মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে সাতক্ষীরা বক্ষব্যধি ক্লিনিক

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
  ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৩৭
চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে সাতক্ষীরা বক্ষব্যধি ক্লিনিক

সাতক্ষীরা সরকারি বক্ষব্যধি ক্লিনিকের চিকিৎস্যক ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা ও নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগিরা। ডাক্তার অনুপস্থিত থাকায় বর্হিবিভাগ থেকে টিকিট কেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন দূরদুরান্ত থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা। সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে সাতক্ষীরার একমাত্র বক্ষব্যধি ক্লিনিকটি।

সাতক্ষীরা শহরের উপকন্ঠে সাতক্ষীরা পৌরসভার পারকুখরালীতে অবস্থিত সাতক্ষীরা জেলার একমাত্র বক্ষব্যধি ক্লিনিক। চিকিৎসক ডাঃ সুব্রত গাইন ও মেডিকেল এসিসটেন্ট নাজনিন সুলতানার নিয়মিত অনুপস্থিত ও দীর্ঘ দিন এক্সরে ম্যাশিন নষ্ট থাকায় চরম ভ্যাবে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

বিভিন্ন উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনা এসে ঠিক মত ডাক্তার না পেয়ে প্রায় সময় ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। ফলে রোগীরা টাকা খরচ করে দূরদূরান্ত থেকে পরিবহন খরচ করে চিকিৎসা নিতে এসে ডাক্তার না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত চরম দূর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন শত শত রোগীরা।

সরেজমিনে গত ১৫ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরা পারকুখরালীর বাটকেখালীতে অবস্থিত বক্ষব্যধি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে বক্ষব্যধি ক্লিনিকে চিকিৎস্যক ডাঃ সুব্রত গাইন, মেডিকেল এসিসটেন্ট নাজনিন সুলতানা, ফার্মাসিস্ট নিভা মজুদার ও অফিস সহকারি বাপ্পাসহ মোট ১১জন কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যে অধিকাংশই অনুপস্থিত।

বর্হিবিভাগে রোগী দেখানোর জন্য টিকিট দিচ্ছেন স্টাফ সিবাজুল ইসলাম। এছাড়া ক্লিনিকে উপস্থিত ছিলেন সুপার আকলাক ও বৃষ্টি নামের অপর এক স্টাফ।

এসময় পুরো ক্লিনিক ঘুবে আর কারো দেখা মেলেনি। অথচ বক্ষব্যধি ক্লিনিকে চিকিৎস্যকের দায়িত্বে রয়েছেন ডাঃ সুব্রত গাইন, মেডিকেল এসিসটেন্ট নাজনিন সুলতানা, ফার্মসিস্ট নিভা মজুদার ও অফিস সহকারি বাপ্পাসহ অধিকাংশই অনুপস্থিত।

সাংবাদিকের উপস্থিতি জানতে পেরে উপস্থিত থাকা একজন স্টাফ মোবাইলে কয়েকজনের কাছে ফোন করেন। এর কিছুক্ষন পরে তড়িঘড়ি করে এক্সরে টেকনেশিয়ান শেখ নোমান, ফার্মাসিস্ট নিভা মজুদার ও হোম ভিজিটর জয়নাব ক্লিনিকে চলে আসেন।

এ সময় এক্সরে রুম বন্ধ থাকায় টেকনেশিয়ান শেখ নোমান জানান, তিন মাসের বেশি সময় ধরে এক্সরে মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সেটি মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই। ফলে চিকিৎসা সরঞ্জম সংকট ও নষ্ট হওয়ার কারনে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে সরকারি এই টিভি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।

বিক্ষব্যধি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা শহরের পলাশপোল এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি সকাল ৯ টার সময় এসে বর্হিবিভাগ থেকে টিকিট সংগ্রহ করে বেলা ১১ টা পর্যন্ত বসে আছেন। কিন্তু দুই ঘন্টা অপেক্ষা করেও তখন পর্যন্ত তিনি ডাক্তারের দেখা পাননি। তার মত আরো ২০/২৫ রোগী টিকিট সংগ্রহ করে ডাক্তাবের অপেক্ষায় বসে আছেন।

ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার পর ডাক্তার আসবেনা জানতে পেরে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা শহর থেকে আসা রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন।

প্রতক্ষ্যদর্শী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ডাঃ সুব্রত গাইন ও মেডিকেল এসিসটেন্ট নাজনিন সুলতানা প্রায়ই সময় ক্লিনিকে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের অনুপস্থিতির কারণে ক্লিনিকের অন্যান্য স্টাফরাও ঠিকমত তাদেও দায়িত্ব পালন না করে মাসের পর মাস বেতন ভাতা তুলে নিচ্ছেন। ফলে এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

হোম ভিজিটর জয়নাব বলেন, ক্লিনিকের বাউন্ডারির মধ্যে থাকা সব সরকারি গাছগাছালি দেখা শুনা করি। বাগানের আম, কাঁঠাল, নারিকেল ও ডাব, আমি নিজে থেকে লোক দিয়ে পাড়িয়ে ক্লিনিকের স্টাফদের দেয়। আর বাকি সব ফলফলাদি সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান অফিস সহকাী এ এস কে আশিক নেওয়াজের বাসায় পাঠায়।

এবিষয় জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান অফিস সহকারী আশেক নেওয়াজ জানান, অফিসার একজন ছুটিতে থাকলেও অন্তত্য একজ উপস্থিতি থাকা উচিত। বিষয়টি তিনি গুরুত দিয়ে সিভিল সার্জনকে জানাতে বলেন। তবে বক্ষব্যধি ক্লিনিকের ফলফলাদি ও ওষুধ তার বাসায় পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

বিষয়টি জানতে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ সুফিয়ান রুস্তমের সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি।এমনকি তার ব্যবহারিত মোবাইল ফোনে কল করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে