শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের নিবার্চনে কি ভারত প্রভাব খাটায়?

বিবিসি প্রতিবেদন
যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ০৪ জুলাই ২০১৮, ০০:৫২

বাংলাদেশে সাধারণ নিবার্চনের যখন আর মাত্র কয়েক মাস বাকি, তখন সে দেশের মন্ত্রী, নীতিনিধার্রক বা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও হঠাৎ করে খুব ঘন ঘন দিল্লি যাতায়াত শুরু করেছেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিÑ এই দুই প্রধান দলের নেতারাই সম্প্রতি ভারতে গিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন, মতবিনিময় করছেন নানা থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গেও।

বাংলাদেশে এমন একটা ধারণা আছে যে, সে দেশের নিবার্চনে ভারত সব সময় একটা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেÑ কিন্তু বাস্তবেও কি ঘটনাটা তাই?

বাংলাদেশের আসন্ন নিবার্চনে ভারতের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমারকে যখন মাত্র দিনচারেক আগে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি স্পষ্টভাবে তা নাকচ করে দিয়েছিলেন।

তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যে কোনো দেশে নিবার্চন হোক না কেন সেটা সম্পূণর্ তাদের নিজস্ব ব্যাপারÑ সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নাক গলানোর কথা ভারত কখনো স্বপ্নেও ভাবে না। ঘরের পাশে বাংলাদেশের জন্যও একই কথা খাটে।’

তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে দুই প্রধান দলই যেভাবে দিল্লির সমথর্ন আদায়ের জন্য সক্রিয় উদ্যোগ নিচ্ছে, তাতে বাংলাদেশে এই ধারণাটাই জোরালো হচ্ছে সে দেশের নিবার্চনী রাজনীতিতে ভারতের একটা ভূমিকা অবশ্যই আছে।

ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাকরঞ্জন চক্রবতীর্ এটাকে নাক গলানো বলতে রাজি ননÑ তবে তিনি মনে করেন ভারত অবশ্যই ঢাকাতে নিজেদের পছন্দের দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।

‘প্রভাব যদি বলেন তাহলে এটুকু অবশ্যই বলব কোন সরকার সে দেশে ক্ষমতায় আসলে আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়বে সেই বিবেচনায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হয়তো থাকে। কোন সরকার এলে আমাদের সুবিধা হবে, আমাদের প্রোজেক্টগুলো ঠিকমতো চলবে এটা অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর থাকে।’

‘আর সেই দিক থেকে দেখলে যদি আওয়ামী লীগ আর বিএনপি’র মধ্যে তুলনা করে একটা ব্যালান্স শিট তৈরি করা হয়, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই যে, আওয়ামী লীগের আমলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সদ্ভাব বাড়ে, কাজও ভাল হয়। অন্য দিকে বিএনপি-র একটা ভারত-বিরোধী দৃষ্টিকোণ এখনো আছে, আর পাকিস্তানপন্থি শক্তি জামায়াতের সঙ্গে তাদের অঁাতাতও আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যা’, বলছিলেন সাবেক ওই ক‚টনীতিক।

প্রধানমন্ত্রী হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এইচ টি ইমাম এ সপ্তাহেই দিল্লিতে যাচ্ছেন ভারত সরকারের সংস্থা আইসিসিআরের প্রধান ড. বিনয় সহগ্রবুদ্ধের আমন্ত্রণে।

ক্ষমতাসীন বিজেপির এই সহ-সভাপতি তথা এমপি বিবিসিকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েই ভারতের সঙ্গে কেন সুসম্পকর্ চাইছে তার কারণ বোঝা শক্ত নয়।

বিজেপির এই ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিশ্বাস করেন, ‘নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বতর্মান সরকার যে আন্তরিকতা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পকর্ গড়ে তুলতে চেয়েছেন, তাতে শুধু বাংলাদেশের রাজনীতিকরা ননÑ সে দেশের মানুষজনরাও মুগ্ধ। ফলে এটা স্পষ্ট যে সে দেশের ভোটাররাও এমন দলকেই ক্ষমতায় দেখতে চান, যারা ভারতের সঙ্গে একটা প্রাণবন্ত সম্পকর্ গড়ে তুলবে।’

অথার্ৎ বিজেপি মনে করছে, ভারত-বিরোধিতা নয়Ñ বরং ভারতের সঙ্গে সুসম্পকর্ই এখন বাংলাদেশের দলগুলোকে নিবার্চনী ফায়দা দেবে এই ধারণা থেকেই দিল্লির সঙ্গে সম্পকর্ নতুন করে ঝালিয়ে নেয়ার চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে বিএনপি এটাও বিশ্বাস করে যে, ভারতের জোরালো সমথের্নর সুবাদেই শেখ হাসিনার বতর্মান সরকার পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারছে।

যদিও পিনাকরঞ্জন চক্রবতীর্ বলেন, সেটাই হাসিনার সরকারের টিকে যাওয়ার একমাত্র কারণ হতে পারে না।

তার কথায়, ‘হ্যঁা, ভারত শেখ হাসিনাকে সমথর্ন করেছে ঠিকই, কিন্তু তার সরকারের একটা জোরালো সাংবিধানিক বৈধতা ছিল এটাও মনে রাখতে হবে। কেউ একটা নিবার্চন বয়কট করলেই সেটা সম্পূণর্ অথর্হীন হয়ে যেতে পারে না।’

পছন্দের সরকারকে সমথর্ন দিলেও ভারত বাংলাদেশের নিবার্চনী প্রক্রিয়াতেও হস্তক্ষেপ করে থাকে বলে বাংলাদেশে যে প্রচার আছে, তাকে অবশ্য মোটেই আমল দিতে রাজি নন তিনি।

পিনাকরঞ্জন চক্রবতীর্ বলেন, ‘প্রচার তো ওখানে অনেকেই অনেক কিছু করে, তা তো আর আমরা রুখতে পারব না। কিন্তু আমি যতদূর জানি, ভারত বাংলাদেশের নিবার্চনে কখনো সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। প্রভাব খাটানো বলতে ভারত হয়তো বড়জোর নিজের পছন্দের সরকারকে চেয়েছেÑ যাতে কোনো অন্যায় নেই। দুনিয়ার সব দেশই তাই করে, আর সেটা আন্তজাির্তক রাজনীতিরই অংশ’, বলছিলেন মি চক্রবতীর্।

অথার্ৎ ভারতের পযের্বক্ষকদের বিশ্বাসÑ বাংলাদেশের নিবার্চনী রাজনীতিতে ভারতের যেটুকু প্রভাব তা মনস্তাত্তি¡ক বা ক‚টনৈতিক, সেখানে পছন্দের দলকে ভোটে জিততে সাহায্য করবে আগ বাড়িয়ে এমন কোনো পদক্ষেপ ভারত নেয়নি বা নেবে না। বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে