শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ড. কামালের ঐক্য সমাবেশে যাচ্ছে বিএনপি

নজর ২২ সেপ্টেম্বরে

যাযাদি রিপোটর্
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০৩
ড. কামাল হোসেন

নানামুখী প্রতিক‚লতা কাটিয়ে সরকার বিরোধী বৃহত্তর ঐক্য বাস্তবায়নের পথে। আগামীকাল ২২ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ড. কামাল হোসেনের আহŸানে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশ হবে। সমাবেশে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক ধারার পৃথক ৪টি দলের পাশাপাশি আট দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও যোগ দিতে পারে। এর মধ্য দিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নতুন প্লাটফমর্ দৃশ্যমান হচ্ছে। সরকার বিরোধী এই জোটের নাম কি হবে আর নেতৃত্বে কে থাকছেন এই আলোচনা এখন সবর্ত্র। ভোটের মাঠে নিয়ামক শক্তি না হলে বিএনপি ড. কামাল হোসেনকে নেতা মেনে ঐক্য করতে যাচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় সবার দৃষ্টি এখন ২২ সেপ্টম্বরে। ৫ দফা দাবি ও ৯টি লক্ষ্যের জাতীয় ঐক্যের সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহŸায়ক ড. কামাল হোসেন। সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। সাবির্ক তত্ত¡াবধানে থাকবেন মোস্তাফা মোহসীন মন্টু ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। সভা পরিচালনা করবেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তাফা আমীন। এদিকে নাট্যমঞ্চ ঘিরে সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশসহ যথাযথ কতৃর্পক্ষের কাছ থেকে লিখিত অনুমতিও মিলেছে। ওই সমাবেশ সফল করতে গঠিত হয়েছে ৭টি উপকমিটি। কমিটিগুলো মঙ্গলবার থেকেই কাজ শুরু করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতা ও বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তাতে আমন্ত্রণ পাচ্ছে না কেবল জামায়াতে ইসলামী। সূত্রমতে, বিএনপি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্টে থাকা বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য এবং বাম গণতান্ত্রিক ধারার পৃথক ৪টি দল এরই মধ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এছাড়া আট দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেও একই প্লাটফমের্ আনার জন্য যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম নেতারা গতকাল দিনব্যাপী বিভিন্ন পযাের্য়র বৈঠক করেছেন। শেষ পযর্ন্ত এসব দল ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকবে এমন আশা ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের। এছ্ড়াা এই ঐক্যে ২০ দলীয় জোটে থাকা জামায়াতে ইসলামী ছাড়া নিবন্ধিত অন্য দলগুলো থাকছে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ঐক্যে থাকছে নাÑ এমন তথ্য জানা গেলেও তাকেও ঐক্যে নিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত আছে। ছোট রাজনৈতিক দলগুলো কি করবে এনিয়ে জনমনে তেমন কৌত‚হল না থাকলেও বিএনপি শেষ পযর্ন্ত এই প্রক্রিয়ায় যোগ দিচ্ছে কিনা তা জানতে সবার আগ্রহ ছিল। জামায়াতকে বাদ ও ১৫০ আসনে ছাড় দিতে হবে এমন সব শতর্ সামনে আসার পরে বিএনপি এই প্রক্রিয়া থাকছে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এরপরও ঐক্য হলেও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে এর নেতৃত্বে কে থাকবেন এমন প্রশ্ন ঐক্য প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করে তুলেছিল। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত আসনে সবোর্চ্চ ছাড় ও ড. কামাল হোসেনকে নেতা মেনে এই প্রক্রিয়ায় বিএনপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের খবর ছড়িয়ে পড়লে শেষ পযর্ন্ত ঐক্য হচ্ছে বলেও সবর্স্তরের মানুষ মনে করছে। বিএনপি সূত্রমতে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতারা সবোর্চ্চ ছাড় দিয়ে হলেও ঐক্য করার ব্যাপারে আন্তরিক। ১০০ আসনের পাশাপাশি নেতৃত্বে ছাড় দিয়ে হলেও বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে আওয়ামী লীগকে হটাতে চায় তারা। এর পেছনে তাদের গ্রহণযোগ্য যুক্তি আছে। এগুলো হচ্ছে, এক. ঐক্য না গড়তে পারলে আবারও যেনতেন নিবার্চন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে। দুই. তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে। তিন, ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে বেশি পরিমাণে ছাড় না দিলে এই সুযোগ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেবে। তাই বিএনপির স্বাথের্ই সবোর্চ্চ ছাড় দিয়ে বৃহত্তর ঐক্যে থাকবে। সূত্রমতে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামশের্ দ্রæত ঐক্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে কাজ করছেন দলের মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এজন্য গত শনিবার লন্ডন থেকে ফিরে রোববার রাতেই মিজার্ ফখরুল যান ড. কামাল হোসেনের বেইলী রোডের বাসায়। সেখানে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠন নিয়ে আলোচনা করেন দুই নেতা। এরপর দ্বিতীয় দফায় সোমবার রাতেও এ দুই নেতা বৈঠক করেন। পাশাপাশি মঙ্গলবার ও বুধবার বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন মিজার্ ফখরুল। এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির নেতারা। একই সঙ্গে এই ঐক্যের প্রধান কে হচ্ছেন তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে থাকা দলটির এক নেতা জানান, বিএনপি অনেক দিন থেকেই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য নিয়ে কাজ করছে। এটি এখন চূড়ান্ত পযাের্য়। চলতি মাসে যেকোনো দিন এ বিষয়ে ঘোষণা আসবে। এজন্য যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাও লিখিত আকারে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া বৃহত্তর এই ঐক্যের প্রধান কে হবে তা এখনো নিধার্রণ করা হয়নি। তবে যুক্তফ্রন্টে থাকা তিনটি দল, গণফোরামসহ অন্য দলগুলো সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রহণযোগ্য কাউকে মনোনীত করলে বিএনপির তাতে আপত্তি থাকবে না। এক্ষেত্রে বিকল্পধারা সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের মধ্যে কেউ হলে তা নিয়ে চ‚ড়ান্ত আলোচনা হতে পারে। এদিকে ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নিবার্চন নিশ্চিত করতে সরকারবিরোধী জোটগুলোর অভিন্ন কমর্সূচি আসছে শিগগিরই। জোটগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরিতে নিজেদের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে যে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে আসছে, তা ইতোমধ্যে বহু দূর এগিয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বরের সমাবেশ থেকে ঘোষনা না এলেও চলতি মাসেই পুরো প্রক্রিয়া প্রকাশ্য রূপ নিতে পারে। জানা গেছে, আদশর্গত অমিল এবং দাবির ভিন্নতা থাকায় জোটগুলো যদি শেষ পযর্ন্ত এক মঞ্চে নাও আসে, নিবার্চন ইস্যুতে সবাই অভিন্ন কমর্সূচি পালন করবে, যা একটি পযাের্য় গিয়ে ‘বৃহত্তর নিবার্চনী মোচার্’য় রূপ নিতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে