শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জয়া আহসান কলকাতার 'বক্স অফিস কুইন'

'গস্ন্যামার আছে, অভিনয়ও জানেন- এমন অভিনেত্রীর জায়গাটা টালিগঞ্জে এখন ফাঁকা পড়ে আছে। সুচিত্রা, সুপ্রিয়া, সাবিত্রীর পরে দেবশ্রী, শতাব্দীর এখন ছবি নেই। ঋতুপর্ণা এত ছবি করে যে, তার ভালো কাজগুলো ভিড়ে হারিয়ে যায়। শুভশ্রী চেষ্টা করছেন গস্ন্যামারের সঙ্গে অভিনয় মেশানোর। তবে জয়াই এখন মেধা আর গস্ন্যামার সমন্বয়ে বুদ্ধি দিয়ে কাজ করছেন। অভিনয় দক্ষতার পাশাপাশি তার প্রতিভা ও সৌন্দর্যের বুনোটও দর্শকদের মুগ্ধ করছে। এ কারণেই জয়া সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। পাশাপাশি ওপার বাংলার চলচ্চিত্রে নির্ভরযোগ্য এক অভিনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন।' জয়া আহসানকে নিয়ে এ রকম অসংখ্য মন্তব্য করেছেন টালিগঞ্জের খ্যাতিমান নির্মাতা ও তারকারা।
জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

দুই বাংলার আলোকিত অভিনেত্রী জয়া আহসান। টেলিভিশনের গন্ডি পেরিয়ে গত কয়েকবছর ধরেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তার। তবে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের চেয়ে কলকাতার চলচ্চিত্রেই বেশি দু্যতি ছড়াচ্ছেন তিনি। যে ছবি মুক্তি পাচ্ছে, সেই ছবি থেকেই সাফল্য ছিনিয়ে আনছেন এ তারকা। সময়ের সঙ্গে ক্রমশ যেন কলকাতার চলচ্চিত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছেন তিনি। এরই মধ্যে তাকে 'বক্স অফিস কুইন' বলেও আখ্যা দিয়েছেন সেখানকার নির্মাতা ও চলচ্চিত্রবোদ্ধারা। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, জয়া যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। অসাধারণ এবং ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য শুরুতই জয়া আহসানের কথা ভাবেন কলকাতার খ্যাতিমান নির্মাতারা। যার দরুন কলকাতার প্রথম সারির নায়িকাদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন জয়া। শুধু তাই নয়, জয়ার সিনেমা দিয়েই যাত্রা শুরু চলতি বছরে ওপার বাংলার ছবি মুক্তির প্রক্রিয়া। বছরটি শেষও হচ্ছে জয়া আহসানের ছবির মাধ্যমেই। এটাকে বেশ বড় একটা সাফল্য বলেই মনে করছেন জয়া আহসান।

২০১৯ সালের প্রথম সপ্তাহে (৪ জানুয়ারি) কলকাতায় মুক্তি পায় জয়া আহসান অভিনীত 'বিজয়া' ছবি। বছরটি শেষও হচ্ছে জয়ার ছবি দিয়েই। আগামী ২৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে তার অভিনীত 'রবিবার'। ছবির গল্প, চরিত্র, লোকেশন- সবমিলিয়ে ছবিটি ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ছবি বলে মন্তব্য করেছেন জয়া। এ ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আরেক আলোকিত তারকা প্রসেনজিৎ চট্টপাধ্যায়। এরই মধ্যে ছবিটিকে ঘিরে ব্যাপক কৌতূহল ও আগ্রহ তৈরি হচ্ছে দর্শক ও সিনেমাপ্রেমীদের মনে। পাশাপাশি জয়াকে নিয়েও বেশ আলোচনা হচ্ছে সিনেমাবোদ্ধা ও সমালোচকদের মাঝে। অনেক তারকারাও জয়ার যারপরনাই প্রশংসা করছেন।

শুধু চলতি বছরই নয়, এরই মধ্যে জয়া সাজিয়ে নিয়েছেন পরের বছরের বাছাই করা ছবির লম্বা তালিকা। নতুন বছরেই আসছে অতনু ঘোষের 'বিনি সুতো'। এ ছবির মাধ্যমেই এই প্রথম ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করলেন তিনি। অন্যদিকে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট পরিচালকের 'অর্ধাঙ্গিনী'তে একেবারে ভিন্ন মেজাজে দেখা যাবে জয়াকে। তারপরই ভূতের ছবিতে অভিনয় ক্যামেরাবন্দি করেছেন সৌকর্য ঘোষাল। জয়া সেখানে 'ভূতপরি'। আর সে ছবি উপস্থাপন করছেন স্বয়ং কোয়েল মলিস্নক। জয়াকে নিয়ে কোয়েল মলিস্নক বলেছেন, 'জয়ার অভিনয়ের জায়গাটা খুব শক্তিশালী।' আবার পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, 'জয়া ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছেন দেরিতে। ধন্যবাদ অরিন্দম শীলকে যিনি জয়াকে খুঁজে বের করেছিলেন। 'আবর্ত'য় কাজ করতে গিয়ে ওকে আলাদা মনে হয়েছিল। সৌন্দর্যের সঙ্গে একটা ডিগনিটি মানুষ খোঁজে, সেটা পরিণত বয়সেই সম্পূর্ণতা পায়। জয়ার মধ্যে সেটাই আছে। সৃজিত ওকে দিয়ে চমৎকার কাজ করিয়েছে। শিবুও। অতনুও করাচ্ছে। ম্যাচিওর অভিনেত্রী হওয়ার জন্য ওকে নিয়ে নিশ্চয়ই আরও চরিত্র লেখা হবে।'

পরিচালক অরিন্দম শীল বলেছেন, 'সময় পাল্টাচ্ছে। বাংলা ছবির গল্পের সঙ্গে চরিত্রও বদল হচ্ছে। দর্শক সাবলীল লুক খুঁজছে, যা জয়ার মধ্যে আছে। কমবয়সী অভিনেত্রীর চেয়ে পরিণত লুক দর্শককে টানছে যার ওপর ভরসা জন্মায়। ফিনফিনে শিফন আর সমুদ্রপাড়ের কিশোরীর নাচ- এই ফ্রেমে বাংলার দর্শক আর কোনো কারিশমা দেখতে পায় না। বাংলা ছবিতে যুবক-যুবতীকে নিয়ে শুধু প্রেমের গল্পের দিনও শেষ। গল্প যত বাস্তবধর্মী হচ্ছে দর্শক ততই পরিণত মুখ খুঁজছে। জয়া সেই পরিণত ও নির্ভরযোগ্য মুখ।' জয়াকে বিশ্লেষণ করে কলকাতার আরেক খ্যাতিমান পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, 'চরিত্রর চেয়েও আমার মনে হয়, যেভাবে স্ক্রিপ্ট বেছে বেছে ছবি করে জয়া- তাতে ও অনেককে পেরিয়ে যাচ্ছে। ওর নানা রকম লুক। যে কোনো চরিত্র অ্যাডপ্ট করে ফেলতে পারে সহজে। দুই বাংলার সংলাপও অসম্ভব ভালো বলতে পারে।'

পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, 'জয়া যে সময়ে দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে তার প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত বুঝে নেওয়া। তিনি কোনো দলে নেই। রাজনীতি বা গসিপে নেই। কাজের ফাঁকে কোনো দিন কারও সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য শুনিনি ওর থেকে। কাজ ছাড়া তিনি কিছুতে নেই। কৌশিকদার সঙ্গেও যেমন ভালো সম্পর্ক, আমার সঙ্গেও তেমন। অতনুদার সঙ্গেও তেমন। বাংলাদেশে চারবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া শিল্পী! কনটেন্ট যেখানে বাংলা ছবিকে চালাচ্ছে সেই সময়ে জয়ার মতো চরিত্রনির্ভর অভিনেত্রীই উঠে আসবেন। ফলে সব পরিচালকই চাইবেন ওর সঙ্গে কাজ করতে।' আরেক পরিচালক অতনু ঘোষ জানালেন, 'বাংলা ছবির নতুন ধারা, প্রথা ভেঙে তাৎ?ক্ষণিক প্রতিক্রিয়াকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। জয়া প্রথার বাইরে গিয়ে অভিজ্ঞতা দিয়ে অভিনয় করেন। এই অভিজ্ঞতা কুড়ি বছরের মেয়ের কাছে নেই, ফলে তার প্রতিক্রিয়া একপেশে। জয়ার ক্ষেত্রে তা একেবারেই গতানুগতিক নয়। আমার দুটো গল্পের মধ্যেই একাধিক চরিত্র করেছে ও। প্রতিটা চরিত্র অনায়াসে আলাদা করে ফেলতে পারে জয়া। কোথাও সারল্য দরকার কোথাও কুটিলতা- দুটোর মধ্যেই ও মনটাকে বসাতে পারে।'

'রাজকাহিনী'তে জয়ার বিপরীতে থাকা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, সাবলীল আবেদনই এখন সবচেয়ে চর্চিত। সেই পরিণত চেহারার যে সম্মোহন তাতে মজেছে বাঙালি দর্শক। জয়ার পরিণত আবেদন তার ইউএসপি। তার সহকর্মী অভিনেত্রীদের প্রতিযোগী হয়ে উঠছেন তিনি। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক-প্রযোজকদেরও কৃতিত্ব, তারা জয়াকে নানা রকম চরিত্রে কাজ দিচ্ছেন আর তিনি তা যত্ন সহকারে ডেলিভারি করছেন।'

শুধু ইন্ডাস্ট্রি নয়, ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুকে জয়া এগিয়ে। ইনস্টাগ্রামে তার ফলোয়ার বারো লাখ। ঋতুপর্ণার এক লাখ আটানব্বই হাজার। পাওলির পাঁচ লাখ আট হাজার। স্বস্তিকার সাত লাখ সাত হাজার। তবে নিজেকে সবসময়ই খুব সাদামাটা এবং সাধারণ বলেই মনে করেনে জয়া। অনেকটা বিনয়ের সঙ্গে জয়া বলেন, আমি কোনো প্রতিযোগিতায় নামতে চাই না। কারো সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমি চাইলে অনেক ছবিই করতে পারতাম। কিন্তু আমি সবসময়ই ধীরে চলার পক্ষে। আগামীর পথও এভাবেই আস্তে-ধীরে এগিয়ে যেতে চাই।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<80419 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1