গত কয়েকদিনের প্রচন্ড তাপদাহে ময়মনসিংহে বেড়েই চলেছে সরকারী বেসরকারী হাসপাতালে রোগির চাপ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও সূর্যকান্ত হাসপাতালে রোগির চাপ বাড়ায় সেবা দিতে কিছু হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। মানুষকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি এই গরমে সুস্থ থাকতে তরল খাবারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ঠান্ডা, সর্দি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছেন ১২০জনের মতো শিশু। ৬০ শয্যার ওয়ার্ডে রোগি ভর্তি রয়েছে প্রায় চারশতাধিক। অপরদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত¡াবধানে পরিচালিত সূর্যকান্ত (এসকে) হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫জন রোগি চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। অতিরিক্ত রোগির চাপ বাড়ায় মেঝে ও বারান্দায় শুয়ে সেবা নিতে হচ্ছে রোগিদের। আর চিকিৎসকরা বলছেন, রোগির চাপ সামলিয়ে সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় গত শনিবার দুই বছরের শিশু তানিয়া তাসনিমকে নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন মুক্তাগাছার তাহের উদ্দিন ও আফরোজা আক্তার দম্পত্তি। তাদের উদ্দিন বলেন, অতিরিক্ত গরমের মধ্যে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে সেবা পেলেও অতিরিক্ত রোগির চাপের কারণে মেঝেতে শুয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। মেয়েটা দ্রæত সুস্থ হলেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।
সোমবার দুপুরে সূর্যকান্ত (এসকে) হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় বেশ কয়েকজন রোগি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সেবা নিচ্ছেন। এরমধ্যে কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম (৪০) ও রয়েছেন। তিনি বলেন, গত শনিবার থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। বাসায় স্যালাইন খেয়েছি; তবে সোমবার সকালে হঠাৎ করে শরীর বেশি খারাপ হওয়ায় দ্রæত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসকরা স্যালাইন দেওয়ায় এখন কিছুটা সুস্থ লাগছে।
সূর্যকান্ত (এসকে) হাসপাতালের ইনচার্জ ডা.প্রজ্ঞানন্দ নাথ বলেন, গরমে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা রোগির চাপ বেড়েছে। গত মার্চে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৬০৫ জন রোগি সেবা নিয়েছে; চলতে মাসে সেবা নিয়েছে ৬৫৫জন। তারমানে বলা যায় স্বাভাবিকের চেয়ে গরমে বেশি রোগি সেবা নিচ্ছেন। রোগির চাপ কিছুটা বেশি হলেও আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি; পর্যাপ্ত ওষুধও আমাদের রয়েছে। তবে গরমে মানুষকে চলাফেরায় আরেকটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, অতিরিক্ত গরমে শ্বাসকষ্ট, সর্দি, ঠান্ডা এবং নিউমোনিয়ায় সবচেয়ে বেশি শিশুরা আক্তান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন শতাধিকের ওপরে রোগি ভর্তি হচ্ছেন। ৬০ বেডের স্থলে ভর্তি রয়েছে ৩৭৪ রোগি। ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মেঝে এবং বারান্দায় সেবা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ও জনবল সংকট থাকা সত্বেও আমরা সাধ্য অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত করছি।
তিনি আরো বলেন, অভিভাবকের কাছে পরামর্শ থাকবে যেহেতু অতিরিক্ত গরম পড়েছে তাই বাচ্চাদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। শিশুদের তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি সারাক্ষণ সুরক্ষায় রাখতে হবে।
যাযাদি/এসএস