শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

ক্যান্সার ও হোমিও চিকিৎসা

ডা. প্রকাশ মল্লিক সভাপতি ওয়াল্ডর্ ফেডারেশন অব হোমিওপ্যাথি
  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্যান্সার শব্দটি ল্যাটিন ‘ক্যানক্রাম’ থেকে এসেছে, ক্যানক্রাম শব্দের অথর্ হলো কঁাকড়া, সে যেমন হাত পা চারদিকে বিছিয়ে থাকে ঠিক তেমনি ক্যান্সার নামের রোগটি যে জায়গায় শুরু হয় তার চারপাশেই শুধু নয়, তার উৎপত্তির জায়গা থেকে বহুদূরে ছড়িয়ে পড়ে। সে জন্যই এ রোগটিকে ক্যান্সার বলে।

রোগটা কী ধরনের?

আমাদের শরীরটাকে একটা বাড়ির সঙ্গে তুলনা করতে পারি। বাড়িটার কাঠামোর কথা যদি চিন্তা করি তাহলে দেখি যে কতকগুলো ঘরের সমাহার। আবার ঘরগুলো কতকগুলো দেয়ালের সমষ্টি। কিন্তু এ একটি দেয়াল তৈরি হয়েছে অনেক ইটের গঁাথুনির মাধ্যমে। এই শরীরটার একটা অদ্ভুত সামঞ্জস্য রয়েছে ওই বাড়ির সঙ্গে। আমাদের শরীরটা তৈরি হয়েছে বেশ কতকগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে। অঙ্গগুলো তৈরি হয়েছে আবার বেশ কিছু দেহকলা নিয়ে। আর দেহকলা তো আসলে অসংখ্য কোষের সমষ্টি। আমরা যখন জন্মগ্রহণ করি তখন ওজন থাকে প্রায় পঁাচ পাউন্ড, উচ্চতায় আমরা প্রায় ফুট দেড়েক। কিন্তু যখন পরিণত বয়সে উপনীত হই তখন দেহের ওজন প্রায় শত পাউন্ড। উচ্চতা সাড়ে পঁাচ থেকে ছয় ফুট। এটা কি করে সম্ভব হলো? সম্ভব হয়েছে দেহের কোষগুলোর বৃদ্ধি ঘটার কারণে। কখনও তারা বাড়ে সংখ্যায় কখনও আকারে। ফলে নবজাতক শিশুর আট দশ ইঞ্চি পা এক সময়ে তিন চার ফুট হয়ে দঁাড়ায়। কিন্তু এই কোষ বৃদ্ধির ওপর শরীরের পূণর্ নিয়ন্ত্রণ থাকে। শরীরের স্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ওপর যদি নিয়ন্ত্রণ না থাকত তাহলে তো আমরা দানবের চাইতেও বড় হয়ে যেতাম । কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। আসলে শরীরের কোষগুলো যখন নিয়ন্ত্রণ বিহীনভাবে বাড়তে থাকে এবং শরীরের কোনো কাজেই আসে না, সেই কোষগুলোর সমষ্টিকে আমরা বলি টিউমার। টিউমারের ভিতরের কোষগুলোর চেহারা কখনও স্বাভাবিক কোষগুলোর মত হতে পারে এবং চরিত্রের দিক থেকেও এই কোষগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নাও হতে পারে। এ ধরনের কোষ সমষ্টিকে আমরা বলি বিনাইন টিউমার। আর যখন ওই টিউমার কোষগুলোর চেহারা শরীরের স্বাভাবিক কোষগুলো থেকে ভিন্ন ধরনের হয় এবং কাজের দিক থেকেও এরা অস্বাভাবিক এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হয় তখন আমরা তাকে বলি মেলিগন্যান্ট টিউমার যার সাধারণ নাম ক্যান্সার।

ক্যান্সার কেন হয়?

শতকরা ৯০ ভাগ ক্যান্সারের জন্য দায়ী আমাদের পরিবেশ আর আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা পদ্ধতি। আজ একথা প্রমাণিত যে দেহের সমস্ত ক্যান্সারের প্রায় ত্রিশ ভাগের জন্য দায়ী তামাক কিংবা ধূমপান। মদ্যপানের সঙ্গে মুখের ক্যান্সার, গলবিলের ক্যান্সার জড়িত। তাছাড়া মদ্যপানের ফলে এক সময় লিভারের ক্যান্সারও হতে পারে। আজকাল কেউ কেউ মনে করেন অল্পসল্প মদ্যপানে তো কোন ক্ষতি নেই। গবেষণার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে অল্পই হোক আর বেশিই হোক মদ্যপান শরীরের কোনো না কোনো ক্ষতি করবেই। আর এক নেশার নাম পান। পানের সঙ্গে চুন মেশানো হয়। অনেক সময় সুগন্ধি জদার্ও। এই চুন এবং জদার্র সংমিশ্রণে পান পাতা চিবানোর ফলে মুখে এক ধরনের ক্ষয়ের সৃষ্টি হয়। সেই ঘা সহজে সারতে চায় না। এভাবে কণ্ঠনালির ক্যান্সার আত্মপ্রকাশ করে, সমীক্ষায় দেখা গেছে স্রেফ পান খেয়ে ভারতে ৩৫ শতাংশ মানুষ নানান ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এ ছাড়াও মুখের স্বাস্থ্য নষ্ট হয় দঁাত অকালে পড়ে যায়। পানের সঙ্গে থাকে আর একটি জিনিস সেটি হলো সুপারি, এতে রয়েছে ‘অ্যারাকোলিন’ নামে একটি উপাদান। এটিও কোষের ক্ষতি করে। সুপারিতে থাকা ট্যানিক এসিড কোষের মধ্যস্থ জিনকে প্রভাবিত করে ফলে শারীরিক বিকৃতি ও জটিল রোগ দেখা দেয়। বেশির ভাগ সুপারি আবার ‘অ্যাফালটপ্রিন’ নামে এক জাতীয় ছত্রাক আক্রান্ত। এ ধরনের সুপারি লিভারের ক্যান্সারে অগ্রণী ভূমিকা নেয়। বাজারে বিক্রীত অধিকাংশ মিষ্টি সুপারি এই বিষাক্ত ছত্রাকে আক্রান্ত বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। পানে দেয়া খয়ের, খয়েরের প্রধান উপাদান ট্যানিন থেকে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত।

মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ু, মুখের ক্যান্সার আর স্তনের ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। জরায়ু মুখের ক্যান্সারের জন্য খুব কম বয়সে বিয়ে, অনেক সন্তান প্রসব, যৌনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা না করা আর একাধিক পুরুষের সঙ্গে দেহ মিলনই দায়ী। আর স্তনের ক্যান্সারের জন্য একটি কারণ শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো। প্রাণিজ আমিষ ও প্রাণিজ তেল জাতীয় খাদ্য বেশি গ্রহণ এবং পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম না করাই অনেকাংশে দায়ী। লিভারের ক্যান্সারের জন্য মদ্যপান তো বটেই তার সঙ্গে জন্ডিসের একটি ভাইরাস রেপাটাইটি বিও দায়ী। ক্যান্সারের মধ্যে বøাড ক্যান্সার আর একটি জটিল রোগ। বøাড ক্যান্সারকে চিকিৎসা পরিভাষায় লিউকোমিয়া বলা হয়। মানবদেহে রক্তকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি রক্তরস ও আরেকটি রক্ত কণিকা। রক্ত কণিকা আবার তিন প্রকার যেমন লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা ও অণুচক্রিকা । আমাদের প্রতি সিসি রক্তে ৪০০০-১১০০০ শ্বেত রক্ত কণিকা থাকে কিন্তু লিউকোমিয়া হলে এই সংখ্যা বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে এ সংখ্যা বেড়ে ৫০,০০০-১,০০,০০০ পযর্ন্ত হতে পারে। স্বাভাবিকভাবে কোষগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কিন্তু লিউকোমিয়ার কোষের সংখ্যা বাড়লে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। কোষ বাড়ে ঠিকই, কোষগুলো অপরিণত হয়, যায় জন্য এর কাযার্বলি সঠিকভাবে করতে পারে না। বøাড ক্যান্সার জীবন ধ্বংসকারী একটি রোগ। এ রোগ যে কোনো বয়সে যে কোনো সময় হতে পারে। বøাড ক্যান্সারের প্রকারভেদ

লিউকোমিয়ার অনেক রকমভেদ আছে। একটি একিউট মায়েলয়েড লিউকোমিয়া এটি সাধারণত ৩-৫ বৎসরের ছেলেমেয়েদের বেশি হয় আর একটি নাম লিম্ফোবøাস্টিক লিউকোমিয়া। এটি বড়দের বেশি হয়।

বøাড ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণ?

এ রোগের প্রকৃত কারণ এখনও জানা সম্ভব হয়নি, তবে এ পযর্ন্ত বিভিন্ন গবেষণায় যে সব কারণ জানা সম্ভব হয়েছে, তা নিম্নরূপ পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ-পরবতীর্ আবহাওয়ার পরিবতর্ন (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে দেখা গেছে গভর্বতী মায়েদের যদি অতিরিক্ত এক্স-রে করানো হয় তবে গভর্স্থ সন্তানের বøাড ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। বেনজিন কারখানা শ্রমিকদের ঝুঁকি বেশি। এনকালাইজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেডিও থেরাপিও বøাড ক্যান্সার তৈরি করতে পারে। যারা দীঘির্দন যাবত আয়োনাইজিং বেরিয়ে অথার্ৎ এক্স-রে, গামা রে ইত্যাদি সংস্পশের্ কাজ করে সাইটোটপ্রিক ওষুধ গ্রহণকারী রোগীদের রেটো ভাইরাস নামক এক ধরনের ভাইরাসও দায়ী বলে জানা গেছে।

বøাড ক্যান্সারের উপসগর্

বেশিভাগ ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে সামান্য জ্বর থাকে। ধীরে ধীরে ওজন কমে যাওয়া ও দুবর্লতা বোধ করা, ক্রনিক লিউকোমিয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় যকৃত ওপ্লীহা বড় হয়ে যায়। আহারের অরুচি খিটখিটে মেজাজ হওয়া, ধীরে ধীরে রক্তশূন্য হয়ে পড়ে, দঁাতের গোড়া ও মাড়ি ফুলে যায়, কখনো রক্ত ক্ষরণের সমস্যা হতে পারে। লিম্ফগøান্ড ফুলে যায়।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথিতে নিদির্ষ্ট কোনো ওষুধ দেওয়া উচিত নয়। তবে হোমিওপ্যাথিতে ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিশেষ সুফল পাওয়া যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন রোগীর চিকিৎসা করে তাদের যন্ত্রণাহীন, দীঘির্দন জীবযাপন করা সম্ভব হয়েছে। তবে দুঃখের কথা এই, যে সমস্ত রোগী পেয়েছি আধুনিক চিকিৎসায় ব্যথর্ হয়ে তারা এসেছিল। তবে স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য পেয়েছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<10639 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1