শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাহিত্য-সংস্কৃতির সফল অভিযাত্রী সন্‌জীদা খাতুন

মাসুদ মুস্তাফিজ
  ১২ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

জীবনার্থের মর্ম উপলব্ধি করতে সেই প্রতিভার সন্নিকট হতে মানসক্রিয়ায় যে বিশ্বাস ও আত্মলোপব্ধি সৃষ্টির তার নাম সন্‌জীদা খাতুন। সমাজ-সভ্যতার দ্বান্দ্বিক ক্রমবিকাশের চরম জটিলতর প্রবাহ জাতির সামনে নানা বিভ্রান্তি ও সংকটার্কীণ এমন প্রশ্নে শুদ্ধ মানবতার জননী সন্‌জীদা খাতুনের মতো মানুষের প্রয়োজন তথা চর্চা জরুরি। রবীন্দ্র অনুসারী জীবনবোধের মহাসম্মিলনচিত্ত যার অন্তরে বিরাজমান সেই সন্‌জীদা খাতুন মানবধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। তার সমগ্র হৃদমূলে রবীন্দ্রমানসের বিশ্বানুভূতি ও সমগ্রতাবোধে মানুষেরই জয়গান ঘোষিত হয়েছে নানা পরিপূর্ণতায় গভীর ঐকতানের প্রত্যয়ে। তাই আমরা বলতে পারি আজ সন্‌জীদা খাতুন বাংলা ও বাংলাদেশের শক্তির নাম।

বাংলাসাহিত্য তথা বাংলাদেশের সাহিত্যাকাশে সন্‌জীদা খাতুন (জন্ম: ১৯৩৩, ৪ এপ্রিল) এক অনন্য নক্ষত্র। বাঙালি সংস্কৃতির প্রগতিশীল বিকাশে আত্মনিবেদিত সন্‌জীদা খাতুন আমাদের সাংস্কৃতিক জগতে এক অনন্য মানুষ। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, শত বাধার মুখে রবীন্দ্র-শতবর্ষ উদ্‌যাপন, বটমূলে বর্ষবরণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনকে ঋদ্ধ করেছে আর সমৃদ্ধ করেছে বাঙালিত্বের দৃঢ় ভিত্তিস্থাপন যা চিরকাল অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনেও তার অবদান স্মরণীয় উজ্জ্বল। বাংলাদেশ বির্নিমানে দেখেছি এই মাতৃসম নেত্রীয় সাংস্কৃতিকের অগ্রণী ভূমিকা। সন্‌জীদা খাতুন একজন পথ প্রদর্শক-অনুসরক যার অবিচল নেত্রীত্ব এবং ঐকান্তিক সহযোগিতায় গড়ে ওঠে আজকের বাংলা সংস্কৃতির একমাত্র ধারক, সংগঠন-'ছায়ানট' ও 'জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ'। এ ছাড়া 'ব্রতচারী' আন্দোলন আর 'কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন' ও তার কর্মকুশলতায় সমুজ্জ্বল। নতুন প্রজন্মের আরেক শিশু-শিক্ষার উদ্ভাবনী কর্মতৎপরতায় যুক্ত হয়ে গড়ে তোলেন 'নালন্দা বিদ্যালয়'।

সন্‌জীদা খাতুন। অধ্যাপক-শিক্ষাগুরু, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক-সাহিত্যিক। প্রগতিশীল চিন্তক- আরো কতই না তার নাম, অজস্রভাবে যাকে ডাকা যায়- চেনা যায়। সেই বহুপ্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব সন্‌জীদা খাতুনের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, দিনাজপুর শাখার পাঁচ দিনব্যাপী রবীন্দ্রমেলায় দিনাজপুরে, সংগঠক-সাংস্কৃতিক নুরুল মতিন সৈকতের নেতৃত্বে। সে বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশতজন্মবার্ষিকী- এ উপলক্ষে জেলা পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, দিনাজপুর শাখা-প্রধান অতিথি হিসেবে আসেন সন্‌জীদা খাতুন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা রবীন্দ্রনাথের ওপর একটি স্মারকপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিলে আমার ওপর সম্পাদনার দায়িত্ব পড়ে। 'এবং রবীন্দ্রনাথ' 'নাক্ষত্রিক' কবি সুফিয়া কামাল সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সংখ্যা সম্পাদনায় ছিলেন ড. মাসুদুল হক, কবি নবনিতা রুমু সিদ্দিকাসহ আরো অনেকে। আমার সম্পাদনায় 'নাক্ষত্রিক' এ সংখ্যায় লিখেন- সন্‌জীদা খাতুন, সুলতানা কামাল, আবুল মোমেন, সিরাজ সালেকীনসহ অনেকে। সন্‌জীদা আপা 'এবং রবীন্দ্রনাথ' 'নাক্ষত্রিক' পড়ে আমাকে ফোন করেন এবং একপর্যায়ে তার সম্পাদনায় ছায়ানটের সাহিত্য-সংস্কৃতি ত্রৈমাসিক 'বাংলাদেশের হৃদয় হতে' কাগজে আমাকে লেখার আমন্ত্রণ করেন। আমার গদ্য-'মহাদেব সাহার কবিতা: বিষয় ও প্রবণতা' যথেষ্ঠ আন্তরিকার সঙ্গে ছাপান। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে ঠিকে আছি- সন্‌জীদা খাতুনকে পাঠ করছি আকুণ্ঠচিত্তে। বলতে গেলে আমার প্রিয়ভাজন নুরুল মতিন সৈকতের মাধ্যমেই তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে।

রবীন্দ্র গবেষক আমাদের অভিভাবক ৮৭ বছরে এখনো লেখনিতে সক্রিয় এবং তেজদ্বীপ্ত। চরম নিয়মানুবর্তিতায় শৃঙ্খলাব্ধ, সৃজনী ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বিরল কুশলতায় সমুজ্জ্বল। প্রায় শতাধিক গ্রন্থ রচনায় আমাদের করেছেন ঐশ্বর্যবান। এশিয়াটিক সোসাইটির অনারারি ফেলো সন্‌জীদা খাতুন রবীন্দ্রর্চচা ও বাঙালি সংস্কৃতি প্রসারে অবদানের জন্য পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র-পুরস্কার, বিশ্বভারতী প্রদত্ত 'দেশিকোত্তম'সহ ইত্যাদি সম্মাননা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।

বাংলাদেশের অন্যতম সাহিত্য জার্নাল 'বাংলাদেশের হৃদয় হতে' শিক্ষাবিদ ও কবি জিলস্নুর রহমানের নামকরণে; শামসুজ্জামান খান, সারওয়ার আলী এবং জামিল চৌধুরীরর সম্পাদনা পরিষদের সম্পাদক সন্‌জীদা খাতুন ছায়ানটের সাহিত্য-সংস্কৃতি ত্রৈমাসিক প্রকাশনা। এই জার্নালে লিখতে পেরে আমি ধন্য- এরপর নিয়মিত সন্‌জীদা খাতুনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ অব্যাহত আছে। আমাকে নানা পরার্মশ, উপদেশ এবং স্নেহ-মমতায় জড়িয়ে রেখেছেন ১০টি বছর। তাই রবীন্দ্রনাথের মতো তাকে আমি ধারণ করি এবং প্রাণের মর্মে তাকে উপলব্ধি করি। তার সৃষ্টি আমাকে অপার চেতনার শুদ্ধতায় নতুন করে বাঁচার প্রেরণা জোগায়। এখন সন্‌জীদা খাতুন আমার জীবনের দিশারী- চেতনার আলোকবর্তিকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<45035 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1