এশিয়া কাপের ফাইনালে ৩৩ রানের ইনিংসেও বাহবা পাননি সৌম্য সরকার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের বাংলাদেশ স্কোয়াডে তাকে প্রয়োজন মনে করেনি নিবার্চকরা। এবার উপেক্ষার জবাবটা দিয়েছেন বাহাতি ব্যাটসম্যান। শুক্রবার বিকেএসপিতে প্রস্তুতি ম্যাচে তার হার না মানা সেঞ্চুরিতে (১০২) ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে বিসিবি একাদশ। সফরকারীদের বিপক্ষে বিসিবি একাদশের বড় জয়ে দারুণ ভ‚মিকা রেখেছেন জাতীয় দলে না থাকা ডানহাতি পেসার ইবাদত হোসেনও। সেখানে ব্যথর্তার পরিচয় দিয়েছেন প্রথমবার দলে সুযোগ পাওয়া ফজলে মাহমুদ রাব্বি। বলার মতো কিছু করতে পারেননি আরিফুল হক। তবে কিছুটা আলো ছড়িয়েছেন দলে ফেরা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে সফরকারীদের দেয়া ১৭৯ রানে লক্ষ্য স্বাগতিকরা টপকে (১৮১) গেছে কেবল ২ উইকেট হারিয়েই। জাতীয় দলের বাইরে চলে যাওয়া সৌম্য খেলেছেন ১০২ রানের অপরাজিত ইনিংস। পেসার হান্টের আবিস্কার ইবাদত হোসেনের পেস আগুণে পুড়েছে জিম্বাবুয়ে। ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। অনুশীলন ম্যাচে জিম্বাবুয়ের এই হতশ্রী চেহারার মধ্যেও হ্যামিল্টন মাসাকাদজা সেঞ্চুরি (১০২) করে মাশরাফিদের বাতার্ও দিয়ে রাখলেন। রোববার মিরপুরে শুরু হবে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। ঢাকায় নেমেই সিরিজে দারুণকিছু করার কথা জানানো হয় সফরকারী দলের দিক থেকে। কিন্তু মাশরাফি-মুশফিকের সঙ্গে আসল লড়াইয়ে নামার আগে বিসিবি একাদশের কাছেই আত্মসমপর্ণ করল জিম্বাবুয়ে।
৫০ ওভারের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের কাজটা সহজ করে দেন টাইগার পেসাররা। বিশেষ করে ইবাদত ও সাইফউদ্দিন মিলে। নাগালে থাকা লক্ষ্য বিসিবি একাদশ টপকে যায় ৩৯ ওভারে। যেখানে হেড কোচ, স্পিন কোচ ও প্রধান নিবার্চকের সামনে ঝলমলে সেঞ্চুরি করে জাতীয় দলে ফেরার দাবির মঞ্চ বানান সৌম্য। নিবার্চকদের পরীক্ষায় উতরে যাওয়ায় পাচ্ছেন ইয়েস কাডর্। বিবেচ্য হচ্ছেন টেস্টে। এক বছর পর টেস্ট দলে ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছেন, সে আভাসই দিয়েছেন প্রধান নিবার্চক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, ‘সৌম্য সরকারের ব্যাটিংটা যথেষ্ট ভালো লেগেছে। আমি মনে করি ওর যেই ব্যাড প্যাচ ছিল, সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। লাস্ট এনসিএল ম্যাচটা ও যথেষ্ট ভালো খেলেছে। আমার বিশ্বাস ফমের্ ফিরে এলে আবার অতি সত্বর টিমে ফিরে আসবে।’
সৌম্যর জন্য ওপেনিংয়ে ¯øট খালি আছে, তাও জানিয়েছেন নান্নু, ‘সৌম্য আমাদের চোখের আড়াল হয়নি। ও তো আমাদের ৩০ জনের পুলের মধ্যেই আছে। আমরা একটা প্রসেসের মধ্যে আছি। এই জিম্বাবুয়ে সিরিজের স্কোয়াডে আমাদের কিছু খেলোয়াড়কে দেখতে হচ্ছে। সৌম্য সরকারকে যদি দরকার হয়, সবসময় বলি দেশের জন্য কাউকে দরকার হলে তাঁকে সবসময় নেয়া হবে। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। ৩০ জন পুলের মধ্যে আছে, যাকে যখন দরকার হবে তখন দেখবেন তাকেই আমরা সুযোগ দিচ্ছি।’
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বিসিবি একাদশের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। মিজানুর রহমান রানআউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান মাত্র ৮ রান নিয়ে। সৌম্যর সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি ফজলে রাব্বি। ধীরগতির ব্যাটিংয়ের পর মিডঅফে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এ বাঁহাতি (১৩)। ৫২ রানে ২ উইকেট হারানোর পর বড় জুটি গড়েন সৌম্য ও মোসাদ্দেক। জুটি একশ পাড়ি দেয়ার পর স্বেচ্ছা-অবসরে যান মোসাদ্দেক (৩৩)। সৌম্য শেষ পযর্ন্ত অপরাজিত থাকেন। তার অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংস ১১৪ বলে সাজানো, যাতে ১৩ চারের সঙ্গে আছে একটি ছয়।
জাতীয় লিগের প্রথম রাউন্ডে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তৃতীয় রাউন্ডে দুই ইনিংসেই সত্তর ছাড়ানো ইনিংস। সঙ্গে বল হাতে নিয়েছেন ৫ উইকেট। সেঞ্চুরি পেলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। স্বভাবতই ছন্দে ফেরার আভাস দেয়া এই সেঞ্চুরিটা সৌম্যর কাছে স্পেশাল, ‘চেষ্টা করেছি বেশি সময় ক্রিজে থেকে ব্যাটিং করার। একটা সময় চিন্তা ছিল যে, বাইরে আছি, দলে ফিরতে আমাকে ভালো করতে হবে। এখন চেষ্টা করি, তেমন কোনো চিন্তা না করে নিজের খেলাটা খেলতে।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘সেঞ্চুরি তো অবশ্যই স্পেশাল। কিছু একটা ত্যাগ করে কিছু একটা পাওয়া তো অবশ্যই স্পেশাল।’
এর আগে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার বড় ইনিংসের পরও দুইশ পার করতে পারেনি টস জিতে ব্যাটিং নেয়া জিম্বাবুয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখে ১৩৮ বলে ১৪ চার এক ছক্কায় সাজানো মাসাকাদজার ১০২ রানের ইনিংসটি থামে ইবাদতের বলে বোল্ড হয়ে। ডানহাতি এই পেসার ১৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। ৩ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এই তরুণ বুঝিয়ে দিয়েছেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মূল লড়াইয়ের জন্যও প্রস্তুতি তিনি। জিম্বাবুয়েও বুঝে গেছে, সাকিব-তামিমহীন বাংলাদেশের বিপক্ষেও কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
দ্বিতীয় সারির দলের সঙ্গেই পেরে উঠেনি জিম্বাবুয়ে, লড়াইটাও ঠিকভাবে গড়তে পারেনি তারা। ৪৫.২ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে করেছে ১৭৮ রান। ৪৫ রানে পথম ৫ উইকেট হারায় তারা, শেষ ৫ উইকেট হারায় মাত্র ৭ রানে। মাঝে মাসাকাদজা আর এলটন চিগুম্বুরার ১২৪ রানের জুটিটাই বড় লজ্জা থেকে বাচিয়েছে সফরকারীদের। মাসাকাদজা ছাড়া কেবল চিগুম্বুরাই (৪৭) দুই অঙ্ক ছুতে পেরেছেন।