সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন

কোন্দল মাথায় নিয়ে দুই বড় দলের প্রাথীের্দর দৌড়ঝঁাপ

টাঙ্গাইল-৫ (সদর আসন )
মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল, টাঙ্গাইল
  ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে চলছে সরব রাজনীতি। এ আসনে সব দলের সম্ভাব্য প্রাথীর্রা বেশ জোরেশোরে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বড় দুই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, নিবার্চনী এলাকার অলিগলিতে পোস্টার ও লিফলেট সেঁটে জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করছেন। কেউ সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের সমথর্ন ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সন্তুষ্ট করতে লবিং করছেন।

জেলা নিবার্চন কাযার্লয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে দশম সংসদ পযর্ন্ত কাকতালীয়ভাবে এ আসনে বিজয়ী প্রাথীর্র দলই সরকার গঠন করেছে। তবে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে জাতীয় পাটির্ থেকে মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান জয়লাভ করলেও পরবতীর্ সময়ে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। সে হিসেবে টাঙ্গাইল-৫ সরকার গঠনেরই আসন। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নিবার্চনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রাথীর্ আবদুল মান্নান জয়লাভ করেছিলেন। এরপর যথাক্রমে বিএনপির আবদুর রহমান (১৯৭৯), জাতীয় পাটির্র মীর মাজেদুর রহমান (১৯৮৬), জাতীয় পাটির্র মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান( ১৯৮৮), পরবতীের্ত বিএনপির মে. জে. (অব.) মাহমুদুল হাসান (১৯৯১), বিএনপির মে. জে. (অব.) মাহমুদুল হাসান (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি), আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান (১৯৯৬ সালের ১২ জুন), বিএনপির মাহমুদুল হাসান (২০০১), জাতীয় পাটির্র আলহাজ আবুল কাশেম (২০০৮) এবং আওয়ামী লীগের আলহাজ ছানোয়ার হোসেন (২০১৪) পযার্য়ক্রমে সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন।

আগামী নিবার্চনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রাথীর্র মধ্যে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা সীমাবদ্ধ থাকলেও দুটি দলেই রয়েছে ঘরোয়া কোন্দল। আওয়ামী লীগের কোন্দল কিছুটা গোপনে হলেও বিএনপির এ সমস্যা তীব্র, প্রকট ও প্রকাশ্য। এই সেদিনও আওয়ামী লীগের জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন শহরের আলোচিত ‘খান পরিবার’। খান পরিবারের চার ভাইয়ের জ্যেষ্ঠ আমানুর রহমান খান রানা এমপি মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় বতর্মানে কারাগারে রয়েছেন। একই মামলায় অপর তিন ভাই যথাক্রমে ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা আত্মগোপনে রয়েছেন। চার ভাইকেই জেলার দল ও অঙ্গ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠিত হলেও সঙ্গত কারণেই কমিটিতে তাদের স্থান হয়নি। জেলার রাজনীতি থেকে ‘খান পরিবার’ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও তাদের অনেক অনুসারী রয়ে গেছেন। অপরদিকে আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ হয়েছেন খান পরিবারের বিপক্ষ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে আসা বতর্মান পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন এবং জামার্ন প্রবাসী দুই ভাই গোলাম কিবরিয়া(বড় মনি) ও তানভীর হাসান(ছোট মনির)। বড় মনি ও ছোট মনির এক সময় মুরাদ সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। আগামি নিবার্চনে দলের প্রাথীর্ খান পরিবারের মনমতো না হলে তাদের অনুসারীরা দলীয় প্রাথীর্র বিপক্ষে কাজ করবেন বলে অনেকেই ধারণা পোষণ করেন। এ আসনের বতর্মান এমপি আলহাজ ছানোয়ার হোসেন। অনেকটা ক্লিন ইমেজের এ এমপি আগামী নিবার্চনেও মনোনয়ন চাইবেন। খান পরিবারের সমথর্ক হিসেবে তার ক্লিন ইমেজে কালিমা লেপনের চেষ্টা হলেও তিনি আওয়ামী রাজনীতির মূলধারায় নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে সচেষ্ট রয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের বতর্মান এমপি ছাড়াও মনোনয়ন প্রাথীর্ হয়ে গণসংযোগ করছেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার তিনবারের মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাহার আহমদ।

এদিকে বহুদিন থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার চেষ্টা করছেন সিদ্দিকী পরিবারের অন্যতম সদস্য মুরাদ সিদ্দিকী। এর আগে তিনি এ আসন থেকে পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ নিবার্চন করেছেন। প্রতিবারই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোট পেয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নিবার্চনে জেলার ৮টি আসনের মধ্যে তিনটিতে নিবার্চন হয়েছিল। তার একটি টাঙ্গাইল-৫(সদর)। স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মুরাদ সিদ্দিকী টিয়া প্রতীকে প্রায় ৬০ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তার আগে নবম নিবার্চনে তিনি ৪০ হাজার ৪৫৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন। মুরাদ সিদ্দিকীর সমথর্কদের ধারণা, তার প্রাপ্ত ভোটগুলো আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাপার বাইরের। তাকে যদি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে দলীয় ভোটের সঙ্গে তার ভোট যুক্ত হলে তিনি অনায়াসে এমপি নিবাির্চত হবেন। আওয়ামী লীগ থেকে তিনি এখনো কোনো গ্রিন সিগনাল পাননি, তবে দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তবে মনোনয়নের ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাজ্ঞ রাজনীতিক ফজলুর রহমান খান ফারুকের সমথর্ন যার প্রতি থাকবে তিনিই লড়বেন এ আসন থেকে- এমনটাই ধারণা আ’লীগ নেতাকমীের্দর। এ কারণে এখনো স্পষ্ট নয়, কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন। আবার আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নিবার্চনে অংশ নিলে এ আসনটি মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পাটির্র প্রাথীর্র হবে- এমন আলোচনাও আছে।

অপরদিকে জেলা শহরে বিএনপির কোন্দল এতটাই তীব্র ও প্রকট যে আগামী নিবার্চনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে- এটা স্পষ্ট। এ কোন্দল জেলা বিএনপির কমিটিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য রূপ পায়। ঘোষিত কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়া বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রায়শই ঘটছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। দু’পক্ষই আলাদা হয়ে কেন্দ্রীয় কমর্সূচি পালন করছেন। বিএনপির মূলধারার নেতা-কমীের্দর মতে কমিটিকে নিয়ে সামান্য কোন্দল হলেও আগামি নিবার্চনে প্রাথির্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। নিবার্চনে বিএনপির প্রাথীর্ হবেন মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন, কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নিবার্হী কমিটির সদস্য খন্দকার আহসান হাবিব, জেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল। তবে দলের নেতা-কমীর্রা মনে করেন মাহমুদুল হাসান হেভিওয়েট প্রাথীর্, তিনিই মনোনয়ন পাবেন। ইতোপূবের্ এ আসন থেকে তিনি চার বার এমপি নিবাির্চত হয়েছেন। তারা মনে করেন, দলে যতই কোন্দল থাকুক মাহমুদুল হাসানের নিজস্ব ঘরানার কমীর্-সমথর্করা বরাবরের মতো এবারো তার পক্ষে কাজ করে তার জয়কে নিশ্চিত করবেন।

২০১৪ সালের নিবার্চনে এ আসনে মহাজোটের পক্ষ থেকে জাতীয় পাটির্ অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম চাকলাদারকে মনোনয়ন দেয়া হলেও দলীয় প্রধান এরশাদের অনুরোধে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। পরে এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয় আওয়ামী লীগের আলহাজ মো. ছানোয়ার হোসেনকে। তিনি নিবার্চনে বিজয়ী হন। এ আসনে জাতীয় পাটির্র মনোনয়ন প্রত্যাশায় জাতীয় পাটির্র প্রেসিডিয়াম সদস্য জেলা সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কাশেম, জেলা জাতীয় পাটির্র সাবেক সভাপতি ও ২০১৪ সালের মনোনয়ন প্রাপ্ত আব্দুস সালাম চাকলাদার ও টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পাটির্র সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক গণসংযোগ করলেও দলের চেয়ারম্যান চিঠি দিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করায় পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মুনির জাতীয় পাটির্র একক প্রাথীর্ হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চনে নতুন মুখ হিসেবে আবিভূর্ত হয়ে জাতীয় পাটির্র প্রাথীর্ পীরজাদা সৈয়দ শফি উল্লাহ আল মুনির বেশ চমক সৃষ্টি করেছেন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের স্বনামধন্য মরহুম ইয়াকুব আলী পীর সাহেবের ছোট ছেলে তিনি। বাবার দরবারের আশেকান ও মুরিদান ছাড়াও অনুদানের কারণে এলাকায় দানবীর হিসেবে সুনাম রয়েছে। ইনডেক্স গ্রæপের চেয়ারম্যান পীরজাদা শফি উল্লাহ আল মুনিরকে এ আসনে ভোটের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। শফিউল্লাহ আল মুনিরের অনুসারীদের অধিকাংশই ছিলেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কমীর্। জাপা থেকে একক প্রাথীর্ ঘোষণা করায় জাতীয় পাটির্র নেতাকমীর্রাও যোগ হয়েছে তার পাশে। রাজনৈতিক বোদ্ধারা ধারণা করছেন, পীরজাদা শফি উল্লাহ আল মুনির জাতীয় পাটির্র প্রাথীর্ হলেও আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভোটে ভাগ বসাবেন। সে ক্ষেত্রে অপর স্বতন্ত্র প্রাথীর্ মুরাদ সিদ্দিকীর কপালে এবার ‘সিঁকে ছিঁড়তেও পারে’।

গত ১১ অক্টোবর নাগরিক কমিটির ব্যানারে শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে মুরাদ সিদ্দিকীর নিবার্চনী জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওই জনসভার লোক সমাগম দেখে অনেকেই ধারণা করছেন, তিনবার ধৈযর্ ধারণের ফল হয়তো তিনি এবার পাবেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় তৃণমূলের কমীর্ হিসেবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নিবার্চনে প্রথম বারের মতো মো. ছানোয়ার হোসেন সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন। নিবার্চনের পর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন ও তৃণমূল পযাের্য় সবসময় যোগাযোগ অব্যাহত রাখায় তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এলাকায় সাদা মনের মানুষ হিসেবে তার পরিচিতি রযেছে। অধিকাংশ সময় এলাকায় অবস্থান করায় সাধারণ জনগণ সহজেই তাকে কাছে পান।

আলহাজ মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ব্যক্তি ইমেজ ও সরকারের দেশের সবর্ত্র ব্যাপক উন্নয়নের কারণে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে শেখ হাসিনার ইমেজেই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। তিনি এ আসনের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভাটর্ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সকল রাস্তাঘাট পাকা হওয়ায় শহর থেকে চরাঞ্চলে যেতে কোনো বাধা এখন আর নেই। এ আসনে শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই আগামী নিবার্চনে মনোনয়ন পেলে নিশ্চিত বিজয়ী হবেন বলে আশা রাখেন।

এ আসনের হ্যাভিওয়েট প্রাথীর্ মেজর জেনারেল মাহমুদল হাসান দীঘির্দন মন্ত্রী ও এমপি থাকায় টাঙ্গাইল সদরের রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভাটর্, গ্যাস লাইন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে তার হাত দিয়ে। তাই এ আসনে তার ব্যক্তিগত ইমেজ ও দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। তিনি বলেন, এ আসনে তিনি দীঘির্দন এমপি, মন্ত্রী থাকাকালে এলাকায় সাবির্ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্রিজ, কালভাটর্, কৃষি সেচসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। মাহমুদুল হাসান শিক্ষা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষাথীর্রা বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। এসব কমর্কাÐ এলাকার মানুষ মনে রেখেছে। তাই এসব কমর্কাÐ মনে রেখে এলাকার ভোটাররা ধানের শীষ প্রতীকে তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।

টাঙ্গাইলের সিদ্দিকী পরিবারের সন্তান সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী এ আসনে শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী। তিনি ২০০১ ও ২০০৮ সালে গামছা প্রতীক নিয়ে নিবর্চন করলেও ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে টিয়া প্রতীকে নিবার্চনে অংশ নেন। তিনটি নিবার্চনেই তিনি উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়ে শক্তিশালী প্রাথীর্ হিসেবে আবিভ‚র্ত হন। এছাড়া নিবার্চনে পরাজিত হয়েও প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিন দিন তৃণমূলের নেতাকমীের্দর বাড়ি বাড়ি গিয়ে দীঘির্দন ধরে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বতর্মানে তিনি স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে বড় বড় সভা-সমাবেশ করে চলেছেন। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সারা পড়েছে। এ বিষয়ে মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, তিনি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। ইচ্ছে করলেই তাকে আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা করার সুযোগ নেই। তিনি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। তাই এবার এ আসনে জনগণের মধ্যে যে সাড়া পড়েছে তাতে বিপুল ভোটে তিনি বিজয়ী হতে পারবেন বলে আশা করছেন।

এ আসনে জাপা প্রাথীর্ ইনডেক্স গ্রæপের প্রধান নিবার্হী পীরজাদা শফিউল্লা আল মুনির বলেন, তার প্রয়াত পিতার নিদের্শ অনুসারে তিনি আমার ব্যবসার লভ্যাংশের একটি অংশ জনকল্যাণে ব্যয় করেন। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আথির্ক সহায়তা করায় এলাকার লোকজন, জনপ্রতিনিধিরা তাকে সংসদ নিবার্চনে অংশগ্রহণের অনুরোধ করেছেন। তাদের অনুরোধ এবং মানুষের জন্য আরো বেশি কাজ করার ইচ্ছে থেকেই তিনি নিবার্চনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি হেলিকপ্টার নিয়ে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে গণসংযোগে অংশ নেয়ায় গ্রামের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী টাঙ্গইল পৌরসভার তিনবারের সফল মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন বলেন, তিনবারের মেয়র হিসেবে টাঙ্গাইল পৌর এলাকার মানুষের মাঝে রয়েছে তার পারিবারিক সম্পকর্ ও ভোট ব্যাংক। ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চনে দলের পক্ষে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখায় ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ও নিবাির্চত চেয়ারম্যান- মেম্বারদের সাথেও রয়েছে গভীর সম্পকর্। তাই এ আসনে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নেত্রীকে আসনটি উপহার দিতে পারব।

আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের স্ত্রী নাহার আহমদ প্রাথির্তা ঘোষণা করে গণসংযোগ করছেন। তিনি বলেন, দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে তিনি এ আসন থেকে বিজয়ী হবেন। আর তিনি বিজয়ী হলে টাঙ্গাইলকে সন্ত্রাস মুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও শেখ হাসিনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পেঁৗছে দেবেন।

এ আসনের বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু গণসংযোগ শুরু করায় যুব ও ছাত্র সমাজের মধ্যে ব্যাপক সারা ফেলেছে। বতর্মানে তিনি করাবন্দি রয়েছেন। তিনি নিবার্চনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছেন বলে তার অনুসারীরা জানান। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলে বিএনপির ঘঁাটি হিসেবে টাঙ্গাইল সদর আসন আবার পুনরুদ্ধার করতে পারবেন বলে দাবি।

বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির নিবার্হী সদস্য অ্যাডভোকেট খন্দকার আহসান হাবিব এ আসনে দীঘির্দন ধরে গণসংযোগ করছেন। তিনি বলেন, তিনি আগেই স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি ছিলেন। এলাকার জনগনের সাথে তার রয়েছে নিবিড় সম্পকর্। দল তাকে মনোনয়ন দিয়ে তিনি অবশ্যই বিজয়ী হবেন।

জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ছাইদুল হক ছাদুও মনোনয়ন লাভের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন। এ কারণে তিনি নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করছেন। তিনি ২০০৪ সালের পৌরসভার নিবার্চনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, শহর বিএনপির নিবাির্চত সভাপতি দীঘির্দন দলীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, তিনি ১/১১ সহ দলের সকল দুঃসময়ে দলীয় সকল কমর্কান্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। কাজেই দল তাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক বিজয়ী হবে।

এ আসনে বরাবরের মতো এবারও স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হবেন সৈয়দ খালেদ মোস্তফা। তিনি দীঘির্দন থেকে পায়ে হেটে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। তিনি বলেন, তিনি এখনও স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে জনগনের কাছে ভোট প্রাথর্না করছেন। তবে তিনি খেলাফত মজলিসের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলীয় মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হওয়ার শতভাগ আশাবাদী তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কমীর্রা। দলীয় কাযর্ক্রম থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানও তারা বণার্ঢ্যভাবে আয়োজন করছেন। অন্যদিকে হামলা-মামলায় পযুর্দস্ত বিএনপি এখনো গা-ঝাড়া দেয়নি। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূণর্ নিবার্চনের আশায় নীরবে প্রতীক্ষা করছে বিএনপির সমথর্করা। এদিকে টাঙ্গাইলের প্রতাপশালী সিদ্দিকী পরিবারের শেষ প্রদীপ মুরাদ সিদ্দিকীর কমীর্-সমথর্করাও অপেক্ষা করছেন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূণর্ নিবার্চনের।

এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৭৪ হাজার ৬৫২ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৮৮ হাজার ৫০৪ জন ও পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮৬ হাজার ১৪৮ জন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<19430 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1