শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৮ বছরেও লেনদেন হয়নি পঁুজিবাজারের ট্রেজারি বন্ডের

যাযাদি রিপোটর্
  ০২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

গত ১৮ বছরেও লেনদেন হয়নি পঁুজিবাজারের ৫৪ হাজার কোটি টাকার ট্রেজারি বন্ড। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত হয় ২০০৫ সালে। এরপর দীঘর্ সময় পার হলেও একটি বন্ডেরও লেনদেন হয়নি।

যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারিগরি ত্রæটির কারণেই লেনদেন সম্ভব হয়নি। ডিএসইতে বতর্মান ২২১টি ট্রেজারি বা সরকারি বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে। এই বন্ডগুলোর ইস্যুয়ার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্ব পালন করছে। এগুলো ৫, ১০, ১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদি। তালিকাভুক্ত বন্ডে ৮.৫ থেকে ১৩ শতাংশ সুদ প্রদানের কথা। প্রতিটি বন্ডের ফেসভ্যালু এক লাখ টাকা। অথার্ৎ কেউ যদি বন্ড কেনে তাহলে সে মেয়াদপূতির্ পযর্ন্ত নিদির্ষ্ট হারে সুদ পেয়ে থাকেন। আর মেয়াদপূতিের্ত বন্ড ভাঙিয়ে নগদ টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন।

তবে খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে শুধু ক্রটি না, বিনিয়োগকারীদের বন্ডে বিনিয়োগের বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। বাধা এনবিআরের প্রজ্ঞাপনও। যার কারণে ১৮ বছর পার হতে চললেও কোনো লেনদেন নেই বন্ড মাকেের্ট। অন্যদিকে ডিএসইর বাজার মূলধনের প্রায় ১৪ শতাংশ এই লেনদেন অযোগ্য ২২১টি বন্ড। ফলে বাজার মূলধন হিসেবেও রয়েছে গরমিল। কারণ এই বন্ডের মধ্যে অনেকগুলোরই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তবে কারিগরি ত্রæটি এবং এনবিআরের প্রজ্ঞাপনের বাধা খুব দ্রæত কাটিয়ে লেনদেন হতে যাচ্ছে বন্ড। এমনটি জানিয়েছেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম মাজেদুর রহমান। গত এপ্রিলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। সেখানে বিএসইসি বন্ডের বিষয়টি উত্থাপন করেন। পরে এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সঙ্গে ডিএসইর বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে।

ডিএসই কয়েক বছর ধরে বন্ড মাকের্ট চালু করার বিষয়ে দৌড়ঝঁাপ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার কমর্কতাের্দর সঙ্গে বৈঠকও করেছে ডিএসইর কমর্কতার্রা। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভনের্রর সঙ্গে বৈঠক করে ডিএসই চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাসেমের নেতেৃত্বে একটি টিম। সেই বৈঠকে বন্ড মাকের্ট চালু করার বিষয়ে আশ্বাস দেন গভনর্র। তবে মাকের্ট চালুর বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত বছর আন্তজাির্তক মুদ্রাতহবিল সংস্থা (আইএমএফ) বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলন করে বন্ড মাকের্ট শক্তিশালী করার তাগিদ দেয়। বাজেটে বন্ড লেনদেনের ওপর করছাড় দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে অথর্মন্ত্রী বন্ডে বিনিয়োগে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। এত সব উদ্যোগের পরও কোনো লেনদেন নেই।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রেজারি বন্ডের তালিকাভুক্তির গোড়াতেই ছিল গলদ। সাধারণত কোনো ইস্যু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর সেন্টার ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডে (সিডিবিএল) সব ধরনের তথ্য সংরক্ষিত থাকে। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্রোকারেজ হাউস। তবে ট্রেজারি বন্ডের তথ্য সিডিবিএলে সংরক্ষিত থাকলেও ফান্ড সেটেলমেন্টের কোনো দিকনিদের্শনা নেই। ফলে দীঘর্ সময় পার হলেও সেটেলমেন্টের বিষয়ে কারিগরি ত্রæটি থাকার কারণে এ বন্ডের কোনো লেনদেন হয়নি। পরবতীর্ সময়ে ২০১১ সালে এ বন্ডগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের এমআই মডিউলের অন্তভুর্ক্ত হয়। এখানেও কারিগরি ত্রæটির কারণে লেনদেন সম্ভাব হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত হলেও কি প্রক্রিয়ায় লেনদেন হবে সে বিষয়ে কোনো ধরনের দিকনিদের্শনা ছিল না। কোনো ধরনের সেটেলমেন্ট প্রসিডিউর ঠিক না করেই বন্ডগুলো তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর দীঘর্ ১৮ বছর পার হতে চললেও কারিগরি ত্রæটি দূর করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম মাজেদুর রহমান বলেন, ‘মূলত বন্ড তালিকাভুক্তির সময় থেকেই সমস্যা রয়ে গেছে। যার কারণে লেনদেন হয়নি। তবে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সেটেলমেন্টের জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছিলাম। তারা তাদের এমআই মডিউলে বাইরের কারো এক্সেস দিতে চায় না। আবার আমাদের সাভাের্র নতুন ফায়ারবল স্থাপন করতে হবে যেটা কয়েক কোটি টাকার খরচ। ফলে আমরা নতুন উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমআই মডিউলে আমরা প্রবেশ না করে বন্ড লেনদেনের ফাইল পাঠাব তাদের কাছে। সেখানে এটা বাংলাদেশ ব্যাংকই মডিউলে পোস্টিং দিবে। এ প্রস্তাবে বাংলাদেশ ব্যাংক রাজি হয়েছে। তবে সমস্যা আরও রয়েছে। এনবিআরে প্রজ্ঞাপনে ছাপা ভুলের কারণে সিকিউরিটিজের সাথে বন্ড কথাটি ছাপা হয়েছে। যার কারণে ডিএসইতে বন্ড লেনদেন করলে ক্রেতাকে দশমকি ৪০ শতাংশ মাসুল দিতে হবে। অথচ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করলে সেটা দিতে হয় না। আমরা এই বিষয়টি এনবিআরকে জানিয়েছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে