বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে শ্যামনগরে ঈদের বাজার

শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি
  ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৫৮
শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে শ্যামনগরে ঈদের বাজার

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে প্রত্যেক বাড়ীতে ঈদ আনন্দ বইছে। এই আনন্দ ভাগাভাগি করতে বা ঈদ আনন্দকে উপভোগ করতে নতুন পোষাক পরিধান করার জন্য বাজার গুলিতে পোষাক ক্রয়ের ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে উপজেলায় জমে উঠেছে ঈদ বাজার। রাত নয়টা দশটা পর্যন্ত চলছে বাজারে ক্রয় বিক্রয়। ঈদের শেষ মুহুর্তে বাজার জমে উঠেছে বলে ব্যাবসায়ীরা মতামত প্রকাশ করেছেন। তাপমাত্রা উপেক্ষা করে এবার ঈদে পোষাক কেনাকাটায় ভীড় বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে শাড়ী, থ্রিপিচ, মেয়েদের পোষাক বেশী বিক্রী হচ্ছে। কাপড়ের দোকান গুলোতে পাঞ্জাবী, পায়জামা, মেয়েদের পোষাক কিনতে ক্রেতাদের ভীড় বেশী। একই সাথে জুতার দোকানেও থাকছে ভীড়। ব্যাবসায়ীরা জানান পবিত্র রমজানের ১০ থেকে ১২ টি পার হলেও ঈদের কেনাকাটা ছিল না। পনের রমজানের পর থেকে কেনাকাটা শুরু হয়েছে। ঈদের কেনাকাটা নিয়ে শ্যামনগর সদরের সুষমা গার্মেন্টেসের মালিক পরিমল কর্মকার বলেন লেডিস পোষাক বেশী বিক্রী। এর মধ্যে ক্রেতাদের নায়রা সেট, লেহেঙ্গা, স্কাট চাহিদা বেশি। নায়রা সেটের মূল্য এক হাজার পাঁচশত থেকে চার হাজার পর্যন্ত। লেহেঙ্গা দুই হাজার পাঁচশত থেকে সাড়ে তিন হাজার পর্যন্ত। স্কাট এক হাজার থেকে দুই হাজার পাঁচ শত টাকায় বিক্রী হচ্ছে। শাড়ির মধ্যে কাতান, সিল্ক, জামদানী ও টাঙ্গাইল শাড়ী বিক্রী ভাল। কাতান শাড়ী এক হাজার পাঁচশ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত, সিল্ক শাড়ী তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত ,জামদানী শাড়ি দুই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রী হচ্ছে। এছাড়া মধ্যবিত্ত ও নিন্ম বিত্ত পরিবার টাঙ্গাইল শাড়ি কিনছে এক হাজার থেকে দুই হাজার দুইশ টাকায়। অনেকে প্লাস্টিক বক্স সুতির শাড়িও কিনছেন এক হাজার পাঁচশত থেকে দুই হাজার টাকায়। তিনি বলেন ঈদে প্রিন্ট শাড়ি বেশী বিক্রী হচ্ছে।

ছেলেদের পোষাক ডিজাইন জিন্স প্যান্ট বিক্রী হচ্ছে পাঁচশত থেকে আটশত টাকায়। পাঞ্জাবী বেশী বিক্রী হচ্ছে ভারতীয়টা। জামদানী পাঞ্জাবী দুই হাজার পাঁচশত থেকে তিন হাজার টাকা, অরবিন্দ আরদি পাঞ্জাবী এক হাজার টাকা থেকে পনেরশত টাকা, রেশমি সিল্ক পাঞ্জাবী পাঁচশত থেকে পনেরশত টাকায় বিক্রী হচ্ছে। অশোক বস্ত্রালয়ের মালিক উমেশ কুমার বলেন ঈদে শার্ট,প্যান্ট, গেঞ্জি শার্ট, পাঞ্জাবী,পায়জামা,জিন্সের প্যান্ট ভাল বিক্রী হচ্ছে।

উপজেলা সদরের কৃষ্ণা বস্ত্রালয়ের মালিক কার্ত্তিক দাস বলেন মেয়েদের পোষাক ঈদে বেশী বিক্রী হচ্ছে। তিনিও নায়রা সেটের চাহিদার কথা বলেন। মমতা বস্ত্রালয়ের মালিক ভোলা নাথ বলেন সিট কাপড়ও বেশ বিক্রী হচ্ছে। লিমা তিথি বস্ত্রালয়ের মালিক বরুণ ঘোষ বলেন নারী ক্রেতা বেশী বা নারীদের পোষাক বেশী বিক্রী হচ্ছে। তবে তিনি বলেন দরদাম বেশী করছে। তিনি বলেন মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত পরিবারের পুরুষরা লুঙ্গি কিনছেন। তার মূল্য সাতশত থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। ঈদে পোষাকের সাথে যেটি বিশেষ ভাবে প্রয়োজন সেটি হল টুপি। শ্যামনগর আল্লারদান লাইব্রেরীর মালিক বলেন এবার ঈদে বেশি বিক্রী হচ্ছে জুরি টুপি। যার দাম একশত টাকা। ছোট বড় সকলে টুপি কিনছেন। এছাড়া হাজী টুপি, তজবির, লেসটুপি, তাহাবিজ টুপি সহ অন্যান্য টুপি, হাজী, জায়নামাজ বিক্রী হচ্ছে।

ঈদকে কেন্দ্র করে দর্জ্জি পাড়ায় ঘুম নাই। ঈদের আগে সকল অর্ডারের কাজ সমাপ্ত করে পোষাকের মালিককে সরবরাহ করতে হবে এ আশায় অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে।উপজেলা সদরের রয়েল টেইলার্সের মালিক আব্দুল কচি বলেন তিনি নিজে ও কর্মচারীবৃন্দ অর্ডারী কাজ সমাপ্ত করতে রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। অর্ডারী কাজের মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাবী, পায়জামা, বোরকা, শার্ট, প্যান্ট ইত্যাদি। অর্ডারের মুল্য হিসাবে জানান, সাধারণ পাঞ্জাবী চারশত টাকা, অ্যারাবিয়ান পাঞ্জাবী ছয়শত টাকা,বোরকা সাধারণ সাড়ে তিন শত, পায়জামা দুইশত, ডিজাইন বোরকা চারশত থেকে পাঁচশত টাকা।ডাবল জরজেট থ্রিপিচ বানী পাঁচশত, ছেলেদের প্যান্ট ও শার্ট সাড়ে সাতশত টাকা। তিনি বলেন গত ঈদের তুলনায় এবার অর্ডার বেশী। তবে আর অর্ডার নিচ্ছেননা বলে জানান।

ঈদের পোষাকের সাথে মেয়েদের সাজ সজ্জায় রয়েছে মেহেদী। পূর্নিমা ও প্রিন্স ভ্যারাইটি স্টোরের মালিকরা জানান আতর, সেন্ট ও মেয়েদের হাতে লাগানো মেহেদীর চাহিদা রয়েছে। আতর তিব্বত ছোট সত্তর টাকা, মেহেদী ছোট পঁচিশ থেকে চল্লিশ টাকা বিক্রী হচ্ছে।এ ছাড়া সাবান, শ্যাম্পু, ¯েœা, পাউডার, নেলপালিশ, আইল্যানার, চুরি বিক্রী বেশী।

ঈদে পোষাকের সাথে সাথে মিলিয়ে জুতা কিনছেন অনেকে। উপজেলা সদরের নাসির সু স্টোরের মালিক নাসির জানান পুরুষদের জুতা বেশী বিক্রী হচ্ছে।লিবার্টি,স¤্রাটের জুতার চাহিদা বেশী। এ জুতার মূল্য এক হাজার থেকে বারশত টাকার মধ্যে বেশী বিক্রী হচ্ছে। তিনি বলেন রোজার প্রথমদিকে এক রকম বসা ছিল। বর্তমানে শেষ মূহুর্তে বিক্রী ভাল। ফুটপাতের জুতা ব্যাবসায়ী খলিল বলেন নি¤œ আয়ের মানুষ ফুটপাতের দোকানে ভীড় করছেন।

পোষাকের সাথে মুদির দোকানে সিমাই, লাচ্চা, চিনি. সুজি, ছোলা, গুড়া দুধ, মসলা বিক্রী হচ্ছে। মুদি ব্যাবসায়ী নিতাই, অনিমেশ স্টোরের অনিমেশ বলেন শেষের দিকে মসলা, সিমাই, লাচ্চা,চিনি, গুড়া দুধ সহ অন্যান্য মালামাল বিক্রী হচ্ছে।

এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে ফ্রিজ কোম্পানি গুলি ছাড় দেওয়ায় কেউ কেউ ফ্রিজও ক্রয় করছেন। গরমের প্রভাব থাকায় এসিও বিক্রী হচ্ছে। শ্যামনগর মিনিস্টার শো রুমের ম্যানেজার বলেন ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায়ই প্রতিদিন ফ্রিজ বিক্রী চলছে। একই সাথে গরমের কারণে সৌখিন পরিবার গুলি এসি কিনছেন।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে