শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাঠক মত

নতুনধারা
  ৩০ জুন ২০১৮, ০০:০০

দেশকে ধূমপানমুক্ত করতে

আইনই যথেষ্ট নয়

ধূমপান মানে বিষপান, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মানি না। দুই আঙুলের চিপায় যদি একটা সিগারেট না থাকে তাহলে যেন মানসম্মান ধুলোয় ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। অনেকে মনে করে, সিগারেট টানলে মানুষ স্মাটর্ হিসেবেই ভেবে নেয়। কিন্তু স্মাটর্ হতে গিয়ে সে নিজের জীবনের আয়ু কমে আনছে, এটা হয়তোবা তারা ভুলেই যান। প্রাপ্তবয়স্করা তো সিগারেট টানেই। ইদানীং বালক থেকে কিশোর সবার হাতেই সিগারেট শোভা পাচ্ছে! ভাবতেই অবাক লাগে, যে বয়সে সিগারেট কী জিনিস আমরা বুঝতাম না, সে বয়সেই ছেলেদের হাতে এসব সিগারেট। যারা ধূমপানে আসক্ত নয় তারা কোনোমতে নাকে হাতচাপা দিয়ে সিগারেটের ধেঁায়া থেকে বঁাচার চেষ্টা করেন। তবুও বঁাচতে পারেন না তারা। যে সামান্য একটু ধেঁায়া তাদের শরীরে প্রবেশ করে তাতেই অনেক ক্ষতি হয়ে যায় তাদের। আমাদের দেশের ধূমপানবিরোধী আইন রয়েছে। পাবলিক প্লেসে ধূমপান করলে ৫০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে এ আইনে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই পাবলিক প্লেসে ধূমপান করেন। তাহলে আইন প্রয়োগ করবে কারা?

দেশকে একেবারে ধূমপানমুক্ত করা কতোটুকু সম্ভব, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে কিশোর এবং বালকদের সবর্প্রথম ধূমপানমুক্ত করার প্রয়াস চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের একটি আইনের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। ব্রিটেনে অনূধ্বর্-১৮ বছর বয়সে ছেলেমেয়েদের সিগারেট বা অন্য কোনো নেশাজাতীয় দ্রব্য কেনা বা খাওয়া নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে কঠোর সাজার কথাও বলা হয়েছে। বাংলাদেশেও এমন আইন করা যেতে পারে। তাতে অন্তত দেশের কিশোর এবং বালকরা ধূমপানমুক্ত থাকতে পারবে। তবে যে আইনই করা হোক না কেন, তার কঠোর প্রয়োগ দরকার। আইনের প্রয়োগ না হলে আইন করেও কোনো লাভ হবে না। শুধু আইন নয়, সাধারণ জনগণকেও এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। নিজে ধূমপান করবো না, অন্যকেও ধূমপান করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবোÑ এসব নীতিই আমাদের মেনে চলা উচিত। আমাদের বোঝা উচিত, ধূমপানে শুধুই ক্ষতি হয়, কোনো লাভ হয় না। আমাদের দেশকে ধূমপানমুক্ত করতে হলে যে আইনই করা হোক না কেন, সে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। সঙ্গে দরকার ব্যক্তি সচেতনতা। তাহলে হয়তোবো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশটাকে ধূমপানমুক্ত করা সম্ভব।

মাসুদ রানা

বগুড়া

প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতায়

এগিয়ে আসুন

প্রতিবন্ধীরা আমাদেরই স্বজন, সমাজে অবহেলিত-অসহায়, বড়ই দুঃখী। সামাজিক সহযোগিতা ও আমাদের উদার দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে প্রতিবন্ধীরা অভিশপ্ত জীবনযাপন করছে। ফলে তারা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত ও বিপযর্স্ত। পরিবারে ও সমাজে তারা বোঝা হিসেবে চিহ্নিত। সামাজিক কাযর্কলাপ থেকে উপেক্ষিত, বঞ্চিত ও দারুণভাবে অবহেলিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০% প্রতিবন্ধী। সে হিসেবে আমাদের দেশে প্রায় ১.৫০ লাখ প্রতিবন্ধী রয়েছে। এই বৃহত্তম প্রতিবন্ধীর বেশিরভাগই গ্রামে বা অজপাড়াগঁায়ে বাস করে। তারা অত্যন্ত দরিদ্র, ৮৫% প্রতিবন্ধী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণগুলো খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপদ মাতৃত্বের অভাব, জন্মকালে অজ্ঞতা, বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রসব না হওয়ার কারণে, সড়ক দুঘর্টনা বা নানা দুঘর্টনা, ভারি বোঝা বহন, গাছ থেকে পড়ে, নিমার্ণ কাজের সময় উঁচু স্থান থেকে পড়ে, ডায়াবেটিস, ভুল চিকিৎসা, ঝগড়া ফ্যাসাদ ও পোলিও আক্রান্ত, অপুষ্টি, ক্যান্সার ও বিভিন্ন জটিলতার কারণে এসব প্রতিবন্ধী হয়ে থাকে। সমাজে অত্যন্ত অবহেলিত আপনজনরাও সদয় না থাকার কারণে তারা বেশিরভাগ সময়ই আত্মহত্যার দিতে ঝুঁকে। দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধীর বেঁচে থাকার জন্য সরকারের উদার দৃষ্টি থাকা আবশ্যক। তাই সদ্য নিবাির্চত সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ বৃহত্তম প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য জাতীয় সংসদে একটি বিল আনয়ন করে তাদের সাংবিধানিক অধিকার দেয়া হোক। সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্বল্পসংখ্যক প্রতিবন্ধীকে ২২০ টাকার একটি ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর সুদমুক্ত ১০ হাজার টাকা ঋণের ব্যবস্থা করছে যা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে স্কুলের উপবৃত্তির ব্যবস্থা, প্রাথমিক পযাের্য় মাসিক ৩০০ টাকা, মাধ্যমিক ৪৫০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক ৬০০ টাকা ও ডিগ্রিতে ১০০০ টাকা সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে এ সুবিধার পরিমাণ নগণ্য বলে মনে হয়। দেশের সংবিধানে তাদের কোনো আলাদা আইন নেই। দেশের নাগরিকদের চেয়ে বাড়তি সুবিধা পাওয়া তাদের জন্য বাঞ্ছনীয়। দেশের এক বিরাট সচল জনশক্তি যেখানে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও নিরক্ষরতার অভিশাপে জজির্রত, সেখানে প্রতিবন্ধীরা আত্মকমর্সংস্থানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পুঁজি ও উন্নত চিন্তাচেতনার অভাবে বুভুক্ষুর দ্বারপ্রান্তে ও মৃত্যুর মুখোমুখি এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে করুণা ভিক্ষা করে কোনোরকমে প্রাণকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবনের চাকা অচল, কোথাও একটু একটু সচল। সমাজের অন্য দশজন নাগরিকের মতো কমর্পরিধি ও মেধা দিয়ে উপাজের্নর পথে পা বাড়াতে চায় তারা। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল করে তোলা হচ্ছে। আজ তারাও উৎপাদনে অংশীদারিত্ব পেয়েছে এবং জাতীয় আয়ে শরিক হচ্ছে। সচল সমাজের কাছে একটু ভালো ব্যবহার পেতে চায় তারা। সম্মানটুকু নাই বা পেল, একটু আদর স্নেহ পাওয়াটা তো স্বাভাবিক। বিভিন্ন সাহায্য ও সহায়ক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুঁজি ও আথির্ক ক্ষমতার বিকাশ ঘটিয়ে সম্মানজনক পেশায় জীবিকা অজের্ন সক্ষম হতে পারে তারা। সেজন্য দরকার সবার সহযোগিতা। আমরা আশা করবো, প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতায় সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে।

কুতুবউদ্দিন প্রধান

ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে