শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ পেশাদার মহিলা গলফ : স্বপ্নযাত্রা

সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রস্তাবিত মহিলা পেশাদার গলফারস অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা এবং দেশে কিছু ভালো মানের মহিলা পেশাদার খেলোয়াড় তৈরি করা প্রয়োজন। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কিছু প্রতিযোগিতার আয়োজন করাও প্রয়োজন। উল্লেখ্য, মহিলা পেশাদার গলফের উন্নতি ও বিস্তৃতির মাধ্যমে দেশের ভাবমূতির্ বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, পযর্টন শিল্পের বিকাশ ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করাও সম্ভব।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিএম কামরুল ইসলাম, এসপিপি (অব.)
  ০৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তর জনগোষ্ঠী (ষোল কোটির অধিক) অধ্যুষিত একটি স্বাধীন সাবের্ভৗম দেশ। আমাদের নিজস্ব খেলাধুলাসহ শিক্ষা-সাহিত্য এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে। হাডুডু, গোল্লাছুট, কানামাছি, বৌচি, ডাংগুলি, বিস্কুট দৌড়, তিন পায়ের দৌড়, দাড়িয়াবঁাধা, সঁাতার ইত্যাদি আমাদের নিজস্ব খেলাধুলা। গ্রামগঞ্জের কোথাও কোথাও এসব খেলাধুলার এখনো প্রচলন থাকলেও বতর্মানে ক্রিকেট (সবাির্ধক) ও ফুটবল আমাদের দেশের জনপ্রিয় খেলা। পাশাপাশি আমাদের দেশে ব্যাটমিন্টন, শুটিং, কারাতে, হ্যান্ডবল, টেনিস, স্কোয়াস ও গলফসহ অন্যান্য খেলাধুলাও কমবেশি হয়ে থাকে। বক্ষমান প্রবন্ধে আমি মূলত বাংলাদেশের মহিলা পেশাদার গলফের অবস্থা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব। উল্লেখ্য, যে বিষয়টির (মহিলা পেশাদার গলফের) উওপর সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনমত তৈরি করাও আমার এই প্রবন্ধের একটি উদ্দেশ্য।

সব ধরনের বিচারেই বলা যায় যে আমাদের দেশে গলফ এখনো একটি স্বল্প পরিচিত খেলা। আগে (ইংরেজদের সময়) বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলার চা বাগানে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে গলফ কোসর্ থাকলেও বতর্মানে চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেড (চট্টগ্রাম ক্লাব, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, ইত্যাদি স্থানে ছোট ছোট কিছু সুবিধা ছাড়া) শুধু স্বশস্ত্র বাহিনীর (মূলত সেনাবাহিনী) স্থাপনার গলফ কোসর্গুলো চালু আছে। এমনকি পযর্টন সংস্থার অধীন কক্সবাজারের গলফ কোসির্টও ১৯৯১ সালের গোকির্ও (ঝড়ের) পর আর চালু করা সম্ভব হয়নি। তথাকথিত পরিবেশবাদীদের কারণে ঢাকার সরোওয়াদীর্ উদ্যানের কোসির্টও প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। উল্লেখ্য, বছরের সব সময়ই আমাদের গলফ কোসর্গুলোতে কোসের্ প্রচুর শৌখিন খেলা এবং খেলার মৌসুমে (অক্টোবর থেকে এপ্রিল পযর্ন্ত) অনেক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অথার্ৎ আমাদের দেশে শৌখিন গলফ খেলার পরিবেশ সন্তোষজনক। কিন্তু সিদ্দিকুরের মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকার পরেও আমাদের পেশাদার গলফের অবস্থা তথৈবচ। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রফেশনালস গলফারস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএ) একটা সুনিদির্ষ্ট দীঘের্ময়াদী পরিকল্পনার আলোকে এই ক্ষেত্রটিকে (মূলত পুরুষ পেশাদার গলফকে) একটা কাঠামোগত রূপ প্রদান এবং খেলোয়াড় তৈরি ও খেলার মান উন্নতির চেষ্টা শুরু করেছে। আশা করা যায় যে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের পুরুষ পেশাদার গফল আরও ভালো করবে এবং একটা সম্মানজনক স্থানে পেঁৗছাতে পারবে। এখন আসা যাক এই প্রবন্ধের মূল বিষয় অথার্ৎ মহিলা পেশাদার গলফ প্রসঙ্গে। তাদের জন্য কোনো নিদির্ষ্ট প্রতিষ্ঠান থাকা তো দূরের কথা ১৫ অক্টোবর ২০১৭ পযর্ন্ত আমাদের দেশে কোনো মহিলা পেশাদার গলফ খেলোয়াড়ই ছিল না। কিন্তু জেন্ডার সমতা, মহিলাদের সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ, তাদের ক্ষমতায়ন শক্তিশালীকরণ কিংবা মানবিক মূল্যবোধ, ইত্যাদি যাই বলি না কেন সব পরিস্থিতিতে গলফসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য যথাযথ সুযোগ করে দেয়া প্রয়োজন। ওই মূল্যবোধকে ধারণ করে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে (নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে) বিপিজিএ এই দিকটি (মহিলা পেশাদার গলফ) নিয়েও কাজ শুরু করে। আমাদের লক্ষ্য হলো, ‘পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও কাক্সিক্ষত পযাের্য় গলফ খেলার সঙ্গে সম্পকির্ত করা’। উল্লেখ্য, যেহেতু আমি পেশাদার গলফ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেহেতু আমরা পেশাদার মহিলা গলফ নিয়ে কাজ শুরু করি। আরও সুনিদির্ষ্টভাবে বলা যায় যে আমাদের লক্ষ্য হলো, ২০২১ সালের মধ্যে দেশে একাধিক মহিলা পেশাদার গলফ খেলোয়াড় তৈরি এবং তাদের জন্য একটি অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করা। বিষয়টি মূলত আমার চিন্তা প্রসূত হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ এবং একটি কাযর্কর দলের প্রয়োজন। ফলে ওই কাজের সঙ্গে আমরা বিপিজিএকে সংশ্লিষ্ট করি। কাযির্নবার্হী পরিষদ বিপিজিএর মহাসচিব হিসাবে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমাকেই দায়িত্ব প্রদান করে।

আমরা উপরোল্লিখিত লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ শুরু করি। প্রথমেই বিপিজিএর দীঘের্ময়াদি পরিকল্পনায় বিষয়টি অন্তভুর্ক্ত করা হয়। তারপর প্রস্তাবিত অ্যাসোসিয়েশনটি দঁাড় করানোর জন্য বিপিজিএর নিবার্হী কমিটির অনুমোদনও নেয়া হয়। পাশাপাশি বিষয়টির পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পযাের্লাচনা করা এবং রেডিও-টেলিভিশনে টকশোসহ বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণা জোরদার, ইত্যাদি কাযর্ক্রম শুরু করি। পরবতীর্ পযাের্য় মহিলা সংগঠক তৈরির উদ্দেশ্যে বিপিজিএতে মহিলা সহযোগী সদস্য অন্তভুর্ক্তকরণের অনুমোদন এবং মহিলা সহযোগী সদস্য সংগ্রহ কাযর্ক্রম শুরু করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বতর্মানে বিপিজিএর মহিলা সহযোগী সদস্য সংখ্যা প্রায় ২১ জন। তাদের অধিকাংশ শৌখিন গলফ খেলোয়াড়।

ইতোমধ্যে ভারতীয় মহিলা গলফ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার সহযোগিতার অঙ্গীকারসহ কিছু নিদের্শনা ও পরামশর্মূলক বাতার্ প্রদান করে। ওই বাতার্র আলোকে মহিলাদের জন্য একটা পৃথক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করতে হলে কাযির্নবার্হী কমিটিতে অন্তত দুজন পেশাদার মহিলা গলফারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের দেশে তখনও কোনো মহিলা পেশাদার গলফার ছিল না। ফলে প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানটি দঁাড় করানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের মহিলা পেশাদার গলফ খেলোয়াড় সংগ্রহের কাজও শুরু করতে হয়। তখন সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে লক্ষ্য অজের্নর জন্য আমরা সেনাবাহিনীর মহিলা খেলোয়াড়দের থেকে দুই/তিনজনকে পেশাদার গলফার করানোর চেষ্টা করি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে সিজিএসসহ ঊধ্বর্তন সেনা কমর্কতাের্দর সঙ্গে যোগাযোগ ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি (যদিও যথাযথ কারণে বিষয়টি এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি)। পাশাপাশি প্রতিটি গলফ ক্লাবের কমর্কতাের্দর বিশেষ করে লেডি ক্যাপ্টেনদের মহিলা পেশাদার খেলোয়াড় তৈরির প্রতি জোর দেয়ার অনুরোধ করা হয়। এই সব কমর্কাÐের পাশাপাশি বিষয়টির পক্ষে মতামত সৃষ্টির জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পত্রপত্রিকায় লেখালেখি, রেডিও-টেলিভিশনে আলোচনা ও টকশোসহ অন্যান্য প্রচেষ্টার কারণে কিছুটা দ্বিধাদ্ব›দ্ব থাকলেও বাংলাদেশ মহিলা পেশাদার গলফ খেলোয়াড় তৈরি এবং তাদের জন্য একটি পৃথক সংস্থা প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রচুর মৌখিক এবং কিছু কিছু কাযর্করী সমথর্ন পাওয়া সম্ভব হয়েছে। অথার্ৎ ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য আমরা একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।

এই পযাের্য় (১৫ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে) আমাদের দেশের অন্যতম মহিলা গলফার সামুন আরজুম অরণী পেশাদার গলফার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ (আবেদন) করে। উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে তার স্বামী দেশের স্বনামধন্য গলফার সিদ্দিকুর রহমান বিশেষ ভ‚মিকা রেখেছিল। অরণী শুধু একজন ভালো খেলোয়াড়ই নয় বরং সে গলফের ওপর উঁচুমানের কিছু প্রশিক্ষণও নিয়েছে। সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে বিপিজিএ তাকে পেশাদার গলফার হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। উল্লেখ্য, ঢাকার কুমিের্টালা গলফ কোসের্ অনুষ্ঠিত এডিটি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে (২৭ জানুয়ারি ২০১৮) উপস্থিত দশর্ক ও খেলোয়াড়দের সামনে তাকে পেশাদার সদস্য কাডর্ প্রদান করা হয়। তাই বাস্তবতা হলো যে এখন অরণী নামের বাংলাদেশে একজন মহিলা পেশাদার গলফার আছে। উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালের দিকে আতাউল্লাহ প্রথম বাংলাদেশি (তদানিন্তন পূবর্ পাকিস্তান থেকে) পেশাদার গলফার খেলেছিল। তার প্রায় ৫৪ বছর পরে আমরা একজন মহিলা পেশাদার গলফ খেলোয়াড় পেয়েছি। বিষয়টি বাংলাদেশের গলফ এবং বিশেষ করে মহিলা গলফ খেলার জন্য একটা ঐতিহাসিক ঘটনাও বটে। পাশাপাশি অন্য একটি মেয়ে শারফিনাজ শামা খান পেশাদার গলফার হওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু খেলার মান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানার পর তার পেশাদার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই বলা যায় যে ইতোমধ্যেই আমরা প্রথম লক্ষ্য (মহিলা পেশাদার গলফার তৈরি এবং তাদের জন্য একটা প্রতিষ্ঠান করে দেয়া) পূরণের কাছাকাছি চলে এসেছি। আমাদের পযার্প্ত সংখ্যক সহযোগী মহিলা সদস্য (সংগঠক) এবং একজন মহিলা পেশাদার গলফ খেলোয়াড় আছে। বাংলাদেশ মহিলা পেশাদার গলফারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএলপিজএ) প্রতিষ্ঠা এবং খেলোয়াড় তৈরিসহ পরবতীর্ কাযর্ক্রম শুরু করতে পারি। আমি ১৪ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত বিপিজিএর কাযির্নবার্হী কমিটির সভায় এসব অগ্রগতি এবং পরবতীর্ কমর্পন্থা সম্পকের্ অবগতি করি। উপস্থিত সবাই এসংক্রান্ত কাযর্ক্রমকে কষ্টকর ও ঝামেলাপূণর্ কিন্তু প্রয়োজনীয় ও প্রশংসনীয় হিসেবে আখ্যায়িত করে একটি স্বয়ংসম্পূণর্ পৃথক অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে দঁাড় করানোর পূবর্ পযর্ন্ত প্রস্তাবিত সংস্থাটি বিপিজিএর মহিলা পেশাদার শাখা হিসেবে কাজ করার এবং বিপিজিএর আইন-কানুনের (প্রযোজ্য অংশ) আলোকে পরিচালিত হওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত প্রদান করে। পাশাপাশি গবসড়ৎধহফঁস ড়ভ অংংড়পরধঃরড়হ সংশোধন কমিটিকে তাদের প্রস্তাবনায় বিষয়টি অন্তভুর্ক্ত করারও অনুরোধ করা হয়।

ষোলো কোটি মানুষের একটি স্বাধীন সাবের্ভৗম দেশ হিসেবে খেলাধুলাসহ আধুনিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই আমাদের কাজ করতে হবে। সে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে গলফ নিয়েও কাজ করা প্রয়োজন। প্রবন্ধের এ পযাের্য় অন্যান্য দেশের মহিলা গলফ বিশেষ করে মহিলা পেশাদার গলফ নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন। আধুনা বিশ্বে প্রচুর মহিলা গলফ খেলোয়াড় (শৌখিন ও পেশাদার) আছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ছয় মিলিয়নের অধিক মহিলা গলফার আছে। তবে স্বীকৃত ইতিহাস মতে, ১৫৫২ সালের দিকে স্কটল্যান্ডের রানী কুইন মেরীর (১৫৪২-৮৭) সময় মহিলা গলফ স্বীকৃতি পেতে শুরু করে। উল্লেখ্য, ওই সময় বিশ্বখ্যাত গলফ কোসর্ ‘সেন্ট অ্যানড্রউস’ (ঝঃ. অহফৎবংি) তৈরি করা হয়। আর ১৮৬৭ সালে সেন্ট অ্যানড্রউসেই বিশ্বের প্রথম মহিলা গলফ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৯১ সালে ষড়হম ওংষধহফ-এর সেইনিকক হিল গলফ ক্লাব (ঝযরহহধবপড়পশ ঐরষষ এড়ষভ ঈষঁন) মহিলাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। জনপ্রিয়তা ও মহিলা খেলোয়াড়ের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দুই বছর পর সেখানে মহিলাদের জন্য নয় হোলের একটি কোসর্ও চালু করা হয়। এভাবে শুরু হয় কালের পরিক্রমায় অনেক বাধা-বিপত্তি পার হয়ে মহিলাদের গলফ খেলা বতর্মান পযার্য় এসেছে। উল্লেখ্য, ১৯১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার গলফারদের সংগঠন ‘প্রফেশনাল গলফারস অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ (ঞযব চৎড়ভবংংরড়হধষ এড়ষভবৎং’ অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ অসবৎরপধ) প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯১৭ সালে টঝএঅ-র মহিলা টুনামের্ন্ট কমিটি অন্তভুর্ক্ত করা হয়, যা ১৯৩৪ সালে মহিলা শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৩৪ সালে আমেরিকা আর ইংল্যান্ডের মধ্যে শৌখিন মহিলা গলফ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমদিকের পেশাদার মহিলা গলফারদের অন্যতম হেলেন হিকস (ঐবষবহ ঐরপশং) ১৯৩৪ সালে পেশাদার গলফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তখন অন্য কোনো পেশাদার প্রতিযোগিনী না থাকার কারণে তাকে ডরষংড়হ ডবংঃবৎহ-এর স্পোটর্স দ্রব্যাদি বিপণনের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। তবে ১৯৪৪ সালে মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্র মহিলা পেশাদার গলফ অ্যাসোসিয়েশন (ডড়সবহ’ং চৎড়ভবংংরড়হধষ এড়ষভ অংংড়পরধঃরড়হ) প্রতিষ্ঠা করলেও আরও ছয় বছর পর মহিলা পেশাদার গলফ অ্যাসোসিয়েশন (খধফরবং চৎড়ভবংংরড়হধষ এড়ষভ অংংড়পরধঃরড়হ খচএঅ) নামে তারা নতুন আঙ্গিকে কাজ শুরু করে। শুরুতে ডরষংড়হ ঝঢ়ড়ৎঃরহম এড়ড়ফং তাদের প্রয়োজনীয় আথির্ক সহায়তা প্রদান করে। তারপর পযার্য়ক্রমে বিভিন্ন দেশে মহিলা পেশাদার গলফ শুরু হয়। বতর্মানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, ভারত, কানাডা, জাপান ও সুইডেনসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই পেশাদার মহিলা গলফ খেলা হয়। তবে ভারত ছাড়া দক্ষিণ পূবর্ এশিয়ার মহিলাদের মধ্যে পেশাদার গলফ খেলার প্রচলন প্রায় নেই বললেই চলে।

প্রবন্ধের এই পযাের্য় ভারতের পেশাদার মহিলা গলফ খেলা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় গলফ ইউনিয়ন-ওএট (আন্তজাির্তক গলফ ফেডারেশনে -ওএঋ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত) দেশের গলফ খেলার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করলেও চৎড়ভবংংরড়হধষ এড়ষভ ঞড়ঁৎ ড়ভ ওহফরধ-চএঞও (যদিও ১৯৯৫ সালে ওএট-এর তত্ত¡াবধানে প্রথমে চৎড়ভবংংরড়হধষ এড়ষভবৎং’ অংংরড়পরধঃরড়হ ড়ভ ওহফরধ-চএঅও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল) পেশাদার গলফ এবং ডড়সবহ’ং এড়ষভ অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ওহফরধ-ডএঅও মহিলা পেশাদার গলফ খেলা নিয়ন্ত্রণ/পরিচালনা শুরু করে। পাশাপাশি ওহফরধহ চরঃপয ধহফ চঁঃঃ টহরড়হ-ওচচট এবং চধৎধষুসঢ়রপ এড়ষভ অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ওহফরধ-চএঅও ও স্ব-স্ব ক্ষেত্রে গলফ নিয়ে কাজ করে থাকে। উল্লেখ্য, খেলাধুলার মাধ্যমে দেশের মহিলাদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালে (পুরুষ পেশাদার গলফ শুরুর প্রায় ২৭ বছর পরে) ডএঅও প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওএট-এর মহাসচিব সতিশ টেনড়নকে সভাপতি, মিসেস কবিতা সিংকে সহ-সভাপতি, চাম্পিকা সোয়েলকে মহাসচিব, ভিএস সিংকে কোষাধক্ষ, ভারতের প্রথম ট্যুর খেলোয়াড় স্মীরীতি মেহেরাকে (ঝসৎরঃর গবযৎধ) খেলোয়াড় শাখার চ্যাম্পিয়ন (পঁাচ বছরের জন্য) কবে প্রথম কাযর্করী পরিষদ তৈরি করা হয়। পাশাপাশি ভারতের প্রথমদিকের অজর্ন খেতাবপ্রাপ্ত স্বনামধন্য মহিলাদের মধ্যে মিসেস অনজানি দেশি, মিসেস সীতা বাউলি, মিসেস ননিতা লাল কুসির্ এবং মিসেস কিরান কানওয়ারকে আজীবন সম্মানিত সদস্য (ঐড়হধৎধৎু গবসনবৎং ভড়ৎ খরভব) হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরে প্রতিষ্ঠানকে আথির্কভাবে শক্তিশালী করার জন্য ২০১০ সালে হিরো মোটর কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক পাওন মুনজালকে (চধধিহ গঁহলধষ) প্রধান পৃষ্ঠপোষক করা হয়। ডএঅও হলো ভারতের সামাজিক আইন-১৮৬০ (ঝড়পরবঃু অপঃ-১৮৬০)-এর আওতায় রেজিস্ট্রিকৃত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যার গড়ঃঃড় হলো, ‘ঊসঢ়ড়বিৎসবহঃ ড়ভ ড়িসবহ ঃযৎড়ঁময ঝঢ়ড়ৎঃং’ বা খেলাধুলার মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন করা। হিরো হোন্ডার স্পন্সরশিপে ২০০৫ সালের ২২ অক্টোবর উখঋ গলফ ও কান্ট্রি ক্লাবে ভারতের প্রথম মহিলাদের পেশাদার গলফ স্কিন গেইম (১৮০০ মাকির্ন ডলারের প্রাইজ মানি) অনুষ্ঠিত হয়। টঝখচএঅ-এর প্লেয়ার ডিভিশনের চ্যাম্পিয়ন গং. ঐবধঃযবৎ উধষু উড়হড়ভৎরড় ওই প্রতিযোগিতার উদ্বোধনে অংশগ্রহণ করেন। তারপর চএঞও (২০০৬ সালে) খধফরবং অংরধহ এড়ষভ ঞড়ঁৎ-এর কমিশনার কচ্চি কাটোর (কড়পযরপ কধঃড়) সাহায্যে চএঞও ১ংঃ উখঋ ডড়সবহ’ং ওহফরধহ ঙঢ়বহ এবং একটি পঁাচ স্তরের প্রতিযোগিতা (ঋরাব খবম ঞড়ঁৎ)-এর পরিকল্পনা প্রণয়নপূবর্ক ২০০৬ সালের অক্টোবরেই মাত্র পঁাচজন খেলোয়াড় নিয়ে ছয় লাখ টাকার প্রাইজমানির ঋরাব খবম ঞড়ঁৎ শুরু করে। অতপর ২০০৭ সালের মাচের্ খধফরবং অংরধহ এড়ষভ ঞড়ঁৎ-এর সঙ্গে যৌথ অনুমোদনে প্রথম আন্তজাির্তক মহিলা পেশাদার প্রতিযোগিতা মাচের্ ঞযব উখঋ ডড়সবহ,ং ওহফরধহ ঙঢ়বহ (দশ লাখ মাকির্ন ডলারের প্রাইজমানির) আয়োজন করে। বতর্মানে ডএঅও নিয়মিত ভাবে ডড়সবহ’ং চৎড়ভবংংরড়হধষ এরড়ষভ ঞড়ঁৎ, ইঞ চৎড়ধস ড়ভ ঈযধসঢ়রড়হং এবং অনেক ধরনের (গলফ সংশ্লিষ্ট) কল্যাণমূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। উল্লেখ্য, অদিতি অশোক, শমির্লা নিকোলেট, অংকিতা টেইওয়ান ও মাগের্ট এবোটের মতো অনেক প্রতিভাবান মহিলা গলফার বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।

প্রবন্ধের লক্ষ্য অজের্নর স্বাথের্ আমি প্রথমে বাংলাদেশের মহিলা পেশাদার গলফের প্রস্তুতি, তারপর মহিলা গলফদের সূচনা পবর্ থেকে পেশাদার মহিলা গলফের শুরু ও উন্নতি, ভারতের মহিলা পেশাদার গলফের শুরু এবং ভারতের মহিলা পেশাদার গলফের ইতিহাস, ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা জানি যে গলফ একটি জনপ্রিয় দ্রæত বধির্ষ্ণু খেলার কারণে মহিলা গলফও বিভিন্ন দেশে দ্রæত জনপ্রিয়তা লাভ করছে। তাই আমারদেরও মহিলা গলফ এবং মহিলা পেশাদার গলফ নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের সরকারও মহিলাদের ক্ষমতায়নের নীতিতে বিশ্বাস করে। গলফের প্রতিটি শাখায় ভালো করার প্রচুর সম্ভাবনা আমাদের আছে। মহিলা গলফে কাক্সিক্ষত অবস্থান অজর্ন করতে হলে সরকারের সবোর্চ্চ পযার্য় থেকে শুরু করে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও অফিস/সংস্থাসমূহ, গলফ ফেডারেশন, বিপিজিএ, গলফ ক্লাব ও বেসরকারি পযাের্য় ব্যক্তি ও করপোরেট হাউসগুলোকে নিজস্ব অবস্থান থেকে সবার্ত্মক সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। মহিলাদের জন্য গলফ প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলার আয়োজনের পাশাপাশি বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনকে সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্য একটি মহিলা শাখা এবং সুবিধাজনক সময়ে পৃথক মহিলা গলফ ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মহিলা পেশাদার গলফের প্রচার ও প্রসারের জন্য বিপিজিএ যে পদক্ষেপ ও লক্ষ্য নিধার্রণ করেছে তা কাযর্করভাবে বেগবান করতে হবে। প্রথমে বিপিজিএকে মহিলা শাখা এবং পরে পযার্য়ক্রমে একটি স্বতন্ত্র মহিলা পেশাদার সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাযর্করী সাহায্য ও সহযোগিতা (প্রয়োজনে আথির্ক ও কারিগরি সহায়তাও) প্রদান করতে হবে। বিপিজিএসহ সব ক্লাব গলফ এবং সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মহিলা পেশাদার গলফ খেলোয়াড় তৈরির জন্য একটি সুনিদির্ষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করতে হবে। আমাদের গলফ একাডেমি লিডবেটার গলফ একাডেমিকে সাধারণভাবে মহিলা গলফার তৈরির প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে যেসব প্রতিশ্রæতিবান মহিলা গলফার আছে তাদের পেশাদার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। যদি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সমন্বিতভাবে চেষ্টা করা যায় তবে বাংলাদেশে সাধারণভাবে মহিলা (শৌখিন) গলফে এবং বিশেষভাবে মহিলা পেশাদার গলফে একটা বৈপ্লবিক পরিবতর্ন আনা সম্ভব হবে। তাই

সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রস্তাবিত মহিলা পেশাদার গলফারস অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা এবং দেশে কিছু ভালো মানের মহিলা পেশাদার খেলোয়াড় তৈরি করা প্রয়োজন। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কিছু প্রতিযোগিতার আয়োজন করাও প্রয়োজন। উল্লেখ্য, মহিলা পেশাদার গলফের উন্নতি ও বিস্তৃতির মাধ্যমে দেশের ভাবমূতির্ বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, পযর্টন শিল্পের বিকাশ ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করাও সম্ভব।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিএম কামরুল ইসলাম, এসপিপি (অব.): কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে