শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাম উন্নয়নই দেশ উন্নয়নের হাতিয়ার

ফয়সাল হাসান শিক্ষাথীর্, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
  ০১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

বাংলাদেশ উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় দেশ হওয়া স্বত্তে¡ও অথর্নীতি ও জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। যদিও বাংলাদেশ সরকারের ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। আসলে এই পুরো প্রক্রিয়াটি নিভর্র করছে একটি টেকসই ও দীঘর্স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর। আর এই পরিকল্পনা সফল করতে হলে সবাের্গ্র মনোযোগ দিতে হবে গ্রামীণ অথর্নীতি ও গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের বিষয়টিতে। বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এই দেশের অধিকাংশ মানুষই কৃষির ওপর নিভর্রশীল এবং এই বিপুলসংখ্যক কৃষক শ্রেণির বসবাস গ্রামাঞ্চলে। ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা আঙ্কটাডের প্রকাশিত এলডিসি রিপোটের্ বলা আছে, বিশ্বের কোনো দেশই কৃষি খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ছাড়া এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হতে পারেনি। সে জন্য আমাদের পক্ষেও কৃষিতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন না আনা পযর্ন্ত এলডিসির তালিকা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যেও পেঁৗছানো সম্ভব নয়। তাই গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গ্রামীণ কৃষকদের কষ্টে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের যথাযথ বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামীণ অথর্নীতি রূপান্তরের মাধ্যমে অথৈর্নতিক উন্নয়ন অধিকতর গুরুত্বপূণর্ আমাদের দেশের অথৈর্নতিক উন্নয়ন তথা সাবির্ক উন্নয়নের জন্য। কৃষি খাতের উন্নয়ন মানেই কিন্তু অধিক ফসল উৎপাদন নয়, বরং কৃষিজাত ক্ষুদ্রশিল্পের বিকাশ, কৃষকের নায্যমূল্য, কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সহজলভ্য ব্যবহার ইত্যাদি।

বাংলাদেশে গ্রামের সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। এ গ্রামগুলোকে দেশের অস্তিত্ব রক্ষার অপার শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। গ্রামের মানুষকে প্রযুক্তি, পরিকল্পনা, মনিটরিং, ঋণ সহায়তা, প্রকল্প সহায়তা দিলে প্রতি গ্রামে অন্তত একটি করে হলেও কমপক্ষে ৯০ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের প্রকল্প গড়ে উঠতে পারে। প্রতিটি প্রকল্পে ২০ জনের কাজের সংস্থান হলে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বিকল্প কমর্সংস্থান হতে পারে। এই বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর আয়ে আমাদের ক্রমবধর্মান এবং গতিশীল উন্নয়নের চাকাটি আরও সচল হবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই শহরমুখী। শহরে পযার্প্ত কাজ করার সুযোগ থাকুক বা না থাকুক-সেটি আমরা ভেবে দেখছি না। অনেক শিক্ষিত যুবক চাকরি না বেকার থাকছে, তারপরও তারা শহরেই পড়ে আছে। ফলে অথৈর্নতিক উন্নয়ন ঘটলেও, যতটা দ্রæত হওয়ার কথা তেমনটি হচ্ছে না। আমাদের দেশীয় বিনিয়োগকারীরা সবসময়ই শহরকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেই বিনিয়োগ করছেন। তাদের এই মনোভাব পরিহার করা উচিত। তাদের উচিত গ্রামীণ কৃষি এবং গ্রামের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং অন্যান্য আরও অথৈর্নতিক কমর্কাÐে অধিক বিনিয়োগ করা। এতে গ্রামীণ অথর্নীতি আরো গতিশীল। গ্রামের শিক্ষিত এবং স্বল্পশিক্ষিত জনগোষ্ঠী আরও অধিক পরিমাণে অতৈর্নতিক কমর্কাÐে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বাড়বে। যা থেকে উৎসাহিত হবে শহরমুখী জনগোষ্ঠী। ফলে তারাও গ্রামে থেকেই কমর্সংস্থানের পথ খুঁজে নেবে।

বলা হয়ে থাকে প্রায় ৯০ হাজার গ্রামবেষ্টিত আমাদের এই সুন্দর দেশটি আসলে একটি বড়সড় গ্রাম। গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের জন্য আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সকলে সম্মিলিত চেষ্ঠায় গ্রামীণ অথর্নীতি এবং সামাজিক ব্যবস্থার পরিবতর্ন অবশ্যই আসবে। যার সুফল ভোগ করবে পুরো বাংলাদেশ। দেশ এগিয়ে যাবে অথর্নীতিতে, অজির্ত হবে অথৈর্নতিক লক্ষ্যমাত্রা। এতে আমরা পরিণত হবে অথৈর্নতিক পরাশক্তিতে আর যুক্ত হবো উন্নত দেশের তালিকায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে