রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা

চুয়াডাঙ্গা সীমন্ত দিয়ে পালিয়েছেন মেম্বার

মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
  ০৬ মে ২০২৪, ১৮:৩৬
ছবি-যায়যায়দিন

ফরিদপুরের মধুখালীতে দুই ভাইকে হত্যার অন্যতম আসামী অজিত কুমার বিশ্বাস চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছে। এ মামলায় প্রধান আসামী ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন। প্রতিমায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় এখন পলাতক তিনিও। প্রযুক্তি জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও এ দুই আসামীকে ধরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, অজিত চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। দু’জনের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে বিমানবন্দর এবং সীমান্তে সতর্কতা জারি হলে সীমান্তের একটি চক্রের সহায়তায় দেশ ছাড়তে সক্ষম হন অজিত। যারা তাঁকে পালাতে সহযোগিতা করেছেন তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দারা। আসাদুজ্জামান ও অজিতকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন।

গত ১৮ এপ্রিল ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী এলাকায় কালীমন্দিরে আগুনের ঘটনায় সাত নির্মাণ শ্রমিককে আটক করে এলাকার লোকজন। তাদের তিনজন কৌশলে পালিয়ে গেলে বাকি চারজনকে বেদম পেটানো হয়। এতে আশরাফুল ও এরশাদুল নামে দু্ই ভাই মারা যান। এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৭ জনকে, যাদের মধ্যে ৬-৭ জন সরাসরি হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন– উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস, বিনয় সাহা, অমৃত কুমার বসু, মৃত্যুঞ্জয় কুমার সরকার ও সুকান্ত মণ্ডল। আর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন আরও চারজন।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রতিমায় আগুনের ঘটনায় পঞ্চপল্লী ও আশপাশের গ্রামের লোকজন নির্মাণ শ্রমিকদের দোষারোপ করে মারধর করেন। ওই শ্রমিকরা পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ করছিলেন। পুলিশের তদন্ত ও জবানবন্দিতে উঠে আসে– ইট, বেলচা, লোহার রড, স্টিলের পাইপ, বাঁশের লাঠি দিয়ে দুই ভাইকে মারধর করা হয়।

পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধোঁকা দেন স্থানীয় চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান। হামলা ঠেকাতে তিনি নানা ভূমিকা রেখেছেন বলে দাবি করেন। তবে পরদিন হামলায় তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে আসে। এরপর গা-ঢাকা দেন তিনি।

আর ঘটনার পরপরই এলাকা ছাড়েন মেম্বার অজিত। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয়, সুকান্ত মণ্ডল, প্রভাষ কুমার, উজ্জ্বল, সুফল, সুকুমার, রাজকুমার, সাধন, বিকাশ, সুজিত, মানিকসহ কয়েকজন মারধরে অংশ নেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের পিঠমোড়া করে বেঁধে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ও মেম্বার অজিত কুমার তখন সেখানে ছিলেন।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলেন, পলাতক অজিত কয়েকবার অবস্থান বদল করেছেন। নড়াইল ও রাজধানীর ভাটারাসহ কয়েকটি এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। পরে চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। আর চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মোবাইল ফোন বা এ ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র ছাড়াই গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারে একাধিক জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু ধরা যায়নি।

এদিকে, পুলিশ বলছে, কীভাবে প্রতিমায় আগুনের সূত্রপাত তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততারও প্রমাণ এখন পর্যন্ত মেলেনি। সন্দেহ থেকে তাদের পেটানো হয়েছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ ঘটনায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলার তদন্ত চলছে। যারা ঘটনায় জড়িত তারা কেউ ছাড় পাবেন না।’ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে এবং মেম্বারের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

যাযাদি/এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে