শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অভিবাসন: ফের পিছু হটেছে যুক্তরাষ্ট্র

জ্জ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কাযর্ক্রম চালানো সাময়িক বন্ধ জ্জ ট্রাম্প প্রশাসনের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বলবৎ থাকবে
যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ জুন ২০১৮, ০০:০০

অভিবাসনের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি থেকে আবারও পিছু হটেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কাযর্ক্রম চালানো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত প্রতিরক্ষাপ্রধান সোমবার জানিয়েছেন, যারা শিশু নিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছেন, তিনি তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কাযর্ক্রম চালানো সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি

শুল্ক ও সীমান্ত প্রতিরক্ষা (সিবিপি) কমিশনার কেভিন ম্যাকয়ালিনান টেক্সাসে সাংবাদিকদের বলেন, গত সপ্তাহে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কাযর্ক্রম চালানো বাতিল করা হয়। তিনি জানান, অভিবাসী পরিবার থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্নকরণ বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত সপ্তাহের নিদেের্শর পর এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে ম্যাকয়ালিনান জানান, অভিবাসন ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতি এখনো বলবৎ আছে।

ট্রাম্প অভিবাসী পরিবারকে তাদের শিশুসহ আটক করে রাখার কথা বলেছিলেন। রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট জনগণের অব্যাহত চাপের মুখে গত বুধবার অভিবাসী পরিবার থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্নকরণ বন্ধে তাদের একসঙ্গে আটক রাখতে এক নিবার্হী আদেশ জারি করেন। বুধবারের ওই আদেশে পরিবারগুলোকে একসঙ্গে রাখার কথা বলা হলেও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নিধাির্রত আটক কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের প্রবেশাধিকার না থাকায় সিবিপির সদস্যরা অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে বিপাকেই পড়েছেন। যে কারণে শিশুসহ প্রবেশ করা অবৈধ অভিবাসীদের আটক না করে তাদের হাতে আদালতের একটি সমন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

মাকির্ন কমর্কতার্রা যদি অভিবাসী শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না চান, তাহলে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা বাবা-মাদের বিচারের মুখোমুখি করা যাবে না বলেও মন্তব্য সিবিপিপ্রধানের। তিনি বলেন, ‘সন্তানদের বিচ্ছিন্ন করা ছাড়াই অভিবাসীদের বিচারের মুখোমুখি করার উপায় বের করতে হবে সিবিপি ও মাকির্ন বিচার বিভাগকে।’

সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অভিবাসীদের তাদের সন্তানদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিচারের মুখোমুখি করতে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রস্তাবায়ন শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। অভিবাসীর ঢল ঠেকাতে ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপটির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রায়ই মন্তব্য করেছেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডাসর্ সোমবার বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা কাগজপত্রহীন পরিবারগুলোকে একসঙ্গে রাখার জায়গাই নেই। আমরা নীতি বদলাচ্ছি না, কেবল সম্পদের ঘাটতির কথা বলছি।’

কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের টেক্সাসের দুটি সামরিক ঘঁাটিতে অস্থায়ীভাবে রাখার খবর নিশ্চিত করেছে পেন্টাগনও। ফোটর্ বিøস ও গুডফেলোর বিমানঘঁাটিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করা পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে রাখা হচ্ছে কি না, তা জানাতে পারেননি মাকির্ন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। ঘঁাটিগুলোর একটিতে পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে রাখা হচ্ছে; বাবা-মা কিংবা পরিবারের কোনো সদস্য ছাড়াই যেসব শিশু যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে, তাদের অন্য ঘঁাটিতে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মাকির্ন গণমাধ্যমগুলো।

এদিকে, ‘আমেরিকান সিভিল লিবাটির্জ ইউনিয়ন’ (এসিএলইউ) অবৈধ অভিবাসীদের কাছ থেকে সন্তানদের আলাদা করার প্রক্রিয়ায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ক্যালিফোনির্য়ার সান ডিয়েগো আদালতে আবেদন করেছে সোমবার। আদালতে করা আবেদনে এসিএলইউ অসংখ্য অভিবাসীর উল্লেখ করেছে, সীমান্তে বিচ্ছিন্ন করার পর থেকে যারা সন্তানদের খেঁাজ কিংবা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। অভিবাসী শিশুদের তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নে ট্রাম্পের আদেশে ‘ফঁাক’ আছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

আদালতে জমা দেয়া কাগজপত্রে ই জে ও ই আদ্যক্ষরের এক নারীর কথাও বলা হয়েছে, সন্তানের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পর কতৃর্পক্ষ যাকে বলেছিলÑ কেবল শরণাথীর্ হওয়ার আবেদন করলেই আট বছর বয়সী ছেলের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার সুযোগ মিলবে। কিন্তু পরে সন্তানকে ছাড়াই তাকে ফেরত পাঠানো হয় বলে দাবি ওই নারীর।

এখনো পরিবার-বিচ্ছিন্ন ২০৫৩ শিশু

অভিবাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আওতায় এখনো পরিবার-বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে দুই হাজার ৫৩ শিশু। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পরিবার বিচ্ছিন্নের নীতি বন্ধ করার তিন দিন পর প্রকাশিত একটি তথ্যবিবরণী পত্রের হিসাবমতে, আটকে রাখা মোট ৫২২ শিশুকে তাদের পরিবারের কাছে দেয়া হয়েছে। শিশুদের পরিবার-বিচ্ছিন্ন করে খঁাচায় রাখার ছবি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে তুমুল শোরগোল ওঠার পর ট্রাম্প তার নীতি বদলান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে