শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বেড়ানো

শীতেই দেখা মেলে পাথর রাজ্যের

একদিন সব পিছুটান ভুলে ছুটে যাই পাথরের রাজ্যে। ঢাকা থেকে প্রথমে যাই থানচি বাজার। থানচি বিজিবি ক্যাম্পে রিপোটর্ করার পর, মাঝি ট্রলার ভাসায় সাঙ্গুর জলে। যাব বড় পাথর। তবে আজকের রাতটা কাটাব তিন্দু...
মো. জাভেদ হাকিম
  ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

একদিন সব পিছুটান ভুলে ছুটে যাই পাথরের রাজ্যে। ঢাকা থেকে প্রথমে যাই থানচি বাজার। থানচি বিজিবি ক্যাম্পে রিপোটর্ করার পর, মাঝি ট্রলার ভাসায় সাঙ্গুর জলে। যাব বড় পাথর। তবে আজকের রাতটা কাটাবো তিন্দু। ভট ভট শব্দ তুলে ট্রলার চলছে। পানি কমে যাওয়ায় নদীর তলদেশ দেখা যায়। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই পেঁৗছাই প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র আধার তিন্দু।

আমি বারে বার আসি/ তিন্দুর বুকে/ তবুও তিন্দুর রূপ লাবণ্য/ আমার রয়ে যায় অদেখা। সত্যিই তিন্দুর প্রকৃতি এমনি যতবারই যাবেন না কেন এর প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র রহস্য ভেদ করা কখনোই সম্ভব নয়। সব কথার এক কথা বান্দরবান যদি বাংলার স্বগর্ হয় তাহলে সেই স্বগের্র রাজধানী হলো তিন্দু। ভাবছেন লিখতে গিয়ে বেশি বাড়িয়ে লিখছি, মোটেও না। এই শীতেই স্বচক্ষে দেখার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে যান মাত্র দুই দিনের জন্য। তখনই বুঝবেন, কি দেখেন নাই এতদিন এই সোনার দেশে জম্মীয়া। আমাদের ঠঁাই হয় কাঠ দিয়ে তৈরি তিন তলার কটেজে। কটেজ বলতে অন্য সব গতানুগতির কটেজের মতো নয় এক্কেবারে সোজা বাংলায় যাকে বলে মাদুর বিছানো চিৎকাইত বেডিং। তবে মজা অন্য জায়গায়- গ্রিলছাড়া ছোট কাঠের জানালা দিয়ে হাত বাড়ালেই কুয়াশা ছুঁয়ে যাবে হাতের নরম তালু। কখনো কখনো ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়বে সব। কখনো বা আবার জোছনার আলোয় অনেক দূরের পাহাড়টাও চোখে ধরা দেবে। আপনারা ভাবতে থাকুন। আর এই ফঁাকে দে-ছুটের দামালরা আধো জোছনার আলোয় হিমেল হাওয়ার দোলে পাথুরে সাঙ্গুর উষ্ণ পানিতে গোসল সেরে নেই মন ভরে। ও হ্যঁা বলে রাখা ভালো, গরমে যেমনি নদীর পানি ঠাÐা ঠিক তেমনি শীতেও থাকে উষ্ণ। শুধু একবার ঝপাস করে ডুব দিলেই হলো। তখন আর উঠতে মন চাইবে না। আমাদেরও তেমনটিই লেগেছিল। নদীতে নামার পর মন চাইছিল না যে উঠি তবু উঠি, সেই সুযোগে থানচি থেকে আনা মুরগি, নৌকার মাঝি হোসেন রান্না করে রেখেছে রেডি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ঘরে বৈঠা ভাত, আলুভতার্, ডিমসহ হোসেনের করা মোরগ ভুনা আহ্ খেতে কি স্বাদই না ছিল। এবার চলুন পাড়াটা ঘুরে দেখি, পাড়ার নাম তিন্দু। মোট ৬৪টি আদিবাসী বিভিন্ন সম্প্রদায় পরিবারের বসবাস। মারমা ও ত্রিপুরা পরিবার বেশি, মাত্র একটি পরিবার হলো খুশি। এবার যাই ঘুমাই। দুই রুম বুকিং থাকলেও এক রুমেই গাদাগাদি।

এর পরও ঘুমানোর চেষ্টা করি। উঠতে হবে ফজরের সময়। মরিচ পোড়া ঘুম দিয়ে ফজর নামাজ পড়েই উঠি গিয়া পাহাড় চ‚ড়ায়। কুয়াশা ভেদ করা অসম্ভব ভালোলাগা সূযোর্দয়ের সুখ স্মৃতি নিয়ে এবার ছুটি বড় পাথর। বিশ্বাস করুন তিন্দুর বড় পাথর আর বাঘিসং যদি কেউ না দেখেন তাহলে এ ভুবনে জম্মানোটাই যেন তার বিফল। তিন্দুপাড়া থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই নৌযোগে যাওয়া যাবে। সেখানে গেলে দেখবেন পাথর আর পাথরÑ হরেক সাইজের পাথর ওর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে পাথরটা ওটাকে রাজা পাথর হিসেবে সবাই চেনে। উপজাতিরা সেখানে পুজো করে বলি দিয়ে থাকে। তাদের জন্য তীথর্র্স্থান, আমরা তাই করি সম্মান। নানান আকৃতির পাথরের ফঁাক গলে নৌকা এগিয়ে চলে। এরকম পাথরের রাজ্য শুধু শীতেই দেখা যায়। কিছুদূর গিয়েই বাঘিসংয়ে থেমে মেতে উঠি উল্লাসে। দুই পাশে পাহাড় উঁচু হয়ে যেন দিগন্ত ছুঁয়েছে। পাহাড়ের গায়ে জন্মানো গাছগুলো দেখে মনের মধ্যে ভিন্ন রকমের অনুভ‚তির দোলা দেয়। আর পায়ের নিচে পাথুরে চিক চিক সাদা বালির লুটোপুুটি, হাত বাড়ালেই শঙ্খের পানি সব কিছু মিলিয়ে এপাশটায় ভর করেছে প্রকৃতির উজাড় করে দেয়া সব রূপে তেলেসমাতিÑ কি বিশ্বাস হয় না? ঠিক আছে তাহলে দুদিনের সময় নিয়ে গিয়েই দেখে আসুন না কি দেখেন নাই এতটা বয়স পার হওয়ার পরেও।

যাবেন কীভাবে?- ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস চলে চকরিয়া। ভাড়া মাত্র ৮০০ টাকা। চকরিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে চান্দের গাড়িতে থানচি বাজার। থানা ও বিজিবি ক্যাম্পে রিপোটর্ করে ট্রলারে করে তিন্দু।

খাবেন কি থাকবেন কোথায় : উপজাতিদের দোকান- বসত রয়েছে। মাথাপিছু নামমাত্র টাকার বিনিময়ে খেতে ও থাকতে পারবেন। স্পেশাল খাবার খেতে চাইলে থানচি থেকে নিয়ে আসতে হবে।

ভ্রমণ তথ্য : যদি ডিম পাহাড় আর দেশের দ্বিতীয় উঁচুতম সড়ক দেখার ইচ্ছে না থাকে তাহলে ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান। সেখান থেকে বাসে/জিপে থানচি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<29568 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1