শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের প্রয়াণ

এ ক্ষতি অপূরণীয়
  ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মৃত্যু মানুষের এক স্বাভাবিক নিয়তি। তবু কিছু মানুষের চলে যাওয়া মেনে নেয়া কঠিন। কিছু কিছু মানুষ জীবন ও কমের্র মধ্য দিয়ে নিজেকে এমন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেন, যা কখনও ভোলার নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ সেরকমই একজন মানুষ। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, এই বীর মুক্তিযোদ্ধা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আর নেই। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আফতাবনগরে নিজ বাসায় তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তথ্যমতে, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে ইউনিভাসের্ল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কতর্ব্যরত চিকিৎসকরা। আর জানা যায় যে, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান। উল্লেখ্য, হাটের্ বøক ধরা পড়ায় গত বছর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে তার অস্ত্রোপচারও করা হয়েছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। বলা দরকার, এই গুণী মানুষটির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এই গীতিকার-সুরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল জন্মেছিলেন ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায়। তার পিতার নাম ওয়াফিজ আহমেদ ও মাতার নাম ইফাদ আরা নাজিমুন নেসা। ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্টটেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং শিক্ষাজীবনে স্নাতক ডিগ্রি অজর্ন করেন। তিনি ছিলেন সেই কিশোর যিনি ছাত্রজীবনে মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত অবস্থায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয়ী হওয়ার পর মুক্তিবাহিনী রমনা থানা থেকে আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনি ছিলেন যেমন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, তেমনি অত্যন্ত মেধাবকী সুরকার। ১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেশাত্মবোধক গান দিয়ে মূলত সুরকার হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল। যদিও তিনি কখনও গায়ক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেননি। এ ছাড়া ‘নয়নের আলো’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আসেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ওই সিনেমার ছয়টি গানই তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। তিনি তার মেধা ও প্রতিভার সাক্ষর রেখে হয়ে ওঠেন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকার ও গীতিকার। বাংলাদেশের কয়েকশ সিনেমায় তিনি সংগীত পরিচালনা করেছেন। আর এসব গান দশর্কদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। মানুষের মুখে মুখে ছিল তার অনেক গান। সব কটা জানালা খুলে দাও না, ও মাঝি নাও ছাইড়া দে, সেই রেল লাইনের ধারে, ও আমার মন কান্দে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছেঁায়াতে যেন পেয়েছি এগুলোসহ উল্লেখযোগ্য অনেক গান সৃষ্টি হয়েছে এই গুণী মানুষটার সুরে। তিনি একুশে পদক, রাষ্ট্রপতির পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

সবোর্পরি আমরা এটা বলতে চাই যে, তিনি যেমন তার সাহস ও দেশের প্রতি প্রেমের টানে যুদ্ধে ঝঁাপিয়ে পড়েছিলেন, তেমনি তার মেধা দিয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে দিয়ে গেছেন অনেক। তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। উদ্দীপ্ত করবে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। তার বিদেহী আত্মার প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইল গভীর শোক ও সমবেদনা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<33530 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1