একসময় তামিম ইকবালকে বলা হতো বুম বুম তামিম। সেখান থেকে তিনি এখন দেশসেরা ওপেনার। ব্যাট হাতে দলের প্রধান ভরসা যে তিনিই। ব্যাট হাতে দেশের অনেক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের
মতো কোনো বাংলাদেশি হিসেবে ১৩ হাজার রানের মালিক এখন অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল।
সার্বিক দিক বিবেচনা করে তামিমকে অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে মনে করেন। তার প্রমাণ মাঠে হরহামেশাই দিয়ে যান তিনি। ব্যাট হাতে দীর্ঘ এক যুগ ধরে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে যাচ্ছেন তামিম। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৩ হাজার রান স্পর্শ করেছেন তামিম। একইসঙ্গে বিশ্বের ৫০তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৩ হাজার রান করাদের এলিট ক্লাবে যোগ দিলেন তিনি।
টি২০, এক দিনের ম্যাচ ও লং ভার্সন মিলে তার রান এখন ১৩০১৪। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তামিমের বর্তমান সংগ্রহ টেস্টে ৪৪০৫, ওয়ানডেতে ৬৮৯২ এবং টি২০তে ১৭১৭ রান।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পুনরাবৃত্তি ঘটাননি তামিম ইকবাল। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৩ রান করে সাজঘরে ফিরলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ফর্মে ফেরার জানান দিয়ে থেমেছেন ৩৪ রানে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি টেস্টে নামার আগে তামিমের রান ছিল ১২ হাজার ৯৭৩। গতকাল রোববার একমাত্র টেস্টের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ব্যক্তিগত ২৭ রানে পৌঁছলেই তার পূরণ হয়ে যায় ১৩ হাজার রান।
তবে ঘরের মাঠে মাইলফলকের এদিনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি বামহাতি এ ব্যাটসম্যান। দারুণ ইনিংস খেলার প্রতিশ্রম্নতি দেয়া তামিম দলীয় ৯৬ রানের মাথায় অর্ধশতক থেকে মাত্র ৯ রান দূরে থেকে ৪১ রান করে ত্রিপানোর বলে চাকাভার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন।
১৩ হাজার থেকে ২৭ রান দূরে বলে এই বাঁহাতি ওপেনারকে ঘিরে ছিল স্বপ্ন। তামিমের জন্য অভিনন্দন লেখা ব্যানারটি তাই সঙ্গে এনেছিলেন সমর্থকরা। ব্যাট হাতে ড্রেসিংরুম থেকে উইকেটে যাবার পথে ওই ব্যানারটি দেখে ভক্তদের ইশারায় দিয়েছিলেন কথা। দর্শকের অভিনন্দনে রেখেছেন সেই কথা। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৬ হাজার রান পূর্ণ করেছেন তামিম শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। ২ বছর পর সেই ভেনু্যতেই তামিম রোববার পা দিয়েছেন আর একটি মাইলফলকে।
শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কদিন আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে করেছেন ইতিহাস। ১৩ বছর আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রকিবুলের একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ডকে রাখতে দেননি অক্ষত। সর্বোচ্চ ৩৩৪ রানের নট আউট ইনিংসে নিজেকে তুলেছেন অন্য উচ্চতায়। ২০ দিন পর সেই ভেনু্যতেই পৌঁছে গেছেন আর একটি মাইলস্টোনে। একসময়ে ছিলেন ব্যাটিং শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে সাকিবের প্রতিদ্বন্দ্বী।
বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যানেরই নেই এমন কৃতিত্ব। এমনকি ১৩ হাজার তো দূরে থাক, ১২ হাজারেও নেই কেউ। তার পেছনে আছেন আইসিসি কর্তৃক সবধরনের ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সাকিব আল হাসান। তার রান ১১ হাজার ৭৫২। এছাড়া আন্তর্জাতিক ম্যাচে দশ হাজারের বেশি রান করা অন্য ব্যাটসম্যান হলেন মি. ডিপেন্ড্যাবল খ্যাত মুশফিকুর রহিম (১১৫৭৫)।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তামিমের টেস্ট রেকর্ডটা তার ভালোই। ২ সেঞ্চুরি, ১ ফিফটি। তবে অতীতের এই রেকর্ড থেকে টনিক নিতে পারেননি তামিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বশেষ সেঞ্চুরিটি তার ১২ মাস আগে। তিন ফরমেটের ক্রিকেটে ২১ সেঞ্চুরিতেই আটকে আছেন তামিম। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরির পর কেটে গেছে হাফ সেঞ্চুরিহীন ৮ মাস। পরবর্তী মাইলস্টোনের জন্য যে নিজেকে চেনারূপে ফিরিয়ে আনতে হবে।