শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মদ্রিচদের মানসিকতায় মুগ্ধ দালিচ

ক্রীড়া ডেস্ক
  ০৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
রোববার রাতে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে ডেনমাকের্র বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জয়ের পর এভাবেই গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচের সঙ্গে উচ্ছ¡াসে মেতে ওঠেন লুকা মদ্রিচ (বামে) Ñওয়েবসাইট

বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় টাইব্রেকারে ডেনমাকের্ক ৩-২ গোলে হারিয়ে কোয়াটার্র ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপের দলটিকে কখনো এই পরীক্ষা দিতে হয়নি, তাই স্নায়ুচাপ বেশি ছিল মদ্রিচ-রাকিতিচদের ওপরই। অথচ অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের সময় মদ্রিচ পেনাল্টি মিস না করলে এমন পরীক্ষার মুখে পড়তেই হতো না ক্রোয়েশিয়াকে। দৃঢ় মানসিকতার পরিচয় দিয়ে সেই পরীক্ষায় উতরে গেছে রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘কালো ঘোড়া’ খেতাব পাওয়া দলটি। শিষ্যদের এমন মানসিকতা মুগ্ধ করেছে দলীয় কোচ জালাতকো দালিচকে।

১১৬ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি মিস করেন মদ্রিচ। তাতে নিধাির্রত এবং অতিরিক্ত সময়ের খেলা ১-১ গোলে সমতায় শেষ হয়। শুরু হয় স্নায়ুক্ষয়ী টাইব্রেকার। টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম শট ঠেকিয়ে দেন ড্যানিশ গোলরক্ষক ক্যাসপার সেমিচেল, ঠেকিয়ে দেন চতুথর্ শটটিও। তবে টাইব্রেকারে দুদার্ন্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক সুবাসিচ। ডেনমাকের্র তিনটি শট রুখে দেন তিনি। এরপর পঞ্চম শট নিয়ে সফল হন ইভান রাকিতিচ, ক্রোয়েশিয়া উঠে যায় কোয়াটার্র ফাইনালে।

ম্যাচে পাওয়া পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যথর্ হলেও টাইব্রেকারে ঠিকই লক্ষ্যভেদ করেছেন মদ্রিচ। দলের প্রতি এই মিডফিল্ডারের নিবেদন প্রসঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার কোচ দালিচ বলেছেন, ‘অতিরিক্ত সময়ে ব্যথর্ হওয়ার পর টাইব্রেকারে তার শট নেয়ার সংকল্পে আমি মুগ্ধ। সে একজন সত্যিকারের অধিনায়কের মতো দায়িত্ব নিয়েছে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, যদি সে গোল না করত? তারপরও আমি বলব সে একজন দারুণ খেলোয়াড়।’

পেনাল্টি থেকে গোল করতে মদ্রিচ ব্যথর্ হওয়ার পর ২০০৮ সালের ইউরোর কোয়াটার্র-ফাইনালের স্মৃতি মনে পড়ছিল দালিচের। সেই ম্যাচে টাইব্রেকারে ব্যথর্ হয়েছিলেন মদ্রিচ। তাতে তুরস্কের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। সেই স্মৃতি সামনে টেনে দালিচ বলেছেন, ‘মদ্রিচ পেনাল্টি মিস করার পর আমরা সবাই ভিয়েনায় ফিরে গিয়েছিলাম এবং ওই পরিস্থিতি যেখানে আমরা ২০০৮ সালে পড়ে শেষ পযর্ন্ত ম্যাচটাতে হেরেছিলাম। কিন্তু আপনার বিশ্বাস থাকতেই হবে। সদয় ঈশ্বর আমাদের প্রতিদান দিয়েছেন। ভাগ্য ছাড়া আপনি জীবনে কিছুই করতে পারবেন না। লুকা মদ্রিচ পেনাল্টি শুটআউটে গোল পাওয়ায় আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলাম।’

বুদ্ধিমত্তার এই টাইব্রেকার খেলাতে হয়তো দুই-একটি শট ঠেকিয়ে দেয়া সম্ভব। তবে ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক সুবাসিচ রোববার রাতে তিন-তিনটি পেনাল্টি শট রুখে দিয়েছেন। তার অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যেই শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে ডেনমাকের্ক টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে কোয়াটার্র ফাইনালে নাম লিখিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপের ইতিহাসে তিনটি পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দেয়ার ঘটনা বিরল। ২০০৬ সালে প্রথম গোলক হিসেবে এই কীতির্ গড়েছিলেন পতুর্গালের রিকাডোর্। সুবাসিচ দ্বিতীয় গোললক্ষক হিসেবে তার সঙ্গে জায়গা করে নিলেন।

ম্যাচশেষে দালিচ তাই বলে দিলেন, জয়ের নায়ক আর কেউ নন, সুবাসিচ, ‘আজ রাতে সে ছিল আমাদের ম্যাচ জয়ের অন্যতম নায়ক। সে তিনটি পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দিয়েছে। আপনি তো প্রতিদিন এমন কিছু করে দেখতে পারবেন না। তবে সুবাসিচ আজ সবাইকে ছাপিয়ে গেছে। পুরো ম্যাচে তাকে একবারের জন্যও বিচলিত হতে দেখা যায়নি।’

এই জয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের শেষ আটে নাম লেখাল ক্রোয়েশিয়া। এরই সঙ্গে তারা মনে করিয়ে দিল সুকার-বোবান-প্রসিনিস্কিদের সেই সোনালি প্রজন্মকে। ’৯৮ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে সেমিতে তুলেছিলেন তারা। মদ্রিচ-সুবাসিচ-রাকিতিচদের প্রজন্ম যেন তাদের দেখানো পথেই হঁাটছে! আগামী শনিবার সোচিতে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় শেষ আটের ম্যাচে স্বাগতিক রাশিয়ার মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে