বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীমঙ্গলে ফুলের সঙ্গে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
  ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৪:৪১
শ্রীমঙ্গলে ফুলের সঙ্গে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল

মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলে আম গাছগুলোতে মুকুলে ভরে গেছে। বসন্তের নানা ফুলের সঙ্গে সৌরভ ছড়াচ্ছে গাছে গাছে আমের মুকুল। আর এ মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। মনকে করে তুলছে আরো প্রাণবন্ত। এ বছরের আবহাওয়া আমের জন্য অনুকুলে রয়েছে।

সোনালি হলুদ রঙের আমের মুকুলের মনকাড়া ঘ্রাণ। গাছে গাছে মৌমাছির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে গুনগুন শব্দে। ছোট পাখিরাও মুকুলে বসছে মনের আনন্দে। এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার একটি আম গাছে। দৃশ্যটি যে কাউকেই কাছে টানবে। দুরন্ত শৈশবে কাঁচা-পাকা আম পাড়ার আনন্দ অনেকেরই স্মৃতিতে চির অমর। তাছাড়া বর্তমানে আম বাংলাদেশের প্রধান চাষযোগ্য অর্থকরী ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম।

বৈচিত্রপূর্ণ ব্যবহার, পুষ্টিমান এবং স্বাদ-গন্ধে আম একটি অতুলনীয় ফল। বিশেষ করে শীতের শেষে যখন আমের মুকুল আসে, আর সেই মুকুল থেকে যখন ছোট ছোট আম বের হয়, সেই আম পাড়তে গিয়ে মায়ের বকুনী বৃদ্ধ বয়সে অনেকের কাছে স্মৃতিপটের চেনা ইতিকথা। উপজেলার অনেক স্থানে এবার আমের মুকুল লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সরজমিনে ঘুরে দেখায়ায়, কলেজ রোডের লন্ডনীবাড়ীতে আমের মুকুল এসেছে কয়েকটি গাছে। এছাড়াও উপজেলার সদর ইউনিয়নসহ প্রায় ৯টি ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জের এলাকার অনেক বাড়ির আঙিনায়, পুকুর ধারে আম গাছে মুকুল ধরেছে। এর মধ্যে চা বাগান কালীঘাট, রাজঘাট, ভাড়াউড়া, সাতগাঁও, জাগছড়া, সোনাছড়া, বর্মা ছড়া, বিদ্যাবিল, উদনাছড়া, ভুরভুরিয়াছড়া, মাজদিহি, কাকিয়াছড়া, হরিণছড়াসহ গ্রামগঞ্জ ও শহরের প্রায় সব এলাকাতেই রয়েছে আমগাছ। তবে বেশি মুকুল এসেছে চা বাগানগুলোতে। কারণ বাগানগুলোতে আম গাছে পরিচর্যা হয় বেশি। আম চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই আম গাছের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তবে গড়ে ওঠা নতুন আম জাতেরই গাছ বেশি হচ্ছে।

গত বছরের চেয়ে টানা শীত ও কুয়াশার তীব্রতা এ বছর অনেক কম তবে শীতে কিছু বৃষ্টি ও ঝড় তুফান হয়েছে। গতবারের মতো মৌসুমের শুরুতে শিলা বৃষ্টি হয়নি। তবে মাঝে-মধ্যেই আকাশে মেঘ জমে উঠছে। এ সময় শিলাবৃষ্টি হলে আমের মুকুলের ক্ষতি হবে। এর উপর সামনে কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কাও কাজ করছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন বলেন যায়যায়দিনকে, এ বছর শহর থেকে চায়ের বাগানগুলোতে গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি এসেছে। আমচাষী এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময়মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে আমের ভালো ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এ কারণেই আশায় বুক বেধে চা বাগানের আমচাষীরা শুরু করেছেন পরিচর্যা। তাদের আশা, চলতি মৌসুমে তারা আম থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।

আমচাষী শ্যাম বিলাশ গোয়ালা জানান, বছর জুড়ে গাছের পরিচর্যা করার কারণে এখন প্রতি বছরই চা বাগানে আমের ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শ হলো গাছে মুকুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে পুরো গাছে সাইপারম্যাক্সিন ও কীটনাশক দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দিতে পারলে গাছে বাস করা হপার বা শোষকজাতীয় পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যদি সঠিক সময়ে হপার বা শোষক পোকা দমন করা না যায় তাহলে আমের ফলন কমে যেতে পারে এ বছর ৪শ ৯ হেক্টর আমের মুকুল এসেছিলো কিন্তু শীতকালে বৃষ্টি হওয়ার কারণে মুকুল ঝড়ে পড়ে যায়। তবে প্রায় ২শ ৬৫ হেক্টর আমের ভালো মুকুল এসেছে। তবে কালবৈশাখী ঝড় না এলে শ্রীমঙ্গলে আম ভালোই হবে বলে জানান তিনি।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে