শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাবাস বাংলাদেশ এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো ক্রিকেট। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের প্রতিটি অধ্যায় এ দেশের মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। প্রতিটি বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধে জয়ের এক একটা ইতিহাস আমাদের মনে আছে। ফুটবলের আলো এ দেশে বহু বছর ম্রিয়মাণ। তবে ক্রিকেট গত কয়েক বছর ধরেই অধিক উজ্জ্বল, কেবলই আলো ছড়াচ্ছে।
অলোক আচার্য
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

দিন কয়েক আগেও আকবর, তানজিল, মাহমুদুল বা শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে আমরা এতটা ভাবিনি। আমাদের দৃষ্টি ছিল বাংলাদেশের পাকিস্তান সিরিজে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দল যখন একটি পাহাড় অতিক্রম করল তখন যেন মনে হয়েছে এবারের আসরটা আমাদের জন্য। এই অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপটা আমরা পাবো। সেই কাজটি বাংলাদেশের সোনার ছেলেরা করে দেখিয়েছে। একদিকে যখন বড়দের হতাশাজনক পারফরম্যান্স আমাদের হতাশ করছে তখন এই নব আনন্দের বার্তা এনে দিল দেশের মানুষকে। বসন্ত আসতে আরও কয়েকদিন বাকি থাকলেও বাংলাদেশের মানুষের মনে যেন একটু আগেভাগেই সেই রং লেগে গেল। সাবাস বাংলাদেশ। যা হয়েছে তা ইতিহাস। ইতিহাসের পাতায় আকবরের বীরত্বের কাহিনী গাঁথা হয়ে গেছে। বাধার বিন্দাচল পেরিয়ে রাঙাপ্রভাত যে তারাই এনেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে প্রতিপক্ষ ভারতকে হারিয়ে আমাদের বহুকালের অধরা স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেছে এই যুবকরা। এরাই তো বীর। এই খেলা থেকে শেখার অনেক কিছুই আছে। অন্তত কীভাবে বিরূপ পরিস্থিতিতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তা দেখিয়েছে। তাই সাত উইকেট যাওয়ার পরেও যে দৃঢ়তা দেখেছি তা প্রশংসার দাবি রাখে। মাথা ঠান্ডা রেখে, মনের উত্তেজনাকে দমিয়ে রেখে কীভাবে খেলতে হয় তাও ওরা দেখালো। ধীর, স্থির, নৈপুণ্য, শান্ত আর জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা ওদের চোখে ছিল। বিপরীতে গত কয়েকটি টেস্টে আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের এমন দৈন্যদশা কেউ প্রত্যাশা করেনি। টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ দিনের ম্যাচ যখন তিনদিনেই শেষ হয়ে যায় তখন মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটা কেউ প্রত্যাশা করে না। পাকিস্তানের সঙ্গে শোচনীয় অবস্থা হয়েছে। দলীয় পারফরম্যান্স বলতে যা বোঝায় তা দেখতে পাচ্ছি না। অথচ খেলাটাই দলীয়। কোনো কোনো দিন হয়তো কোনো একজনের জন্য দলের সাফল্য আসে; কিন্তু সে আশা সব ক্ষেত্রে করাটা বোকামি। অন্তত সর্বাধিক খেলোয়াড়ের একত্রিত শক্তি দিয়ে ম্যাচ বের করতে হয়। টেস্ট ক্রিকেটটা ধৈর্য্যের। সেই ধৈর্য্যের পরিচয় পাইনি। টেস্টে খেলাটা চারদিন পার করে পাঁচদিন নিয়ে যাওয়ার জন্য যে কৌশল এবং আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য প্রয়োজন সেটি দেখতে পাইনি। আমরা দর্শক হিসেবে এটুকুই বুঝি টেস্ট ফরম্যাটে সফলতা পেতে টেস্ট ক্রিকেটে খেলার আরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। রোববার যেমন সারা বাংলাদেশের মানুষের চোখ ছিল টিভি পর্দায়। ছিল উত্তেজনা। ছিল বিশ্বকাপ নেয়ার অপেক্ষা। ছিল স্পৃহা।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো ক্রিকেট। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের প্রতিটি অধ্যায় এ দেশের মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। প্রতিটি বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধে জয়ের এক একটা ইতিহাস আমাদের মনে আছে। ফুটবলের আলো এ দেশে বহু বছর ম্রিয়মাণ। তবে ক্রিকেট গত কয়েক বছর ধরেই অধিক উজ্জ্বল, কেবলই আলো ছড়াচ্ছে।

বাঘা বাঘা সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করেছে আমাদের টাইগারা। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশের মানুষের আনন্দের একটি বড় উৎস হলো ক্রিকেট। আমরা ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করি, ক্রিকেটারদের নিয়ে ভাবী, ক্রিকেট নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নের কথা আজ না বলি। ক্রিকেট আমাদের কাছে আবেগ। আর ক্রিকেটের অগ্রভাগে থেকে যে লড়াকু সৈনিকরা ক্রিকেটকে আজকের অবস্থায় এনেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকুর, মোস্তাফিজ, লিটন, সৌম্য। আরও অনেকে আছেন। এখন এ সবখ্যাত ক্রিকেটারদের সঙ্গে আকবরদের নামও বলতে হবে। কারণ তারা যে বীর তা প্রমাণ করেছে। তাদের জন্যই আমাদের আজকের ক্রিকেট বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সগর্বে অবস্থান করছে। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে অর্জন তা যেন গোটা বিশ্ব দেখছে। সমন্বিত নৈপুণ্যে বাংলাদেশ দল আজ কোথায় পৌঁছে যাচ্ছে তা যেন কোনো সীমায় বাধা যায় না। বিগত দুই বিশ্বকাপেই আমাদের দেশ ভালো খেলেছে। আমরা সেই খেলা দেখে আনন্দিত হয়েছি। বিশ্বকাপ আমাদের কাছে একটি স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের বিশ্বকাপ একদিন বাংলার সোনার ছেলেরা এই দেশের মাটিতে নিয়ে আসবে এ আমাদের বিশ্বাস। এই বিশ্বাস থেকেই আমরা সবসময় আমাদের ক্রিকেটারদের পাশে থাকি, তাদের উৎসাহ দিই, অনুপ্রেরণা দিই।

আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে সেখানে বিভিন্ন সময়ের ক্রিকেটাররা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দলীয় প্রচেষ্টা ছাড়া বিজয় অর্জন করা যায় না। তবে মাশরাফির নেতৃত্বে অন্য এক বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে। বর্তমান ক্রিকেট দল আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের যে কোনো সময়ের চেয়ে সেরা পারফরম্যান্স করা একটি দল। এই দল একটি ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল। যেখানে নিখাদ ব্যাটসম্যান, বোলার এবং অলরাউন্ডারের সমন্বয় রয়েছে। দল হারলে আমাদের চোখেও জল আসে। আমরা ব্যথিত হই। এটা আমরা করি কারণ আমরা যেমন ক্রিকেটকে ভালোবাসি তেমনি ক্রিকেটারদেরও ভালোবাসি। সামর্থ্যের বেশিও হয়তো মাঝেমাঝে আমরা আশা করি! এটাও ভালোবাসার দাবি থেকেই। তাই সেই আশা যখন অনেক বেশি অপূরণ থাকে তাহলে খারাপ লাগাটাও স্বাভাবিক। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স আমাদের ভাবিয়েছে, আমাদের মনে বিষাদের ছায়া এনেছে টেস্ট সিরিজ। তবে আমি জয়ের কথা বলছি না। বলছি লড়াই করার কথা। জয়টা মুখ্য হলেও ক্ষেত্রবিশেষে ভালো লড়াই বা সম্মানজনক অবস্থাও অনেকটা প্রাপ্তি হতে পারে। যদি খেলাটা পঞ্চম দিনে গড়ায়, যদি হারটা ইনিংস ব্যবধানে না হয় তাহলে এই অনুভূতি একটু ভিন্ন হয়। দল জিতলে আমরা উলস্নাস করি। আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করি। কারণ সেই আবেগ। ক্রিকেটটা আমাদের কাছে আবেগের নাম। মাঠে আমাদের দর্শকরা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলে চিৎকার করে। আমরা এভাবেই আমাদের ক্রিকেট দলকে নিয়ে চিৎকার করতে চাই। আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে চাই তাকিয়ে দেখ আমরা ক্রিকেট জগতে রাজত্ব করতে এসেছি। ওয়ানডে, টি- টোয়েন্টি বা টেস্ট যে কোনো ফরম্যাটেই আমাদের লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে। আমরা জিততে পারি। তবে টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের আরও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। উইকেটে টিকে থাকার মানসিক শক্তি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশের ক্রিকেট অনেক উন্নতি করেছে। সারা বিশ্বই বাংলাদেশকে সমীহের চোখে দেখে। জয়-পরাজয় একটি খেলার জাতগত বিষয় হলেও আমরা এমন অবস্থানে পৌঁছেছি যখন খেলোয়াড়রা বিশ্বমানে। আজ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ নিজেদের করতে পেরে আমরা গর্বিত। সত্যি আজ মাথা তুলে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, সাবাস বাংলাদেশ এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়...। ক্রিকেট আমাদের দেশের মানুষের আবেগ, ক্রিকেট মানে অব্যক্ত অনুভূতি। ফলে আনন্দ-বেদনা দুইয়েই ভারাক্রান্ত হই। পরিশেষে সেই বীরদের ধন্যবাদ জানাই যারা এ দেশের বিজয় পতাকা সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে উড়িয়ে প্রমাণ করেছে আমরা বীর। আগামীর জন্য শুভেচ্ছা। পাশাপাশি জাতীয় ক্রিকেট দলও ব্যর্থতার বৃত্ত কাটিয়ে আমাদের দেশের গৌরব বয়ে আনবে এই প্রত্যাশা।

অলোক আচার্য: শিক্ষক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88407 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1