেন তারা। বিঘাপ্রতি পানির মুল্য দিতে হয় প্রায় ৪ হাজার টাকা। অথচ বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে খরচ হয়ে থাকে ১২০০ টাকা। ২৮০০ টাকা বেশি ব্যয় করতে হয় এখানকার কৃষকদের। এতে করে বছরে তিনটি ফসল ফলাতে লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। ফলে দিনদিন এই ৩০০ বিঘা জমিতে ফসল ফলাতে আগ্রহ হারার পাশাপাশি সর্বশান্ত হতে বসেছে এখানকার কৃষকেরা।

জানা যায়, ২০০৪ সালে প্রথম বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে এখানে চালু হয় গভীর নলকূপ। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই মাঠের কৃষকেরা এই নলকূপ থেকে পানি পেয়েছিলো। কিন্তু কাদের নামের এক প্রভাবশালী নলকূপটিকে নিজের বলে দাবি করে এবং প্রভাব খাটিয়ে নলকূপটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কোন মতেই বিদ্যুৎ সংযোগটি না পেয়ে চাষাবাদ নিয়ে দিশেহারা এখানকার ভুক্তভোগী চাষিরা।

মহির উদ্দিন, আলম হোসেন, জহুরুল ইসলাম সহ ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, আমরা কোকতারা গ্রামের অসহায় কৃষক। সরকার আমাদের উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এনেছে। অথচ আজ আমরা কৃষি কাজে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন। গত ৫ বছর যাবৎ বিদ্যুৎ না পেয়ে চাষাবাদ নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের এই ৩০০ বিঘা জমির চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ পড়ে আছি। সরকার সেচে ভর্তুকি দিচ্ছেন। অথচ আমরা তা থেকে বঞ্চিত রয়েছি।

তারা আরও বলেন, বছরে আমরা তিনটি ফসল ফলায়। ডিজেল দিয়ে আবাদ করতে আমাদের কয়েকগুণ বাড়তি খরচ হয়ে যায়। একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। কোথাও কোন অভিযোগ দিয়ে আমাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে আমাদের বাঁচান।

হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর রেজা শাহিন বলেন, উপজেলার কোকতারা গ্রামে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, আমি বিষয়টি জানি। বিগত ৫ বছর ধরে বিদ্যুৎ নেই, আগে সংযোগটি ছিলো। কাদের নামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি তার প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এতোগুলো জমিতে ডিজেল চালিত মেশিন দ্বারা পানি সেচ দিয়ে ফসল ফলাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। আমি সরকার এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট অনুরোধ করছি দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিবেন এবং এই ৩০০ বিঘা জমিতে ফসল ফলাতে কৃষকদের উৎসাহিত করবেন।

এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত রায় বলেন, কোকতারা গ্রামের গভীর নলকূপের বিষয়টি অবগত আছি। কয়েক দিনের মধ্যে গ্রামবাসী সহ দুই পক্ষকে নিয়ে বসবো এবং এর একটা সমাধান করবো।

যযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে