শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদপুরে জেলে পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ

চাঁদপুর প্রতিনিধি
  ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:১১
চাঁদপুরে জেলে পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ

আর মাত্র কয়েকদিন পরই ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ঈদুল ফিতরের দিন ঘনিয়ে আসলেও ঈদের আনন্দ কিংবা আমেজ নেই চাঁদপুরের চরাঞ্চলের জেলে পরিবারগুলোর মাঝে। নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে তাদের।

চাঁদপুর জেলায় প্রায় ৪৫ হাজার জেলে পরিবার সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত রয়েছে।

ইলিশ অভয়াশ্রম কর্মসূচির আওতায় ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষাকল্পে দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল) নদীতে মাছ ধরা বন্ধ। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকায় এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এ সময় তিন কিস্তিতে প্রতি পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ এলাকার এসব জেলে পরিবারের মাঝে দুই দফা চাল প্রদান করা হয়েছে।

বেশ কিছু ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল বিতরণ নিয়ে উঠেছে নানা বিতর্ক। আবার কোনো জেলে কাজ করতে বিদেশে চলে গেছে, তার নামেও বরাদ্দ মিলছে চাল।

সবমিলিয়ে প্রকৃত জেলে তালিকা নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও জেলেরা কোনভাবেই ভালো নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু চাল দিয়েই কি সংসার ও অন্য চাহিদাপূরণ সম্ভব এমন প্রশ্ন এসব জেলে পরিবারের।

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদী তীরবর্তী কয়েকটি চরে গেলে দেখা যায়, অধিকাংশ জেলে পরিবারে চলছে হাহাকার। যারা শুধু নদীর ওপর নির্ভরশীল সেসব পরিবারগুলোর অধিকাংশকে এ সময় বেশ কষ্টে দিন কাটাতে হয়। ঈদ আনন্দ নিয়ে তাদের মাঝে নেই কোনো উচ্ছ্বাস। বেশির ভাগ পরিবার পোশাক কিনতে পারছেন না। এমনকি ঈদের দিন চিনি-সেমাই কেনারও সামর্থ্য নেই অনেক জেলের।

কেউ কেউ আশা করছেন, ঈদের আগে দু’একদিন ইলিশ ধরতে পারলে বিক্রি অন্যান্য খরচ কিছুটা চালানো যেত। কিন্তু তার কোনো সুযোগ নেই।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক জেলেকে সহযোগিতা করা আপাতত সম্ভব না হলেও কয়েকশ' অতিদরিদ্র জেলেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে। আগামী ১ মে থেকে মাছ ধরা শুরু হবে। তাই অনেকে আবার জাল সেলাই এবং নৌকা মেরামতের কাজে ব্যস্ত।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিনা ফেরিঘাট এলাকার জেলে হাবু ছৈয়াল, মো: হারুন বলেন, বিগত বছরগুলোতে মাছ ধরে যে উপার্জন করেছি, তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চলেছে। ঈদে ছেলেমেয়ে, বাবা-মাকে নতুন কাপড় দিয়েছি। তবে এবারের ঈদে সমস্যার মধ্যে আছি। ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন আছে, এখনও জামা-কাপড় কিনতে পারিনি। ঘরে বাচ্চারা কান্নাকাটি করে। বাজার করার সামর্থ্য নেই। নদীতে মাছ ধরতে পারলেই কেবল সেমাই-চিনি, সন্তান ও নিজেদের জন্য কাপড় নিতে পারতাম।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, চাঁদপুরে ৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এটা বড় সংখ্যক কমিউনিটি। এখানে তো এক-দুইশ লোক না। তবে সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। জেলেদের বিকল্প আয়বর্ধকমূলক উপকরণ হিসেবে সেলাই মেশিন, ছাগল, গরু ও পরিবেশবান্ধব জালসহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হয়েছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য এগুলো করা হচ্ছে। ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিবন্ধনকৃত প্রত্যেক জেলেকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চার মাসে ১৬০ কেজি চাল দেওয়া হয়। চালের অর্ধেক ইতোমধ্যে তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি দুই মাসের চাল সহযোগিতা শীঘ্রই দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, বর্তমান সরকার জেলেদের চাল, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করছে। ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে কিছু জেলেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে। সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যারা খুব দরিদ্র তাদের ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধিত সব জেলেকে ঈদের আগেই সরকারি চাল সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে