শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী

পরীক্ষার আগে অনৈতিক পথের খেঁাজ করবেন না

নতুনধারা
  ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি Ñযাযাদি

যাযাদি ডেস্ক শিক্ষার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় কাজ করছেন উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘আগামী ২ ফেব্রæয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। সেটি আমাদের সবার জন্যই কিন্তু পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় সবাই যেন ভালোভাবে উত্তীণর্ হতে পারি। প্রশ্নফঁাসমুক্ত, নকলমুক্ত সুষ্ঠু, সুন্দর পরীক্ষা যেন হয়।’ অভিভাবক ও পরীক্ষাথীের্দর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার আগে আপনারা কোনো ধরনের অনৈতিক পথের খেঁাজে নামবেন না। পরীক্ষাথীর্রা সঠিকভাবে পড়াশোনা করবে, ঠিকভাবে পরীক্ষা দেবে, ভালো ফলাফল করবে। সেটিই আমরা চাই। অনৈতিকতার পথে হেঁটে কখনো ভালো ফল পাওয়া যায় না। আমরা চেষ্টা করব কোনোভাবেই যেন কোনো দুবৃর্ত্ত এ প্রক্রিয়ায় এটিকে নষ্ট করবার কোনো অপচেষ্টা চালাতে না পারে। একইভাবে যদি প্রশ্নপত্র পাওয়ার ব্যাপারে অভিভাবক ও পরীক্ষাথীের্দর একাংশেরও বিশাল আগ্রহ না থাকে, চেষ্টা না থাকে পাবার তবে অপকমির্ট যারা করে তাদের সেই চেষ্টা থাকবে না। কারণ তারা লাভবান হতে পারবে না। কাজেই করণীয় আছে সকলেরই। সবাই মিলে এ প্রক্রিয়াটি সুন্দর, সফল ও ত্রæটিমুক্ত করতে চাই।’ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ৪৮তম শীতকালীন জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতা উপলক্ষে শিক্ষাথীের্দর উপস্থিতিতে স্টেডিয়ামের গ্যালারিগুলো কানায় কানায় ভরে যায়। ‘আমরা দুরন্ত দুবার্র’ থিম সং, মুহুমুর্হু করতালি, বেলুন, বণির্ল সাজ, বাদক দলের অনবদ্য পরিবেশনা আর সারা দেশের মেধাবীদের উচ্ছ¡াসে প্রতিযোগিতার আসর পরিণত হয় উৎসবে। ১০টা ৩৫ মিনিটে প্রধান অতিথি বেলুন-ফেস্টুন, পায়রা উড়িয়ে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। এবার মশাল প্রজ্বলন করেন দৌড়বিদ সরওয়ারুল আলম সোহেল ও দৌড়বিদ রেশমী তঞ্চ্যঙ্গা। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার মূল কথা শিশুর অফুরন্ত সম্ভাবনা তুলে ধরা। সবাই মিলে চেষ্টা করব আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে। তারা যেন উদ্যমী হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় ভাবি ক্লাসে কী করে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হবো। সেটি নিশ্চয় জরুরি। ভালো করা নিশ্চয় জরুরি। জিপিএ-৫ পাওয়া জরুরি। কিন্তু সেটিই একমাত্র বিষয় হতে পারে না। আমি ভালো মানুষ হলাম কি না। আমার মধ্যে মানবিকতাবোধ, আমার মধ্যে নৈতিকতা সেগুলো ঠিকমতো আছে কি না। আমি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠলাম কি না। সুস্থ, সুন্দর মন নিয়ে বড় হচ্ছি কি না সেটি কিন্তু জরুরি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ করতে হলে আমাদের সুনাগরিক লাগবে, সোনার মানুষ লাগবে। এর জন্য শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া একমাত্র পথ হতে পারে না। তার সঙ্গে সুস্থ মানুষ চাই। যে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বস্ত হবে; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হবে; দেশ, পরিবেশ ও মানুষের অধিকার সম্পকের্ সচেতন হবে তেমন মানুষ গড়ে তুলতে চাই।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘‘তোমরা যারা আমার বাম পাশে জাতির জনকের বিশাল ছবিটি দেখছ, আমরা যখন তোমাদের বয়সী ছিলাম তখন এ ছবি দেখতে দেয়নি। আমাদের জাতির জনক সম্পকের্ জানতে দেয়া হয়নি। তোমাদের বয়সী রাসেলসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা ¯েøাগান দিতাম, ‘আমরা সবাই রাসেল হবো, রাসেল হত্যার বদলা নেবো।’ তোমাদের দেশের ইতিহাস, জাতির জনক সম্পকের্ জানতে হবে। আমরা শিক্ষা, ক্রীড়ায় এগিয়ে যাব। কিন্তু ইতিহাসও জানতে হবে। খেলাধুলা মানসিক বিকাশ করে। শরীর ভালো থাকলে মন ভালো থাকে। মন ভালো থাকলে পড়াশোনা ভালো হয়। বিকাল হলে খেলাধুলায় মেতে উঠবে। খেলার সঙ্গে শিক্ষার সম্পকর্ আছে বলেই রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন গড়ে তুলেছিলেন।’’ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোডের্র চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। প্রধানমন্ত্রী দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে কাজ করছেন। ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত হবে। শিক্ষাথীর্রা আগামীতে নেতৃত্ব দেবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যাতে তারা বড় হয় সেই প্রয়াসের অংশ এ প্রতিযোগিতা। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষাথীের্দর প্রশ্নফঁাস, গুজবসহ অভিভাবকদের অসাধু পন্থা থেকে দূরে রাখার আহŸান জানান তিনি। ঢাকা শিক্ষা বোডের্র চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, প্রকৃতির অপূবর্ উপহার চট্টগ্রাম। দেশের অথর্নীতির চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। দেশের মেধাবীরা চট্টগ্রাম থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, প্রেরণা পাবে। বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেন, বীর চট্টলার মানুষ ক্রীড়া, সাহিত্য-সংস্কৃতি, আন্দোলন-সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। বঙ্গবন্ধুর কাছে থেকে চট্টগ্রামের নেতারা দেশের জন্য ভূমিকা রেখেছেন। মাস্টারদা সূযর্ সেন, প্রীতিলতা, এমএ আজিজ, এমএ হান্নানসহ অনেক নেতার স্মৃতিধন্য এ চট্টগ্রামে ৪৮তম শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ভেন্যু নিবার্চন করায় শিক্ষাথীর্রা উদ্দীপ্ত হবে। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, নগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার কুসুম দেওয়ান, রাজশাহীর প্রফেসর মো. আবুল কালাম আজাদ, যশোরের প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল আলীম, বরিশালের প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস, মাদ্রাসা শিক্ষা বোডের্র একেএম ছায়েফ উল্যা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন ড. অরুণা বিশ্বাস, রওনক মাহমুদ, সালমা জাহান, শহীদুল ইসলাম চৌধুরী, শামসুল হুদা, মোজাম্মেল হোসেন খান প্রমুখ। ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সীমা হোড়ের পরিচালনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে ছাত্রীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে