শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রূপনগর বিস্ফোরণে আহতরা কাতরাচ্ছে হাসপাতালে

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীর রূপনগরে গ্যাসবেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেলুন বিক্রেতা আবু সাঈদ -বিডিনিউজ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ও ক্যাজুয়ালটি কমপেস্নক্সের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ২৩ নম্বর বেড। একটু পর পর ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠছেন বেলুন বিক্রেতা আবু সাঈদ। তাকে দেওয়া হচ্ছে ব্যথানাশক ইনজেকশন। পাশেই চোখ মুছছেন তার স্ত্রী।

গত ৩০ অক্টোবর বিকালে মনিপুর স্কুলের রূপনগর শাখার বিপরীত দিকে ১১ নম্বর সড়কে শিয়ালবাড়ি বস্তির পাশে তারই গ্যাসবেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে সাত শিশুর মৃতু্য হয়, আহত হয় অন্তত ২০ জন। সেদিন থেকেই হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন আহত সাঈদ।

বিস্ফোরণের ঘটনায় রূপনগর থানায় যে মামলা হয়েছে, তার একমাত্র আসামি এই বেলুন বিক্রেতা। বিস্ফোরকদ্রব্য আইন বা গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহারবিধি নিয়ে যার কোনো ধারণাই নেই।

ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল মনোয়ার হোসেন বলেন, 'উনার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো, তবে এক হাতে সমস্যা আছে। আপাতত তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।'

এই বিপদে আবু সাঈদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের প্রতিবেশী আবু জাহিদ। হাসপাতালে তিনি বলেন, 'ডাক্তার বলেছে, বাঁ হাতের আঙুল কেটে বাদ দিতে হবে।'

চিকিৎসা নিয়ে খানিকটা আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, 'এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ব্যান্ডেজ করাতেও ৫০০ টাকা নেয়।'

একই ওয়ার্ডের ১২ নম্বর বেডে শুয়ে ব্যথায় কাঁদছেন রিকশাচালক জুয়েল সরদার (২৯)। সেদিন বাচ্চার জন্য বেলুন কিনতে গিয়ে বিস্ফোরণে তার বাঁ হাত ভেঙে যায়। গত মঙ্গলবার ওই হাতে অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসকরা।

সেদিনের ঘটনার বর্ননা দিয়ে জুয়েল বলেন, 'আমি বাচ্চার জন্য বেলুন কিনতে গেলাম, তারপর বেলুনওয়ালা বলল তার কাছে গ্যাস নেই। বলেই সে তার সিলিন্ডারে ছাইয়ের মতো কী জানি একটা দিল। আমিও দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম, তারপর হঠাৎ বিস্ফোরণ হলো।'

এই কষ্টের মধ্যেও সান্ত্বনা খুঁজে তিনি বলেন, 'ভাগ্যিস আমার বাচ্চাগুলো আমার সঙ্গে ছিল না। নিজের কষ্ট সহ্য করতে পারতেছি, কিন্তু ওদের কিছু হইলে বাঁচতাম না।'

ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের পাশেই বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৫ বছর বয়সি জান্নাত বেগম। পেশায় গৃহকর্মী। এই নারী সেদিন বিস্ফোরণে হারিয়েছেন তার ডান হাত।

তার স্বামী রিকশাচালক মো. নজরুল বলেন, সেদিন বিকালে জান্নাত বাজার করতে যাচ্ছিলেন। পাশেই ঘটনাটি ঘটে। বিস্ফোরণে ওই জায়গাতেই তার ডান হাত শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়।

'এখানে চিকিৎসা চলছে। মঙ্গলবার বিকালে ইমার্জেন্সি থেকে এই খানে (বার্ন ইউনিট) ট্রান্সফার করেছে। অপারেশন লাগবে কিনা ডাক্তার কিছু বলে নাই। তবে রোজ এসে দেখে যায়। ওষুধ আর ইনজেকশন দিচ্ছে প্রতিদিন।'

ওই বিস্ফোরণে এক চোখ হারানো ছয় বছরের মো. মোস্তাকিনের চিকিৎসা চলছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। রূপনগরের ৯ নম্বর রোড মডেল স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত সে।

মোস্তাকিনের বাবা মফিজুরের রহমান কাজ করেন একটি পস্নাস্টিক কারখানায়। তিনি টেলিফোনে জানান, তার ছেলের ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ডান পা ভেঙে গিয়েছে, পুড়ে গেছে শরীরের অনেকটা অংশ। শনিবার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা।

রূপনগরের মাদ্রাসা ছাত্র আট বছর বয়সি জনি সেই বিস্ফোরণে দুই চোখই হারিয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে শ্যামলীর চক্ষু হাসপাতালে।

তার বাবা রিকশা গ্যারেজের শ্রমিক মো. সুলতান জানান, জনির মুখের অনেকটা অংশ পুড়েও গেছে। তিন দিন সে অচেতন ছিল।

মন্ত্রণালয়ের চার সুপারিশ

রূপনগর বিস্ফোরণের পর এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সরকারের কাছে চার দফা সুপারিশ করেছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর।

পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. সামসুল আলম বলেন, 'ওই ঘটনা তদন্ত করে বুধবার বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। হাইড্রোজেন ভর্তি বেলুন নিষিদ্ধেও সুপারিশ করেছি আমরা।'

এ কর্মকর্তা জানান, বেলুনের জন্য কস্টিক সোডা ও অ্যালুমিনিয়াম পাউডার নিয়ে হাইড্রোজন গ্যাসের রিঅ্যাক্টর বানায় এক শ্রেণির হকার। এ ধরনের একটি সিলিন্ডারই রূপনগরে বিস্ফোরিত হয়েছে।

পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-শিশু কিশোরদের জন্য হাইড্রোজেন বেলুন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অভিভাবকদের সতর্ক করতে হবে।

হাইড্রোজেন বেলুন বিক্রেতাদের পেলেই থানায় সোপর্দ করতে হবে।

হাইড্রোজেন বেলুন নিষিদ্ধ করা যায় কিনা-সেটাও দেখার সুপারিশ করেছে পরিদপ্তর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<74834 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1